২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সুদ-আয় স্থগিতের লোকসান সমন্বয়ে নীতিমালা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ধাপে ধাপে সুদ আদায় করতে হবে ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে
-

দুই মাসের সুদ আয় স্থগিত করায় ব্যাংকগুলোর লোকসান সমন্বয় করতে নীতিমালা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত এপ্রিল ও মে মাসের হিসাব ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। সুদ আয় স্থগিত করায় প্রতিটি ব্যাংকের আয়ই ঋণাত্মক হয়ে গেছে। এমনি পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর লোকসান সমন্বয় করতে দেয়া নীতিমালায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোর সুদ-আয় একসাথে আয় খাতে নিতে পারবে মর্মে সিদ্ধান্ত দিতে যাচ্ছে। তবে, ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে এক সাথে আদায় না করে ধাপে ধাপে এই সুদ আদায় করার সুযোগ দেয়া হবে। একইসাথে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনার দুই হাজার কোটি টাকাও বণ্টনের দিকনির্দেশনা দেয়া হবে ওই নীতিমালায়। নীতিমালা চূড়ান্ত করে আগামী সপ্তাহেই তা সার্কুলার আকারে জারি করা হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল এক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
ব্যাংকারদের শীর্ষ সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এর সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গত এপ্রিল ও মে মাসের ঋণের সুদ ব্লকড করতে বলা হয়েছিল। এ কারণে আমরা ঋণের কোনো সুদই আয় খাতে নিতে পারছি না। কিন্তু আমানতকারীদের মুনাফা পরিশোধ করতে হচ্ছে। পরিশোধ করতে হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও নানা ইউটিলিটি বিল। এতে প্রতিটি ব্যাংকই লোকসান গুনছে। এ লোকসান আমরা কিভাবে সমন্বয় করব তার কোনো দিকনির্দেশনা এখনো পাইনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, করোনার কারণে গত মার্চ থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাংকগুলোর আয়ের বড় একটি মাধ্যম ছিল আমদানি-রফতানির বিপরীতে কমিশন আয়। কিন্তু চলমান পরিস্থিতিতে আমদানি-রফতানিও স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোর কমিশন আয়ও শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। একমাত্র আয় ছিল সুদ-আয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে দেশের সব ব্যবসায়ীই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ কমাতে গত এপ্রিল ও মে মাসের ব্যাংকঋণের সুদহার গ্রাহকের ওপর আরোপ না করে তা আলাদা হিসেবে সংরক্ষণ করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ফের নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত গ্রাহকের কাছ থেকে তা আদায় করা যাবে না। ব্যাংকের আয়ের সব দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, সঙ্গতকারণেই ব্যাংকগুলো গত দুই মাসে বড় ধরনের লোকসান গুনছে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও অনুধাবন করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা অপেক্ষায় ছিলাম সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা আসে কি না। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের ঋণের সুদহারের ওপর ২ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। এখন আমরা ব্যাংকগুলোর লোকসান সমন্বয় করার নীতিমালা দেবো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী মহলের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোর লোকসান সমন্বয় করতে নীতিমালা চূড়ান্ত করতে বলা হয়েছে। ওই নির্দেশনার আলোকে নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলোর জন্য তিন ধরনের নির্দেশনা থাকবে। প্রথমত, ব্যাংকগুলোর এপ্রিল ও মে মাসের আলাদা হিসাবে রাখা সুদ-আয় একসাথে আয় খাতে নিতে পারবে। কিন্তু সেই আয় বাস্তবে নিতে ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে একবারে আদায় করতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, দুই মাসের সুদ-আয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধাপে ধাপে আদায় করার জন্য একটি নির্দেশনা দেয়া হবে। এতে ব্যবসায়ীরাও কিছুটা স্বস্তিতে থাকতে পারবেন। তৃতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছেন। ওই প্রণোদনা ব্যাংকগুলোর মধ্যে কিভাবে বণ্টন করা হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট একটি দিকনির্দেশনা দেয়া হবে। সবমিলেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলমান পরিস্থিতিতে সহনীয় একটি নীতিমালা জারি করবে। নীতিমালা চূড়ান্ত হলে আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ তা সার্কুলার আকারে জারি করা হতে পারে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, দেশের ব্যাংকিং খাতের প্রায় ১০ লাখ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। ক্রেডিট কার্ড ভোক্তা ঋণ ও শিল্প ঋণসহ গড়ে প্রতি মাসে ১০ শতাংশ মুনাফা হিসেবে বছরে আয় হয় এক লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের কারণে গড়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকগুলোর মুনাফা স্থগিত হিসেবে রাখা হয়। বাকি ৯০ হাজার কোটি টাকার ১২ মাসের হিসাবে প্রতি মাসে শুধু ঋণের মুনাফা বাবদ আয় হয় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। সেই হিসাবে দুই মাসে ১৫ হাজার কোটি টাকা মুনাফা স্থগিত করা হয়েছে। আবার এ মুনাফার বড় একটি অংশই আমানতকারীদের পরিশোধ করতে হয়। প্রায় ১১ লাখ কোটি টাকার আমানতের গড়ে ৬ শতাংশ মুনাফা আমানতকারীদের দিতে হলে বছরে মুনাফা দিতে হয় ৬৬ হাজার কোটি টাকা। আর ১২ মাসের হিসাবে প্রতি মাসে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসাবে দুই মাসে ঋণের মুনাফা থেকে আমানতকারীদের ফেরত দিতে হয়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা।


আরো সংবাদ



premium cement