২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নভেম্বরে চূড়ান্ত অষ্টম পাঁচশালা পরিকল্পনা

-

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আগামী মাসের মধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (এনইসি) উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনার দলিল প্রণয়নে তত্ত্বাবধানকারী সংস্থা পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। বিডিনিউজ।
এবারের পাঁচশালা পরিকল্পনায় সার্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রবর্তন, মহামারীর অভিঘাত থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে রফতানি শিল্প ও অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থানের কৌশল নিয়ে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য বিমোচনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিইডির প্রধান মো: মফিদুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীতে টানা ছুটি থাকায় অষ্টম পরিকল্পনার মেয়াদ শুরু হলেও শেষ পর্যায়ের কাজগুলো শেষ করা সম্ভব হয়নি। তাই পরিকল্পনার দলিলের চূড়ান্ত অনুমোদনও নেয়া যায়নি। আগামী পাঁচ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনার এই দলিলের খসড়া এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য এনইসি সভায় উপস্থাপন করে চূড়ান্ত অনুমোদন নেয়া হবে।
তিনি বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই দলিল বাস্তবায়নের মাধ্যমে একইসাথে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) ও ২০৪১ সাল পর্যন্ত প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ায় একধাপ এগিয়ে নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
জিইডির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, মহামারী পরবর্তী ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে খসড়া দলিলে। এতে মহামারী থেকে নাটকীয়ভাবে উত্তরণের জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সার্বজনীন স্বাস্থ্যবীমা প্রবর্তনের কথাও বলা হয়েছে। দেশে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব থাকায় মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যকর্মী গড়ে তোলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
দারিদ্র্য দূরীকরণ ও বৈষম্য কমিয়ে আনতে মান সম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা, শিশুদের জন্য পুষ্টির জোগান নিশ্চিত করা, দরিদ্র মানুষের হাতে সরকারের পক্ষ থেকে নগদ টাকা পৌঁছানো, গ্রামাঞ্চলের যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিদ্যুতায়ন এবং আধুনিক কর ব্যবস্থা প্রবর্তনের নির্দেশনা রয়েছে নতুন পরিকল্পনায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে দেশে সাধারণ মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি তুলে ধরে খসড়া দলিলে উৎপাদন ও নির্মাণ খাতের মাধ্যমে ব্যাপক হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টির কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৫১ শতাংশে উন্নীত করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জীবনযাপন সহজ করতে গড় মূল্যস্ফীতি ৪ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে।
এই পথ পরিক্রমায় করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ৫ দশমিক ২০ শতাংশে নেমে যাওয়া জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে পাঁচ বছরে যথাক্রমে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ, ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ, ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ ও ৮ দশমিক ৫১ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে।
এ ছাড়া ২০২৫ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ১০৬ ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ।
খসড়া দলিলে বলা হয়, ২০২০ সালে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৯ দশমিক ০৮ শতাংশ হারে বেড়েছে। এরপর ২০২১ সাল থেকে যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ, ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ, ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং দলিল বাস্তবায়নের শেষ বছর ২০২৫ সালে ৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ হারে মাথাপিছু আয় বাড়ানো সম্ভব হলে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব হবে।
এই পরিকল্পনায় দারিদ্র্য দূরীকরণ ত্বরান্বিত করতে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধিকে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে দলিলে। অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির জন্য শ্রমঘন রফতানি শিল্প এবং কৃষি পণ্যের বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও ছোট উদ্যোক্তাদের গতিশীল করা, আধুনিক সেবা খাতকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা এবং বিদেশেও ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
খসড়া দলিলে বলা হয়েছে, আশানুরূপ কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য দেশের মোট বিনিয়োগ জিডিপির ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। এর মধ্যে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ২৮ দশমিক ২ শতাংশ, সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ ৩ শতাংশে ও সরকারি বিনিয়োগ ৯ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।
বর্তমানে দেশে মোট বিনিয়োগ জিডিপির ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ। এর মধ্যে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ, সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ মাত্র শূন্য দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং সরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ৮ শতাংশ।
জাতীয় সঞ্চয় জিডিপির ২৯ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ৩৪ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি জিডিপির ৭৫ শতাংশ ভোগব্যয় ৭০ দশমিক ৩ শতাংশে নামানোর লক্ষ্যও রয়েছে।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের দারিদ্র্যের হার ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যের হার ৭ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যও রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশের দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশ; আর চরম দারিদ্র্যের হার ১০ দশমিক ৫ শতাংশ।
২০৪১ সালের মধ্যে দেশের দারিদ্র্যের হার শূন্যে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়ে সরকার ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত একটি প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করছে।


আরো সংবাদ



premium cement