২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
করোনার কারণে মুনাফা কমবে ৮০০ কোটি টাকা

অর্ধেকেরও বেশি কমানো হলো সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের টার্গেট

-

খেলাপি ঋণ আদায় কোনোভাবেই করতে পারছে না সোনালী ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের সর্ববৃহৎ এই ব্যাংকের গেল জুন মাসে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ১১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এই যখন অবস্থা তখন চলমান কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ব্যাংকটির অবস্থা অনেকটা নাজুক হয়ে পড়েছে। সোনালী ব্যাংক নিজেই বলেছে, তারা বর্তমানে ১০ হাজার কোটি টাকার মূলধন ঘাটতির সম্মুখীন। আর চলতি অর্থবছরে ব্যাংকটির মুনাফা কমবে কমপক্ষে ৮০০ কোটি টাকা। ব্যাংকটির লোকসানি শাখার সংখ্যা এখন গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১১০-এ। এই পরিস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পক্ষ থেকে চলতি অর্থবছরে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্ধেকেরও বেশি কমিয়ে দেয়া হয়েছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে সোনালীকে খেলাপি ঋণ আদায়ের টার্গেট দেয়া হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাথে সম্পাদিত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) আওতায় শ্রেণীকৃত ঋণ থেকে ৪৫০ কোটি টাকা এবং অবলোপনকৃত ঋণ থেকে ৫০ কোটি টাকা আদায় করতে হবে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ দুই খাতে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল যথাক্রমে ১ হাজার কোটি টাকা ও ১০০ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। চুক্তি অনুযায়ী সোনালী ব্যাংককে খেলাপি ঋণের স্থিতি কমিয়ে আনতে হবে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সমাপ্ত অর্থবছরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা (২৪ শতাংশ)। চলতি অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা (১৮ শতাংশ)।
বলা হয়েছে, ব্যাংকটিকে পরিচালন মুনাফা অর্জন করতে হবে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং লোকসানি শাখা ১১০টি থেকে কমিয়ে আনতে হবে ৯০টিতে। এ ছাড়া ৪০টি রিট মামলা, ৩৫০টি অর্থঋণ মামলা এবং ১ হাজার বিভাগীয় ও অন্যান্য মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে।
লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে ব্যাংকটি কৃষি খাতে ৫০০ কোটি টাকা, এসএমই খাতে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ও সরকারের প্রণোদনা তহবিলের আওতায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করবে।
সোনালীর ভাষ্য মতে, ব্যাংকটির প্রধান সমস্যা হচ্ছেÑ শ্রেণীকৃত ঋণের আধিক্য ও শ্রেণীকৃত ঋণ আদায় করতে না-পারা। ব্যাসেল-৩ পরিপালনে বর্তমানে সোনালীর মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা এবং চলমান করোনা পরিস্থিতিতে ব্যাংকটির সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার সরকারি গ্যারান্টি অথবা পারপেচুয়াল বন্ড ইস্যু না করলে ব্যাংকটির অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাবে বলে সম্প্রতি সোনালী ব্যাংকের সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ৪ পাতার এক পত্র দিয়ে এসব কথা জানিয়েছেন। এই পত্রটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে গত মাসে।
চিঠিতে ব্যাংকের নানা দিক তুলে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে জানুয়ারি থেকে ‘ব্যাসেল-৩’ বাস্তবায়নের কাজ পুরোপুরি শুরু হয়েছে। কিন্তু ব্যাসেল-৩ এর কঠোর মূলধন হতে ‘ডিফারড ট্যাক্স অ্যাসেটস (ডিটিএ), রিভ্যালুয়েশন রিজার্ভ, প্রভিশন ঘাটতি ইত্যাদি কর্তন, ব্যাংকের আশানুরূপ নিট মুনাফা অর্জিত না হওয়া সর্Ÿোপরি ২০০৭ সালে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরকালীন পুঞ্জীভূত ক্ষতি (লোকসান) ৬ হাজার ৫৭৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা ‘গুডউইল’ রূপান্তর করে বিগত ১০ বছরে মুনাফার বিপরীতে সমন্বয় প্রভৃতি কারণে এ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়।
চিঠিতে বলা হয়, এরপরও ব্যাংকের ব্যবসায়িক অবস্থার উন্নয়ন, লোকসানি শাখার সংখ্যা কমিয়ে আনা, শ্রেণিকৃত ঋণ হতে আর্থিক আদায় বাড়ানোর মাধ্যমে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনা, মুনাফা বৃদ্ধির মাধ্যমে মূলধন ভিত শক্তিশালী করার মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক সব বাণিজ্যিক ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মধ্যে ২০১৮ সর্Ÿোচ্চ দুই হাজার ২৬ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়। নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী ২০১৯ সালেও প্রায় অনুরূপ মুনাফা প্রত্যাশা করছে। পরিচালন মুনাফা বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখার পরও ‘ব্যাসেল-৩’ কঠোর নিয়মের কারণে বিভিন্ন সমন্বয় ও শ্রেণীকৃত ঋণের আধিক্য এবং প্রভিশন ঘাটতিজনিত কারণে নিট মুনাফা অর্জনের মাধ্যমে ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
কোভিড-১৯ এর প্রভাব সোনালী ব্যাংকের ওপর সর্বাধিক পড়বে উল্লেখ করে ব্যাংকটির এমডি জানিয়েছেন, এর ফলে প্রাথমিক হিসাবে চলতি ২০২০ সালে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনগত মুনাফা গত বছরের তুলনায় ৮০০ কোটি টাকা কম হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির ওপর আরো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছে, বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণেই চলতি অর্থবছরে সোনালী লক্ষ্যমাত্রা শিথিল করে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে খেলাপি ঋণ আদায়ের টার্গেট অর্ধেকেরও বেশি কমিয়ে দেয়া হয়েছে। আগামী তিন মাস পর এই চুক্তির পর্যালোচনা করে দেখা হবে সোনালী ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে কি না।


আরো সংবাদ



premium cement