২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সাতক্ষীরায় স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা, স্বামীকে ফাঁসির আদেশ

সাতক্ষীরায় স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা, স্বামীকে ফাঁসির আদেশ - ছবি : নয়া দিগন্ত

সাতক্ষীরা পৌরসভার মেহেদিবাগে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে স্বামী রবিউল ইসলামকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেয়া হয়েছে। একইসাথে ১০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

রোববার দুপুরে এক জনাকীর্ণ আদালতে সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এমজি আযম এ আদেশ দেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি রবিউল ইসলাম আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আসামিকে চিৎকার করে কাঁদতে শোনা যায়।

ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি রবিউল ইসলাম সাতক্ষীরা শহরের পূর্ব মেহেদীবাগের বেলাল গাজীর ছেলে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১০ সালে যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার আগরহাটি গ্রামের শহীদুল ইসলামের মেয়ে রাবেয়া খাতুনের সাথে সাতক্ষীরা শহরের পূর্ব মেহেদীবাগের রবিউল ইসলাম গাজীর বিয়ে হয়। বিয়ের সময় জামাতাকে নগদ টাকা, সোনার গহনা ও আসাবাবপত্রসহ তিন লাখ টাকার জিনিসপত্র দেয়া হয়। এরপরও বিয়ের এক বছর না যেতেই রবিউল ও তার পরিবারের সদস্যরা রাবেয়াকে বাপের বাড়ি থেকে এক লাখ টাকা যৌতুক নিয়ে আসতে বলে। বাপের বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা আনতে অপারগতা প্রকাশ করায় রাবেয়ার ওপর শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে বাবার বাড়িতে তাড়িয়ে দেয়া হয়। একপর্যায়ে শহীদুল ইসলাম ৭০ হাজার টাকা দিয়ে মেয়েকে শ্বশুর বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

এরপরও বাকি ৩০ হাজার টাকার দাবিতে রাবেয়াকে ২০১৪ সালের ৬ জুন সন্ধ্যা ৬টায় রবিউল ও তার পরিবারের সদস্যরা শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। খবর পেয়ে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে গিয়ে মেয়েকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান পিতা বেলাল গাজী। পরদিন নিহতের বাবা জামাতা রবিউল ইসলাম, তার বাবা-মা ও ভাই-বোনের নাম উল্লেখ করে সদর থানায় ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। আসামি রবিউল ইসলাম ২০১৪ সালের ৮ জুন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শিমুল কুমার বিশ্বাসের কাছে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপ-পরিদর্শক তানভির হোসেন ওই বছরের ১৭ নভেম্বর আদালতে এজাহারভুক্ত ৫ জনের নামে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

মামলার নথি ও ১৩ জন সাক্ষীর জবানবন্দি পর্যালোচনা শেষে আসামি রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে স্ত্রী রাবেয়াকে শ্বাসরোধ করে হত্যার বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়া বিচারক এমজি আযম তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা একইসাথে ১০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন। একই আদেশে চার আসামিকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়। মামলার রায় শুনে আসামি রবিউল ইসলাম কাঠগোড়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্নায় ভেঙে পড়েন তার স্বজনরাও।

রবিউলের ভাই হাসানুজ্জামান বলেন, ভাইকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সাজা দেয়া হয়েছে। তারা এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট এসএম হায়দার আলী। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট জহুরুল হায়দার বাবু।


আরো সংবাদ



premium cement