০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


মৌসুমি ফলের পুষ্টি কথা

-


গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শরৎ এই তিন ঋতুতে বাংলাদেশে বিভিন্ন রকমের ফল পাওয়া যায়। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাস আম, কাঁঠাল ও লিচুর মৌসুম আর শীতের শেষে বসন্তকালে তরমুজ, ফুটি, বেল এসব ফলের মৌসুম শুরু হয়। বৈশাখের মাঝামাঝি থেকে জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত লিচু পাওয়া যায়। জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, তাল উঠে। এ সময় জামরুল, সফেদা ইত্যাদি ফলও বাজারে পাওয়া যায়। ফল সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। ফলের মধ্যে প্রয়োজনীয় এন্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন বি এবং খনিজ লবণ থাকে যা দেহকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। এ সময় বাজারে প্রাপ্ত বিভিন্ন মৌসুমি ফলের পুষ্টিমূল্য, গুণাগুণ ও ব্যবহার জেনে নেয়া যাক।
আম : আমাদের দেশে আমকে ফলের রাজা ধরা হয়। কাঁচা ও পাকা দু’ভাবেই আম খাওয়া হয়। কাঁচা আম দিয়ে আচার, চাটনি, মোরব্বা, জ্যাম, শরবৎ তৈরি করা যায়। আবার লবণ মিশিয়ে এমনিও খেয়ে ফেলা যায়। অন্য দিকে পাকা আম সুমিষ্ট ও সুস্বাদু। ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, হিম-সাগর, ক্ষীরসাভোগ ইত্যাদি নানা স্বাদ ও গন্ধের আম আমাদের দেশে পাওয়া যায়। পাকা আমে ডায়েটারি ফাইবারে-এর পরিমাণ বেশি। এতে প্রচুর পরিমাণে বিটাক্যারোটিন, ভিটামিন সি, পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম আছে। আমের ফাইবার ক্যান্সার এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। প্রত্যহ মাঝারি আকারের একটি আম আমাদের ডায়েটারি ফাইবারের ৪০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করে। একজন ডায়াবেটিক রোগী দিনে একটি ছোট পাকা আম খেতে পারেন।
কাঁঠাল : আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠাল। কাঁচা ও পাকা দু’ভাবেই কাঁঠাল খাওয়া হয়। কাঁচা কাঁঠালকে এ্যঁচোড় বলে, যা তরকারি হিসেবে বেশ সুস্বাদু। কাঁঠালের বীচি দিয়েও তরকারি রান্না করা হয়। পাকা কাঁঠাল খুব সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। এতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য শক্তি, আঁশ, ক্যারোটিন, ভিটামিন ও খনিজ লবণ আছে। একজন ডায়াবেটিক রোগী দিনে চার-পাঁচ কোষ কাঁঠাল খেতে পারেন।
লিচু : লিচু তার সুন্দর রঙ, গন্ধ ও স্বাদের জন্য বিখ্যাত। মিষ্টি স্বাদের এই ফল দেহের তৃষ্ণা মেটায় ও শক্তি বাড়ায়। হার্বাল-বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, দু’বেলা চার-পাঁচটি করে লিচু খেলে বয়স বাড়লেও শরীরের লাবণ্য বজায় থাকে। একজন ডায়াবেটিক রুগী দিনে পাঁচ-ছয়টি বড় আকারের লিচু খেতে পারেন।

আনারস : আনারস উপকারী ফল। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। আনারস কেটে রস করে, জ্যাম, জ্যালি, মোরব্বা ও আঁচার বানিয়ে খাওয়া যায়। আনারস ক্ষিদে বাড়ায় ও রুচি আনতে সাহায্য করে। সামান্য লবণ ও গোলমরিচ মাখিয়ে খেলে আনারসের স্বাদ অনেকগুণে বেড়ে যায়। এতে আছে বিভিন্ন এন্টি-অক্সিডেন্ট, বিটাক্যারোটিন এবং এনজাইম ব্রোমেলেইন, যা রক্ত জমাট বাঁধা দূরীকরণে একটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
পাকা বেল : এতে আছে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন, ডায়েটারি ফাইবার এবং এন্টি-অক্সিডেন্ট। প্রতিদিন এক গ্লাস বেলের শরবৎ পান করলে পেট ঠাণ্ডা থাকে, কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে সাহায্য করে এবং ক্লান্তি দূর করে।
বাঙ্গি : এই সময় বাঙ্গি, ফুটি, চিনাল পাওয়া যায়। এগুলোতে আছে প্রচুর পরিমাণে পানি, ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন ও বিটা ক্যারোটিন। এসব ফলের জুস পেট ঠাণ্ডা রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে সাহায্য করে, রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। চিনি ছাড়া বাঙ্গির শরবৎ ডায়াবেটিক রোগীরা প্রচুর পরিমাণে খেতে পারেন।
তরমুজ : তরমুজের রস মিষ্টি ও তৃপ্তিদায়ক যা শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে এবং ক্লান্তি দূর করে। তরমুজের রসে প্রচুর ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়াম আছে। হার্বাল বিশেষজ্ঞদের মতে তরমুজের রস খেলে শরীরের লাবণ্য বাড়ে, চোখ ও ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ে।
ফল সুস্বাদু ও তৃপ্তিদায়ক, তবে সুমিষ্ট ফলে শর্করার মাত্রা অনেক বেশি। এ জন্য বেশি ফল খেলে শরীরের ওজন বেড়ে যেতে পারে এবং অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বাড়ে। এ জন্য দৈনিক ২০০ গ্রামের বেশি ফল খাওয়া উচিত নয়।
লেখক : পুষ্টি কর্মকর্তা, ন্যাশনাল হেলথকেয়ার নেটওয়ার্ক


আরো সংবাদ



premium cement