২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যশোরে ইউপি সদস্য খুন : বাড়িতে চলছে শোকের মাতম

-

সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত যশোরের অভয়নগর উপজেলার শুভরাঢ়া গ্রামের ইউপি সদস্য নূর আলী শেখের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। স্বজন ও স্থানীয়দের দাবি জনপ্রিয়তা ও জনসেবার কারণেই হত্যার শিকার হতে হয়েছে। তারা জানান আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজ দলীয় প্রতিপক্ষের লোকজন এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে।
এ দিকে পুলিশ এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে হেফাজতে নিয়েছে। তবে পুলিশের ধারণা ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হতে পারে।
শুভরাঢ়া ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার নূর আলী শেখ ও তার ছেলে রোববার রাত ৮টার দিকে স্থানীয় বাবুরহাট বাজার থেকে মোটরসাইকেলে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে বাজারের অদূরেই অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তাদের উদ্দেশ্যে গুলি চালায়। গুলি নূর আলীর মাথায় বিদ্ধ হলে তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান। তার ছেলে ইব্রাহিমের শরীরে তিনটি গুলি বিদ্ধ হওয়ায় তাকে গুরুতর অবস্থায় খুলনা আড়াই শ’ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নূর আলীর অকালমৃত্যুতে শোকের মাতম চলছে তার বাড়িতে। বারবার কান্না করে মূর্ছা যান স্ত্রী, মা, ভাই-বোনসহ অন্য স্বজনরা। তাদের আহাজারিতে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না প্রতিবেশী ও ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই বাড়িতে আসা নারী-পুরুষরা। স্বজন ও স্থানীয়দের দাবি আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে একই দলের প্রতিপক্ষের লোকজন মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে নূর আলী শেখকে হত্যা করিয়েছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত অভয়নগর থানার ওসি (তদন্ত) মিলন কুমার মণ্ডল মুঠোফোনে জানান, রোববার অভয়নগর থানা পুলিশের ৭ মার্চের আনন্দ উদযাপন অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যার পর মোটর সাইকেলযোগে নিজ বাড়ি ফিরছিলেন নূর আলী ও তার ছেলে। শুভরাঢ়া ইউনিয়নের বাববুরহাট নামক স্থানে পৌঁছালে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা খুব কাছ থেকে গুলি ছোড়ে। গুলিতে নূর আলীর মাথার খুলি উড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। নূর আলীর ছেলে মোটরসাইকেল চালক ইব্রাহিমের পায়ে গুলি লাগে। ইব্রাহিমকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।
নিহতের ভাই রুহুল আমিন শেখ বলেন, আমার ভাই জনসেবা করতে গিয়ে খুন হলো। সে কালকে সকালেও আমাকে বলেছে কিছু লোক ওকে খুন করতে চায়। আমি ভাইকে সাবধানে চলতে বলি। ওই ছিল আমার ভাইয়ের সাথে শেষ কথা। মুসা গাজী মেম্বার পদে দাঁড়াতে চায়। ওই আমার ভাইকে খুন করিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, নূর আলী এলাকায় জনপ্রিয় ইউপি সদস্য। আগামীতে ওকে হারানোর মতো কোনো প্রার্থী নেই। কারণ এই এলাকা সন্ত্রাসী এলাকা ছিল। আমার ভাই নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার সবাইকে নিয়ে রাত্রিকালীন ডিউটিসহ নানা উদ্যোগ নিয়ে পরিস্থিতি ভালো করে। যে ডাকতো তার পাশেই দাঁড়াতো। গরিবদের নিজের পকেটের টাকা দিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করত।
নিহতের স্ত্রী বলেন দলাদলি, ভোটে দাঁড়ানো নিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।
তিন নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিন বাবু বলেন, নূর আলী শেখ অত্যন্ত জনপ্রিয় মেম্বার ছিলেন। তবে ঘটনার সময় নূর আলী শেখের ছেলে আহত হয়েছেন। তিনি সুস্থ হলেই বোঝা যাবে কারা এর সাথে জড়িত।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, রাতভর পুলিশ পুরো এলাকায় অভিযান চালিয়েছে। এ ঘটনায় তিনজনকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে। আশা করছি তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।
তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক তদন্তের ওপর ভিত্তি করে ধারণা করা হচ্ছে পূর্বশত্রুতার জের ধরে হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে। তবে সেটা রাজনৈতিক নয়, ব্যক্তিগত শত্রুতা।
প্রসঙ্গত, দুই পুত্রসন্তানের জনক নূর আলী শেখ এলাকায় একজন সফল কাঠব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। তিনি ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন।

 


আরো সংবাদ



premium cement