২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


কিডনি রোগীদের রমজানে খাদ্যাভাস

-

বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি লোক কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। এই কিডনি রোগীরা কি রোজা রাখতে পারবে। আর যদি রাখে তবে তাদের কি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এটিই আজকে আলোচ্য বিষয়।

যাদের জন্য রোজা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ
যারা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগী, যাদের কিডনি বিকল হয়ে পঞ্চম ধাপে আছেন, যাদের নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে, যাদের মূত্রতন্ত্রের প্রদাহের চিকিৎসা চলছে, আকস্মিক কিডনি বিকল রোগীদের মধ্যে যারা কিডনির কোনো জরুরি অপারেশন করাতে হচ্ছে তারা। তা ছাড়া দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগীদের যদি রক্তের উপাদানে কোনো জটিলতা দেখা দেয়, যাদের ডায়ালাইসিস বা উচ্চ রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত আছে। তাদের এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে রোজা রাখতে হবে।

যে ধরনের কিডনি রোগীরা রোজা রাখবেন কিন্তু বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে :

দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগী : যারা প্রথম থেকে পঞ্চম ধাপ পর্যন্ত আছেন কিন্তু কোনো জটিলতা নেই। তারা রোজা রাখতে পারবেন তবে তাদের প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন- মাছ, গোশত, ডিম, দুধ এগুলো পরিমিতভাবে খেতে হবে, পিয়াজু ও ভাজাপোড়া খাবার , অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, ঝাল-মসলা পরিহার করতে হবে। যাদের রক্তে পটাশিয়াম বেশী তারা শাকসবজি পটাশিয়াম মুক্ত করে খাবেন ও ফল সীমিত পরিমাণ খাবেন। আপনার ডাক্তারের পরামর্শে রক্তের উপাদান মাঝে মধ্যে পরীক্ষা করিয়ে নেবেন। যাদের শরীরে অতিরিক্ত পানি আছে বা শরীর ফোলা তারা একবারে অনেক বেশি পানি খাবেন না। সাহরির সময় ভাত-রুটি, মাছ-গোশত, ডিম, দুধ পরিমিত খাবেন । ইফতারের সময় খেজুর, চিঁড়া, দই, ডিমের পুডিং, সেমাই, পায়েস, পিঠা প্রভৃতি। ঘরে রান্না করা খাবার খাবেন।

মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ : যাদের ঘনঘন প্রস্রাবে ইনফেকশন হয়- প্রস্রাবে ইনফেকশন প্রতিরোধের জন্য সাহরির সময় ও ইফতারের পরপর বেশি করে পানি খাবেন। কমপক্ষে ৩ লিটার প্রতিদিন। এ ছাড়াও ক্রানবেরি জুস অথবা প্রেসক্রিপসন অনুযায়ী ওষুধ, প্রস্রাবে ইনফেকশন কমিয়ে আনে। প্রতিদিন সাহরির সময় ১ বা ২টি ক্যাপসুল খাবেন, যাদের ঘনঘন মূত্রতন্ত্রে ইনফেকশন হয়, তারা ইনফেকশন প্রতিরোধের জন্য কট্রিম অথবা নাইট্রোফোরানটোয়িন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক অল্প মাত্রায় খেতে পারেন।

কিডনিতে পাথর : কিডনিতে পাথর সৃষ্টির সাথে পানির একটা সম্পর্ক আছে। পানি কম খেলে পাথর হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। কাজেই যাদের পাথর হওয়ার প্রবণতা আছে তাদের ইফতার থেকে শুরু করে সাহরি পর্যন্ত ৩-৪ লিটার পানি খেতে হবে। সেই সাথে তারা আলগা লবণ পরিহার করবে এবং প্রোটিনজাতীয় খাবার বিশেষ করে গরু-খাসির গোশত কম খাবেন।

দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগীদের গ্রহণীয় খাদ্য তালিকা
মাছ/গোশত : মুরগির গোশত, বিভিন্ন ধরনের মাছ পরিমিত।
শাক : লালশাক, ডাঁটাশাক, কলমিশাক, মিষ্টিকুমড়া শাক, লাউশাক, সরিষাশাক, কচুশাক
সবজি : ডাঁটা, পটোল, করল্লা, ঝিঙা, কাঁকরোল, লাউ, শশা, বেগুন, চালকুমড়া, বিচি ছাড়া শিম, পাকা বেল, ধুনদুল, বেগুন, গাজর, চিচিঙ্গা/ঝিঙা, চালকুমড়া, আলু (সামান্য)
ফল : আপেল, পাকা পেঁপে, পাকা পেয়ারা, আনারস, নাশপতি, জামরুল, পাকা কাঁঠাল, কাঁচা আম, পাকা বেল।
অন্যান্য : চাল, আটা, ময়দা, মুড়ি, চিঁড়া, মুগ ডাল (অল্প পরিমাণ), সেমাই, সুজি, বার্লি, কর্নফ্লেক্স, ভুট্টা, কর্নফ্লাওয়ার প্রভৃতি।

কিডনি সংযোজনের রোগী
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, কিডনি সংযোজিত রোগীর রোজা রাখতে পারে। তবে তাদের ওষুধ নিয়মিত খেতে হবে।
মনে রাখতে হবে এখন প্রচণ্ড গরমের সময়। খোলা খাবার, রাস্তার পাশে বিভিন্ন রঙ-বেরঙের শরবত সহজেই জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। এগুলো খেয়ে ডায়রিয়া, বমিতে আক্রান্ত হয়ে অসংখ্য রোগী আকস্মিক কিডনি বিকল হয়ে থাকে। এসব খোলা খাবারের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। খাবারের আগে অবশ্যই পরিষ্কার থালা-বাসন ও হাত-মুখ সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধৌত করে নিতে হবে।
কিডনি রোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
চিফ কনসালট্যান্ট ও বিভাগীয় প্রধান, কিডনি রোগ বিভাগ
ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ঢাকা


আরো সংবাদ



premium cement