গুলশান, বনানী, বারিধারা, বসুন্ধরা, মহাখালী, ইস্কাটন, ধানমন্ডি অভিজাত এলাকাসহ রাজধানী ঢাকার ৮০ শতাংশ এলাকার জন্য কোনো পয়ঃশোধনাগার নেই। ২০ শতাংশ এলাকার পানি এলাকার পয়ঃবর্জ্য নিষ্কাশন কোনো রকম শোধন ছাড়াই বেগুনবাড়ী রামপুরার নড়াই খালের মাধ্যমে বালু নদী হয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে নিষ্কাশিত হচ্ছে। দাশেরকান্দিতে একটি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের পর এলাকার উত্তরাতে নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হবে। আর ১৪ শ’ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রকল্পে প্রতি একর জমির জন্য ক্ষতিপূরণসহ দর পড়ছে ২৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার কদমতলী থানাধীন পাগলায় অবস্থিত পয়ঃশোধনাগারটির মাধ্যমে ঢাকা শহরের মাত্র ২০ শতাংশ জনগণ পয়ঃসুবিধা পাচ্ছে। বাকি ঢাকা মহানগরীর উত্তর-পূর্ব অংশের গুলশান, বনানী, বারিধারা, বসুন্ধরা, মহাখালী, বারিধারা ডিওএইচএস, তেজগাঁও, মগবাজার, ইস্কাটন, নিকেতন, ধানমন্ডি (আংশিক), কলাবাগান, আফতাবনগর, বাড্ডা, হাতিরঝিলসহ ৮০ শতাংশ এলাকার জন্য কোনো পয়ঃশোধনাগার নেই। বতর্মানে প্রকল্প এলাকার পয়ঃবর্জ্য নিষ্কাশন কোনো রকম শোধন ছাড়াই বেগুনবাড়ী রামপুরার নড়াই খালের মাধ্যমে বালু নদী হয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে নিষ্কাশিত হচ্ছে। বালু নদী ও শীতলক্ষ্যা নদীর এই মিলনস্থল থেকে মাত্র ৫ শ’ মিটার ভাটিতেই সারুলিয়ায় সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারের ইনটেক পয়েন্ট অবস্থিত। ফলে সায়েদাবাদের পানি শোধনাগারের জন্য শীতলক্ষ্যা নদী থেকে র’ওয়াটার সংগ্রহ ক্রমেই হুমকির মুখে পড়েছে। বর্তমানে সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার ফেজ-১ ও ফেজ-২ থেকে প্রতিদিন ৪৫ কোটি লিটার পানি ঢাকা শহরে সরবরাহ করা হচ্ছে।
ঢাকা ওয়াসার মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ১১টি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের সুপারিশ করা হয়। যার মধ্যে প্রথম পর্যায়ে পাঁচটি এবং দ্বিতীয় দফায় ছয়টি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে পাগলা, দাশেরকান্দি, উত্তরা, মিরপুর ও রায়েরবাজারে পাঁচটি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে টঙ্গী, সাভার, রূপগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, ডেমরা এবং নারায়ণগঞ্জে ছয়টি পয়ঃশোধনাধার নির্মাণ করা হবে। প্রথম পর্যায়ের অগ্রাধিকার হিসেবে খিলগাঁও এলাকার দাশেরকান্দিতে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। যার ধারণক্ষমতা হলো ৫ শ’ এমএলডি। এ জন্য প্রয়োজন হচ্ছে ৬০ একর জমি। এ জন্য ১০ কিলোমিটার ট্যাঙ্ক সুয়ারেজ লাইন করতে হবে।
প্রস্তাবিত উত্তরার প্রকল্প সম্পর্কে বলা হয়েছে, রাজউকের সাথে যোগাযোগ করে ঢাকা ওয়াসা জানতে পারে রাজউক কর্তৃক ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণের জন্য দিয়াবাড়ি, নলভোগ ও ধউর মৌজায় প্রয়োজনীয় ভূমি চিহ্নিহ্নত করা হয়েছে। কিন্তু ওই চিহ্নিহ্নত জমির একটি বড় অংশ সরকার কর্তৃক অবমুক্ত করে দেয়া হয়। অবশিষ্ট অংশে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণের প্রয়োজনীয় জমি সঙ্কুলান হবে না। তাই রাজউকের সাথে আলোচনা করে ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের জন্য চিহ্নিহ্নত অংশের পূর্ব পাশের কিছু জমিসহ প্রায় ৫৩ দশমিক ৭৫০৮ একর জমি জরিপ সম্পাদন করে রাজউকের ছাড়পত্র প্রয়োজন। চলমান দাশেরকান্দি প্রকল্পের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হলেও এই প্রকল্পে করা হয়নি। বিধি অনুযায়ী ৫০ কোটি টাকার বেশি কোনো বিনিয়োগ প্রকল্প হলেই তাতে সম্ভাব্যতা যাচাই বা ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে হবে। কিন্তু এই প্রকল্পে সেটা করা হয়নি।
ব্যয় বিভাজনে দেখা যায়, মোট প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৪৩০ কোটি টাকা যাবে ৫৩ দশমিক ৭৫০৮ একর জমি ক্ষতিপূরণে। এখানে প্রতি একরে ক্ষতি দেয়া হচ্ছে প্রায় ৮ কোটি টাকা। আর একই পরিমাণ জমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে ৯৪৭ কোটি ৩৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। ফলে একরপ্রতি অধিগ্রহণ ব্যয় ১৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
ঢাকা ওয়াসার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপরিকল্পিতভাবেই ঢাকার পয়ঃবর্জ্য নিষ্কাশিত হচ্ছে। সুয়ারেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন না হওয়ায় বৃষ্টি হলে পয়ঃবর্জ্য একাকার হয়ে যায়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ঢাকা ওয়াসা সম্প্রতি একটি সুয়ারেজ মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছে। তাতে এগারোটি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। এখন শুধু খিলগাঁওয়ের দাশেরকান্দি এলাকায় ৩ হাজার ৩১৭ কোটি টাকায় পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ করা হচ্ছে। চলতি বছর ডিসেম্বরে শেষ করা হবে। চীনের ঋণসহায়তায় এটি করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে যথাসম্ভব ফসলি জমি বাদ দেয়া হয়েছে। ডিএপি নকশায় আলোচ্য জমি সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্ধারণের জন্য নির্ধারিত আছে। প্রকল্পের প্রয়োজনীয় সব জনবল ঢাকা ওয়াসা থেকে প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হবে। নতুন কোনো জনবল নিয়োগ করা হবে না। তাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনবল কমিটির সুপারিশ নেয়া হয়নি। আগামী ২০২১ সালের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্ত করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা