২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


তোতলামি আর নয়

-

ঋত্বিক রোশনকে তো আমরা সবাই চিনি। তুখোড় এই অভিনেতার কথার জাদুতে আমরা মুগ্ধ হলেও ছোট বেলায় কিন্তু তার ছিল তোতলানোর রোগ। মিস্টার বিন খ্যাত রোয়ান এটকিন্সন, তুখোড় অভিনেত্রী জুলিয়া রবার্টস কিংবা কথার জাদুকর চার্চিল- এরা সবাই ছোটবেলায় কথা বলতে গেলে তোতলাতেন। কিন্তু সবাই এখন বিখ্যাত। তাই তোতলামির জন্য শিশুর হীনম্মন্যতায় ভোগার, নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার কোনো মানে হয় না। মা-বাবারও অহেতুক দুশ্চিন্তার কারণ নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তোতলানো একটি স্বাভাবিক ব্যাপার যা ১০ থেকে ১৬ বছরের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়।

গ্রিক যুগে ধারণা করা হতো যে, জিভ শুকিয়ে গেলে তোতলামি হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ভাবা হতো, জিভের নিচে একটি বাড়তি মাংস থাকায় জিভ নড়ে না। চিকিৎসা হিসেবে বহু রকমের অপারেশন করা হয়েছে, কিন্তু তারপরও কোনো উন্নতি হয়নি। অনেকে আবার তোতলামির জন্য পানি পড়া, ঝাড়ফুঁক কিংবা মুখে পারদ বল দিয়ে থাকে। এর কোনোটিই মূলত কাজে আসে না।
কথা বলার সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে তিনটি ব্যাপার হতে পারে- শব্দ বা কথা পুনরাবৃত্তি করা। যেমন, ‘আগামী আগামী আগামীকাল যাব’। শব্দের প্রথম অক্ষর বা উচ্চারণ লম্বা করে বলা, যেমন : ‘পাপাপাপাপানি খাব’। বাক্যের মধ্যে বা শব্দের মধ্যে হঠাৎ করে থেমে যাওয়া বা আটকে যাওয়া। মুখ নড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না। ঠোঁট-মুখ বেঁকে যাচ্ছে, মুখ থেকে হালকা থুতু বের হচ্ছে, কিন্তু কথাটা পুরো হচ্ছে না-এই তিনটাই প্রাথমিক সমস্যা। এগুলো যখন স্বাভাবিক হচ্ছে না, তখন পরবর্তী পর্যায়ে তার মধ্যে তৈরি হচ্ছে হতাশা, লজ্জা ও দুশ্চিন্তা। এভাবে বৃত্তের মতো ঘুরতে থাকে।

তোতলামির কারণ
তোতলামি হয়ে থাকে জিহ্বা বা বাকযন্ত্রের ত্রুটির কারণে। এক ধরনের তোতলামি রয়েছে যা শিশু অনুকরণ করে শেখে। যেসব মা-বাবা শিশুর কথার জড়তাকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেন, সেসব শিশুর মধ্যে সমস্যা বেশি দেখা যায়। মানসিক উদ্বেগ, ইচ্ছার অবদমন, প্রতিকূল পারিবারিক পরিবেশ প্রভৃতিকে শিশুর তোতলামির উল্লেখযোগ্য কারণ বলে ধরা হয়। যেসব শিশু তুলনামূলকভাবে বেশি আতদসচেতন, ভয় পেলে বা রেগে গেলে তাদের কথার অস্পষ্টতা বা তোতলামি বেড়ে যায়।

তোতলামির চিকিৎসা
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বয়স বাড়লে কথার জড়তা আপনাতেই কেটে যায়। বকুনি, শাসন, সংশোধন কোনোটাতেই তোতলামি সারে না; বরং সহানুভূতি, স্নেহ-মমতা, ধৈর্য ইত্যাদিতে শিশু এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারে। শিশুর মনের উদ্বেগ, অশান্তির কারণ খুঁজে বের করতে হবে। যতদূর সম্ভব শিশুর সামনে তার সমালোচনা না করাই ভালো। নিজেদের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আড়াল করে শিশুর সাথে স্বাভাবিক ব্যবহার করতে হবে। তার সাথে কথা বলুন বারবার। তার লজ্জা, হতাশা ও দুশ্চিন্তা কমান। তাকে ধীরে ধীরে কথা বলার অভ্যাস করান। প্রতিটি আওয়াজ ধীরে ধীরে ও চাপ দিয়ে বলার অভ্যাস করান। স্পিচ থেরাপিও চিকিৎসা হিসেবে ফলদায়ক। যারা সঠিক সময়ে, সঠিক বয়সে নির্ভুুলভাবে কথা বলতে পারে না তাদের শুদ্ধভাবে কথা শেখানোই স্পিচ থেরাপিস্টের কাজ। শিশুর ভাষা শিক্ষার উপযুক্ত সময় দেড় বছর থেকে সাড়ে চার বছর। এ তিন বছর বয়সে দ্রুত ভাষার উন্নতি ঘটে। সব শুধু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এবং বিভিন্ন রকম ব্যয়ামের মাধ্যমে ধীরে ধীরে আরোগ্য লাভ করা যায়। এ চিকিৎসায় শারীরিক কসরত কিংবা স্পিচ থেরাপিস্টের পরামর্শ সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হবে। এরপরও যদি কারো সমস্যা থাকে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন।
একটু সচেতন হলেই তোতলানোর সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া যায়। প্রয়োজন শুধু সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ।


আরো সংবাদ



premium cement