২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পদ্মা সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল নেবে কোরীয় কোম্পানি

-

পদ্মা বহুমুখী সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের দায়িত্ব পেয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানি কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন (কেইসি)। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এ ছাড়া আড়িয়াল খাঁ নদী ড্রেজিংয়ের একটি প্রস্তাবও শর্ত সাপেক্ষে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
গতকাল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ দুই প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিবসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যোগ দেন। বৈঠক শেষে অনুমোদিত প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী।
সভা শেষে অর্থমন্ত্রী কামাল জানান, পদ্মা বহুমুখী সেতু চালু হওয়ার পর এর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সার্ভিস প্রোভাইডার নিয়োগ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন (কেইসি) সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশেই সড়ক ও ব্রিজ ব্যবহারসহ পার্কিংয়ের জন্য টোল দিতে হয়। টোলের অর্থে রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। কিন্তু সে দিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। আমাদের দেশে কিছু কিছু জায়গায় টোল আদায়ের ব্যবস্থা থাকলেও তা পুরনো পদ্ধতি। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। আমরা চাচ্ছি, ভোগান্তি কমিয়ে রাজস্ব বাড়াতে। এ জন্য পদ্মা সেতুর টোল আদায়ে দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানিকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। তারা অত্যাধুনিক ব্যবস্থায় টোল আদায় করবে।’
জানা গেছে, পদ্মা সেতু প্রকল্প সমাপ্তির পর সেতুটির পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়া এক্সপ্রেস করপোরেশন (কেইসি)কে দায়িত্ব দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার ভূমি, অবকাঠামো এবং পরিবহন মন্ত্রণালয় ঢাকাস্থ কোরিয়ান দূতাবাসের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) একটি চিঠি পাঠায়। ওই চিঠি অনুযায়ী পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইআরডি সেতু বিভাগকে অনুরোধ জানায়। সেতু বিভাগের অনুরোধে কেইসি তাদের সেতু রক্ষণাবেক্ষণ কাজের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার তথ্যাদি সেতু বিভাগে দাখিল করে।
পদ্মা বহুমুখী সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায় কাজের জন্য কেইসির সঙ্গে গত ২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আর্থিক সংশ্লেষ ও পরিপালনের বাধ্যবাধকতাবিহীন শর্তে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়। পরবর্তী কার্যক্রম হিসেবে কেইসি কর্তৃক প্রথমে কারিগরি প্রস্তাব এবং উক্ত কারিগরি প্রস্তাব যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদনের পর পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ (ও অ্যান্ডএম) ম্যানুয়ালের ভিত্তিতে কেইসি আর্থিক প্রস্তাব দাখিল করবে। ইতোমধ্যে কেইসি তাদের কারিগরি প্রস্তাব দাখিল করেছে। সেতু বিভাগের অধীন জি-টু-জি পদ্ধতিতে মূল্য নিরূপণের জন্য সরাসরি প্রস্তাবকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ক্রয়তব্য বস্তু বা সেবার মূল্য নিরূপণ সংক্রান্ত কমিটির ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর তারিখের সভায় কেইসির দাখিলকৃত কারিগরি প্রস্তাব এ সংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটি কর্তৃক মূল্যায়ন করে মূল কমিটির কাছে রিপোর্ট উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ ছাড়া অন্যান্য নিয়ম অনুসরণ করে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা,২০০৮ এর ৭৬(২) বিধিতে উল্লিখিত মূল্যসীমার ঊর্ধ্বে ক্রয়ের প্রস্তাব অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের নিয়ম থাকায় তা এই কমিটির বৈঠক উপস্থাপন করা হয়েছে।
কেইসির দাখিল করা কারিগরি প্রস্তাব থেকে দেখা যায়, ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কেইসি দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বৃহৎ সরকারি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে কোরিয়ার ৪১১২ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে। কেইসি এক্সপ্রেসওয়ে ছাড়াও ৪৫০৮টি সেতু রক্ষণাবেক্ষণ করছে। যার মোট দৈর্ঘ্য ১৩৩২ কিলোমিটার। প্রতিষ্ঠানটি অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ইন্টেলিজেন্স ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম (আইসিএস) অনুসরণ করছে এবং টোল আদায়ে অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেম (ইটিসিএস) ব্যবহার করছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের জুন নাগাদ পদ্মা বহুমুখী সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ লক্ষ্যে অতীব জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই অবকাঠামোর জন্য জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স সার্ভিস প্রোভাডাইর বা অপারেটর চূড়ান্ত করার প্রয়োজনেই কেইসির মাধ্যমে পদ্মা সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়।
এ দিকে অর্থমন্ত্রী জানান, সভায় ‘মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ নদীর তীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিং’ প্রকল্পের (নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ ৬.৩ কিলোমিটার এবং খনন বা নদী ড্রেজিং ১৫.৫ কিলোমিটার) কাজগুলো রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে পিপিএ-২০০৬ এর ধারা ৬৮(১) ও পিপিআর-২০০৮ এর বিধি৭৮ (১) অনুসারে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণের নীতিগত অনুমোদন চেয়েছিল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। কিন্তু একনেকে অনুমোদিত ব্যয়ের চেয়ে প্রস্তাবিত ব্যয় বেশি হওয়ায় তা সরাসরি অনুমোদন না দিয়ে দুটি শর্ত পূরণ সাপেক্ষে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রথম শর্ত হচ্ছেÑ একনেকে অনুমোদিত ব্যয়ের বেশি হতে পারবে না। রিভিশনের জন্য আবার একনেকে পাঠানো যাবে না। দ্বিতীয় শর্ত হলোÑ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিতে হবে। এই প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৯ কোটি ৯০ লাখ ২১ হাজার টাকা।

 


আরো সংবাদ



premium cement