২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনা পরিস্থিতিতে হালদা নদীতে নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ নিয়ে অনিশ্চয়তা

মা রুই কাতলার আনাগোনা বাড়ছে
-

দেশের রুই জাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহের অন্যতম প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীতে মা মাছের আনাগোনা শুরু হয়েছে। বিপন্ন হালদায় রুই কাতলার ডিম ছাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছেন হালদা নদী নিয়ে চার দশকের অধিক সময় ধরে হালদা নদী নিয়ে গবেষণারত ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মৎস্য বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলী আজাদী। একই সাথে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে লোকসমাগম এড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তার কথাও জানান এই গবেষক। পাশাপাশি স্থানীয় জেলে ডিম সংগ্রহকারীদের মাঝেও মা মাছেরা অনুকূল পরিবেশ পেয়ে ডিম ছাড়লে তা সংগ্রহ করতে পারা নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ কাজ করছে করোনা পরিস্থিতির কারণে।
হালদার ডিম সংগ্রহকারী রামদাশহাটের ইলিয়াস ও সত্তারঘাট বড়–য়াপাড়ার বিতান বড়–য়া জানিয়েছেন তারা ডিম সংগ্রহের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। কিন্তু বর্তমান পরিস্তিতির কারণে ডিম সংগ্রহে নিষেধাজ্ঞা এলে তাদের মাথায় হাত পড়বে। নিষিক্ত ডিম সংগ্রহের অনিশ্চয়তায় তাদের মতো সব ডিম সংগ্রহকারীই উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।
ড. আজাদী বলেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের ফলে উজানের পানি এসে হালদা নদীতে ঢল নামে। নদীতে পানির তীব্র স্রোত সৃষ্টি হয়। এর ফলে পানির তাপমাত্রা ২৭-২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে ১৪-১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকলে ডিম তা-দেয়ার উপযুক্ত হয়। ওই সময় প্রবল স্রোতের কারণে পানি ঘূর্ণনের ফলে ডিম পরিপক্ব হয়ে ফুটে এবং পোনার জন্যে অক্সিজেন প্রাপ্তি বাড়ে। তিনি বলেন এ রকম প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি হলে অর্থাৎ দু-তিন দিন ধরে লাগাতার বৃষ্টি হলে হালদা নদীতে প্রবল স্রোতসহ অন্যান্য ভৌত-রাসায়নিক ফ্যাক্টরগুলো সৃষ্টি হলে রুই-কাতলা নিম্নে উল্লিখিত তারিখগুলোতে ডিম দেয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছ। তার মতে, চলতি এপ্রিল মাসের ৬-১১ তারিখের ভেতর একবার এবং ২১-২৬ এপ্রিলের ভেতর আর একবার মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে। তা নাহলে ৬-১১ মে তারিখের ভেতর একবার, তা নাহলে ২১-২৬ মে তারিখের ভেতর আর একবার ডিম দেয়ার সম্ভাবনা আছে। তা-ও না হলে জুন ’২০ এর ৫-১০ তারিখের ভেতর শেষবারের মতো ডিম দেয়ার সম্ভাবনা আছে। ওই সময়ানুযায়ী করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকে ডিম আহরণকারীদের কুয়া নির্মাণসহ, নৌকা এবং অন্যান্য ডিম ধরার সরাঞ্জামাদি নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে বলে তিনি জানান।
ড. আজাদী বলেন, মা মাছ দুই ধরনের ডিম ছাড়েÑ প্রথমত, নমুনা ডিম এবং পরে পর্যাপ্ত ডিম। আবহাওয়া অনুকূলের উপর নির্ভর করে প্রথমে অল্প পরিমাণ ডিম ছাড়ে, যাকে স্থানীয় ভাষায় নমুনা ডিম বলে। পূর্ণিমা আমাবশ্যার তিথিতে পর্যাপ্ত বৃষ্টির ফলে নদীতে ঢল নেমে স্রোত বাড়লে, পানির তাপমাত্রা কমলে (২৭-২৯ ০ সে.) প্রচুর পরিমাণ (লার্জ স্কেল) ডিম ছাড়ে। প্রাকৃতিক অনুকূল পরিবেশ না হলে মা মাছ ডিম ছাড়ে না।
প্রফেসর আজাদীর নেতৃত্বে হালদা ও হালদা সংযুক্ত চারটি নদীর (কর্ণফুলী, সাংগু, চাঁদখালী এবং শিকলবাহা চ্যানেল) পানির গুণাগুণ, হাইড্রোলজি, মৎস্য এবং মৎস্যসম্পদের উপর তিন বছরব্যাপী (২০১০-২০১৩) বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে এক গবেষণা কর্ম (স্টাডিজ অন দ্য লিমনোলজি, হাইড্রলজি, ফিশ অ্যান্ড ফিশারিজ অব দ্য রিভার হালদা অ্যান্ড ইটস ফোর লিংকড রিভারস (সাংগু, চাঁদখালী, শিকলবাহা চ্যানেল অ্যান্ড কর্ণফুলী) পরিচালিত হয় কয়েক বছর আগে।
গবেষণার আলোকে ড. আজাদী বলেন, সব রুই-কাতলা হালদার নিজস্ব আবাসিক মাছ নয়। হালদা একটি টাইডাল বা জোয়ার ভাটার নদী। হালদার সাথে সংযুক্ত আরো চারটি জোয়ার ভাটার নদী (সাংগু, চাঁদখালী, শিকলবাহা চ্যানেল অ্যান্ড কর্ণফুলী) রয়েছে। প্রাক-প্রজনন মওসুমে এসব নদী থেকে মাইগ্রেট করে রুই-কাতলা হালদায় ডিম ছাড়তে আসে এবং ডিম দেয়ার পর নিজ নিজ নদীতে ফিরে যায়। সরকারি গেজেট সব কয়টি নদীতে বাস্তবায়ন না হওয়ায় ওইসব নদীতে সারা বছর এবং মাইগ্রেট করে আসা যাওয়ার পথে বছরের পর বছর নির্বিচারে মাছ ধরার ফলে মা-মাছ তথা ব্রুড ফিশ এখন অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। তিনি বলেন, অতি আহরণের ফলে কমে যাওয়া ব্রুড (মা-মাছ) মাছ এর সংখ্যা বাড়াতে হালদাসহ হালদা সংযোগ চারটি নদীতেও হালদার পোনা থেকে তৈরি সাব-এডাল্ট কার্প মাছ প্রতি বছর স্টক করা একান্ত জরুরি।
করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমান পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে লোক সমাগমসহ দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন পোনা কিনতে আসতে পারবে না, একই সাথে ডিম ধরা ও ডিম ফুটানোর ক্ষেত্রেও যেহেতু লোক সমাগম চলবে না, তাই এ বছর রুই-কাতলার ডিম ধরা ও পোনা ফোটানো এবং হালদার পোনা উৎপাদনের কি হবে তা সময়ই বলে দেবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement