দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে সান মারিনো জাতীয় দলে খেলছেন মাত্তেও ভিতাইওলি। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৯১টি ম্যাচ খেলা বর্তমান অধিনায়ক ক্যারিয়ারে এখনো পর্যন্ত কোনো জয়ের দেখা পাননি। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল।
দুই দশকে ১৩৬ ম্যাচে সান মারিনো শুধু পরাজয়ই দেখেছে। আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের পঞ্চম ছোট এই দেশটি মাত্র একবার জয়ী হয়েছিল। ২০ বছর ধরে জয়ের মুখ না দেখা একটি দল কিভাবে মাঠে নিজেদের টিকিয়ে রেখেছে সেটা একটা বিস্ময়।
একের পর এক পরাজয়ের সাক্ষী ভিতাইওলি বিবিসি স্পোর্টকে বলেন, ‘ক্যারিয়ারে অনেক কিছুই দেখেছি, যেখানে শুধু পরাজয়ের হতাশা ছিল। কিন্তু ২০১১ সালে নেদারল্যান্ডের কাছে ১১-০ ব্যবধানে হার এখনো আমি ভুলতে পারি না। এটাই আমার সবচেয়ে বড় দু:সহ স্মৃতি। ওই ম্যাচটিতে আট কিংবা নয় গোল হজমের পর আরো অনেক সময় বাকি ছিল। ওই সময় নেদারল্যান্ডকে আরো গোল দিতে সমর্থকরা উৎসাহিত করেছিল।’
নিজেদের ইতিহাসে সান মারিনো জয়ের দেখা পেয়েছে মাত্র একবার। ২০০৪ সালের ২৮ এপ্রিল সেই ম্যাচে লিখটেস্টেইনের বিপক্ষে ১-০ গোলে জিতেছিল সান মারিনো। সেদিন সান মারিনোর হয়ে একমাত্র গোলটি করেছিলেন অ্যান্ডি সিলভা। যিনি ৮ গোল করে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতাও।
বিশ্বের পঞ্চম ছোট দেশ সান মারিনোকে চারদিকে ঘিরে আছে ইতালি। দেশটির জনসংখ্যাও মাত্র ৩৩ হাজার। এমনকি ৬১ বর্গ কিলোমিটার আকৃতির দেশটি আকারে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারের অর্ধেকের মতো। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে তাকালে দেখা যাবে, এটি ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে বাজে দল। ২০১টি ম্যাচের মধ্যে ১৯২টি ম্যাচেই হেরেছে তারা। বর্তমানে র্যাঙ্কিংয়ের সবচেয়ে তলানির দেশ হিসেবে ২১০ নম্বরে অবস্থান করছে সান মারিনো।
তবে, ভিতাইওলি এবং তার দলের সামনে এখন জয় খরা কাটানোর দারুন এক সুযোগ এসেছে। এবার তারা দু’টি প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ক্যারিবিয়ান ক্লাব সেন্ট কিটস ও নেভিসের। সেন্ট কিটস র্যাঙ্কিংয়ে সান মারিনোর চেয়ে ৬৩ ধাপ ওপরে অবস্থান করছে। এরপরও নিজেদের সেরা খেলাটা খেলতে পারলে জেতার ভালো সুযোগ আছে সান মারিনোর।
জয়ের জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকা ৩৪ বছর বয়সী ভিতাইওলি বলেন, ‘জাতীয় দলে খেলাটা সব সময়ই আমার স্বপ্ন ছিল। আমি খুবই সৌভাগ্যবান। তবে জয় ছাড়া এখন বিকল্প কিছু ভাবছি না। এটাই মূল লক্ষ্য। আমি যদি দলকে জয় উপহার দিয়ে যেতে পারি তবে সেটাই সবাই মনে রাখবে। এর থেকে ভাল বিদায় আর হতে পারে না।’
ফুটবলের পাশাপাশি একজন গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে কর্মরত ভিতাইওলি। আন্তর্জাতিক ফুটবলের ব্যস্ততার সাথে প্রতিদিনের প্রাত্যহিক জীবনে কিভাবে মানিয়ে নিচ্ছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে অধিনায়ক বলেন, ‘বিষয়টা কঠিন। কিন্তু দেশের হয়ে জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করার বিষয়টি আসে ভালোবাসা থেকে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেশের হয়ে খেলার সৌভাগ্য সবার হয় না। এর পিছনে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।’
দীর্ঘ দিনের জয় খরা, অদূর ভবিষ্যতে কোনো বড় টুর্নামেন্টে খেলার সম্ভাবনাও নেই, একের পর এক বড় পরাজয়, এসবের মাঝেও সান মারিনোর খেলোয়াড়রা নিজেদের ভালবাসা থেকেই এই দলটির হয়ে খেলে যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতি যেকোনো দলের আত্মবিশ্বাসকে তলানিতে নামিয়ে আনতে যথেষ্ট। এরপরও আশ্চর্যজনকভাবে দলটি চেষ্টা করে মাঠে নামার আগে উজ্জীবিত থাকার। এমনকি গোলশূন্য ড্র ম্যাচ থেকেও নিজেদের জন্য আত্মবিশ্বাস খুঁজে নেয় খেলোয়াড়েরা।
ভিতাইওলি বলেন, ‘আমি ২০ বছর ধরে জাতীয় দলের অংশ। এখানে প্রতিটি দলের ভিত্তি হচ্ছে টিম স্পিরিট। আপনি যখন কঠিন ম্যাচ খেলবেন, সেগুলো বেশ জটিল হয়। আপনি যদি দলের ওপর আস্থা না রাখেন, তবে সে ম্যাচগুলোতে খুবই বাজে ফল হয়।’
এত হতাশার মাঝেও সান মারিনো উন্নতির ইঙ্গিত ঠিকই দিয়েছে। গত বছর অক্টোবরে ইউরো ২০২০ বাছাই পর্বে ডেনমার্কের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক ম্যাচে প্রথম গোলের দেখা পেয়েছিল। ওই গোলে সমতায় ফিরলেও শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে হার মানতে হয়। এর চার দিন পর কাজাখাস্তানের বিপক্ষে ৩-১ ব্যবধানে হারা ম্যাচেও গোল পায় দলটি। এর আগে পরপর দুই ম্যাচে সান মারিনোর গোল পাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল ১৮ বছর আগে। এরপর ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে ২-১ গোলে পরাজয়ের ম্যাচটিতেও গোলের দেখা পায় সান মারিনো। পরপর তিন ম্যাচে গোল পাওয়ার সেটিই ছিল প্রথম দৃষ্টান্ত।
সূত্র : বাসস
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা