বিশিষ্ট আইনজীবীদের দাবি সুচিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন
- ষ হাবিবুর রহমান ও মো: শহীদুল্লাহ্ মিঞা
- ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০
কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তার শারীরিক অবস্থা দিন দিন অবনতি হচ্ছে। দেশে বা বিদেশে অতিদ্রুত তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। সুচিকিৎসার জন্য সরকার আইনগতভাবেই তাকে সাময়িকভাবে মুক্তি দিতে পারেন বলে মনে করেন বিশিষ্ট আইনজীবীরা। তাদের মতে, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। বন্দী অবস্থায় তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন তার দায় সরকারের ওপর বর্তাবে। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানান তারা।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে জেলে নেয়া হয়েছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ এবং বয়স্ক মহিলা। তার প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করা হচ্ছে। শুধু উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি প্যারোলে মুক্তি পেতে পারেন। প্যারোলের কোনো শর্ত নেই। এখন সরকার কী ধরনের শর্ত চাচ্ছে এটা তো তাদের বলতে হবে। আমরা চাচ্ছি, সুচিকিৎসার জন্য প্যারোলে তাকে মুক্তি দেয়া হোক। চিকিৎসার সুযোগ দিতে সরকার চাইলে তাকে প্যারোলে মুক্তি দিতে পারে। এখানে ক্ষমার কোনো প্রশ্ন আসে না।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, দেশে যখন গণতন্ত্র থাকে না, তার প্রভাব সর্বস্তরে পড়ে। আমাদের দেশে তার ব্যতিক্রম নয় বলে মনে হচ্ছে। সাত বছরের সাজা মামলায় একজন জুনিয়র গেলেও আদালত জামিন দেন। সেখানে আপিল বিভাগও তার জামিন দেননি। আমরা আবার আদালতে জামিন আবেদন নিয়ে যাব। দেশে বা বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা জামিন দেয়ার জন্য দাবি জানাব।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, যে মামলা দায়ের করা হয়েছে তার সবই রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক। সরকারের প্রভাবে তাকে কারান্তরীন রাখা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য একটি খারাপ নজির। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে যেভাবে বিদেশে যেতে বাধ্য করা হয়েছে তারপর কোনোভাবেই বলা যাবে না, বিচার বিভাগ স্বাধীন এবং নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারছে। সরকারের প্রভাবই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রধান অন্তরায়। ইতিহাসে এই খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী দায়ী থাকবেন।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সাবেক পি পি আব্দুল্লাহ্ মাহমুদ হাসান বলেন, খালেদা জিয়া সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, একটা রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন। শারীরিকভাবে অসুস্থতার কারণে জেল কর্তৃপক্ষ বারবার কারাগার থেকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। সেসব দিক বিবেচনা করে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট জামিন বিবেচনা করতে পারেন। জামিনে মুক্তি পেলে তার পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নাই। মানসিক চাপ থেকে মুক্ত অবস্থায় ও সুচিকিৎসার জন্য জামিন একান্ত আবশ্যক বলে মনেকরি।
বিশিষ্ট আইনজীবী মোহম্মদ পি কে আব্দুর রব বলেন, আইন বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রসিকিউশন এবং বিচারিক সিদ্ধান্ত বিশ্লেষণ করে প্রাপ্ত ফলাফলের সাথে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা এবং সাজা মিলানো হলে যা পাওয়া যাচ্ছে তা হলো বিগত ওয়ান-ইলেভেনের কর্তারা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুদুকের মাধ্যমে এই মামলা দু’টি করান। দু’টি মামলাই দায়ের হয় দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায়। দণ্ডবিধি আইনের ৪০৯ ধারাটি বিশ্লেষণ করলে খালেদা জিয়া কোনোভাবেই ওই ধারার আওতায় পড়েন না। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া প্যারোল নিলেই সব কিছু বৈধ হয়ে যায় না।
খালেদা জিয়ার বেশির ভাগ মামলার আইনজীবী প্যানেলের সদস্য অ্যাডভোকেট আখতারুজ্জামান বলেন, যেকোনো বন্দীকে সরকারের নীতিমালার আলোকে প্যারোলে মুক্তি দেয়া যেতে পারে। যেহেতু খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ এবং তার উন্নততর চিকিৎসা প্রয়োজন, এজন্য তিনি অবশ্যই প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার হকদার। তিনি আরো বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন নিয়ে আবার আদালতে যাব। তার অসুস্থতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আদালত থেকেও তিনি জামিন পাবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।
পরিবেশ আদালতের সাবেক স্পেশাল পিপি মো: খলিলুর রহমান বলেন, তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তার সঠিক চিকিৎসা সম্পর্কে সাধারণ জনমনে বিভ্রান্তি আছে। তার সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে সন্দিহান। এইসব কারণ ছাড়াও মানবিক কারণে তিনি জামিনে মুক্তি পেতে পারেন।
আইনজীবী হাতেমুল আলম (হাতেম) বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কোনো অপরাধ করে দণ্ডিত হননি। সরকারের নির্দেশে বেগম জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্য বেআইনিভাবে দণ্ডিত করা হয়েছে। অপরাধের ধরন যাই হোক না কেন বেগম জিয়া জামিনে মুক্তি পাওয়ার একান্ত হকদার। কারণ তিনি একজন মহিলা, অসুস্থ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। দীর্ঘ কারাবাসের কারণে বেগম জিয়া প্যারোলে নয়, আইনগত জামিন পেতে পারেন।
আইনজীবী আবুল কালাম খান বলেন, খালেদা জিয়াকে কেবল হয়রানি করার জন্য দু’টি মামলায় শাস্তি দেয়া হয়েছে। তাকে জেলে আটক রাখা হলে ক্ষমতাসীনরা অবাধে ও বাধাহীনভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে পারবে। তাকে জেলে আটক রেখে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা যায় তত দিন জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের শক্তিগুলো ঐক্যগড়ে তুলতে পারবে না এবং শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সফলকাম হবে না। আইনজীবী এ কে এম ফজলুল হক বলেন, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় শক্তিশালী বিরোধী দলের প্রয়োজন। শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকলে গণতন্ত্র অচল হয়ে পড়ে। বর্তমান চলমান অবস্থায় তাকে কারাগারে আটক রেখে গণতন্ত্র ও সুশাসন কিভাবে সম্ভব? সে কারণে তিনি জামিনে মুক্তি পেতে পারেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা