বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক জোটের নেতাকর্মী ও আইনজীবীসহ তিন লাখ ১৩ হাজার ১৩০ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাকে ‘কাল্পনিক’ উল্লেখ করে মামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা রিটের শুনানি সুপ্রিম কোর্টের অবকাশের পরে হবে বলে জানিয়েছেন হাইকোর্ট।
গতকাল সোমবার রিটটি শুনানির জন্য উঠলে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি আহমদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ভ্যাকেশন বেঞ্চ সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের বিষয়টি নিয়ে অবকাশের পরে আসার আদেশ দেন।
আদালতে রিটকারীদের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী খন্দাকার মাহবুব হোসেন। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী ও ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ আইনজীবী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এ প্রসঙ্গে খন্দকার মাহবুব হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, রিটটি শুনানির জন্য গেলে আদালত বলেছেন, এই রিট শুনানি করতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। বর্তমানে ভেকেশন বেঞ্চে অনেক মামলা শুনানির জন্য অপেক্ষায় আছে এবং যে উদ্দেশ্যে ভেকেশন বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে, এই রিট শুনতে গেলে তা ব্যাহত হবে। তাই আদালত ভেকেশনের (১ অক্টোবর) পরে আসতে বলেন বলে জানান তিনি।
গত রোববার সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, সাবেক মন্ত্রী নিতাই রায় চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট সানাউল্লা মিয়া। রিট আবেদনে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (নর্থ জোন), রমনা জোনের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার, রমনা ও শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিবাদি করা হয়।
এর আগে খন্দকার মাহবুব হোসেন জানিয়েছিলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে ঢালাওভাবে এ ধরনের কাল্পনিক মামলা করার উদ্দেশ্যে হচ্ছে বিরোধী দলকে চাপে রেখে নেতাকর্মীদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করা।
তিনি বলেন, এ ধরনের মামলা সঠিক হয়েছে কি না তা তদন্ত করতে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠন করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কাল্পনিক মামলা করে যেন হয়রানি না করা হয়, তার নির্দেশনা জারির আবেদন করা হয়েছে। যারা এ ধরনের মামলা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়েও আবেদন করা হয়েছে। এ রিটের শুনানিতে ড. কামাল হোসেনসহ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা অংশ নিতে পারেন বলেও জানান তিনি।
আবেদনকারীরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অগণিত মানুষের বিরুদ্ধে ‘কাল্পনিক’ মামলা করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং এই ধরনের ‘কাল্পনিক’ মামলাকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিবাদিদের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এ মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে রিট আবেদনে।
এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় আবেদনকারীসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পরবর্তী সময়ে এ ধরনের মামলা দায়ের থেকে বিরত থাকতে এবং এ ঘটনা তদন্তে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের প্রতিনিধি রেখে সাত সদস্যের একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা জারির আবেদন করা হয়েছে।
সারা দেশে সেপ্টেম্বর মাসে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক জোটের নেতাকর্মী ও আইনজীবীসহ তিন লাখ ১৩ হাজার ১৩০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩ হাজার ৭৩৬টি গায়েবি ও কাল্পনিক মামলা করা হয়েছে বলে রিটকারী আইনজীবীরা উল্লেখ করেন।