০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
উপজেলা নির্বাচন

ভোটারদের নিরুৎসাহিত করার ক্যাম্পেইন শুরু করেছে বিএনপি

-

উপজেলা নির্বাচনে ভোটারদের নিরুৎসাহিত করতে নানামুখী ক্যাম্পেইন শুরু করেছে বিএনপি। প্রথম ধাপে যেসব উপজেলায় নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সেসব জায়গায় সাংগঠনিকভাবে লিফলেট বিতরণ করা শুরু হয়েছে। চলছে উঠোন বৈঠক। নেতাকর্মীদেরও প্রচার-প্রচারণায় সক্রিয় করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ নির্বাচনে দলের যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
দলটির সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন, ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন যেসব কারণে তারা বর্জন করেছেন, সেসব কারণেই উপজেলা নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ভোটারদেরও একতরফা এসব নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই।
দলটির দাবি, তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জন করেছে। উপজেলা নির্বাচনেও একই ঘটনা ঘটবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এ প্রসঙ্গে বলেন, বিএনপির আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ বিগত ৭ জানুয়ারির একতরফা, ডামি নির্বাচনের ভোট বর্জন করেছে। উপজেলায়ও ওরা-ওরাই নির্বাচন করছে। আমরা জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলায়ও জনগণকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট বর্জনের আহ্বান জানাচ্ছি, তাদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করছি।
বিএনপি মনে করে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন কোনো নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার সুযোগ নেই। যেসব কারণে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো বিগত জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি, সেসব কারণ এখনো বহাল আছে। এ অবস্থায় সংসদ নির্বাচন বর্জনের চার মাসের মাথায় উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন হাস্যকর হয়ে যাবে। তাই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে শুরু থেকেই কঠোর অবস্থান নেয় বিএনপির হাইকমান্ড। তবে কঠোর হওয়ার আগে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটে অংশগ্রহণকারী দলের নেতাদের ফেরাতে নানামুখী প্রচেষ্টা চালায় বিএনপি। এই উদ্যোগে বেশ কয়েকজন নেতা নির্বাচন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু বাকিরা নির্বাচনে থাকায় সংগঠনে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বহিষ্কারের মতো কঠোর সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেয় দল। এর অংশ হিসেবে গত শুক্রবার ৭৩ জনসহ দু’দিনে ৭৬ জনকে বহিষ্কার করে বিএনপি। বিএনপির প্রত্যাশা, নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্রের কঠোর অবস্থান এবং তৃণমূলে ভোট বর্জন ক্যাম্পেইনের ফলে উপজেলার পরবর্তী ধাপগুলোতে নির্বাচন করতে আগ্রহী দলের নেতাদেরও বিরত রাখা যাবে।

নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, এবার কম-বেশি ৪৮০ উপজেলা পরিষদে চার ধাপে ভোট হবে। প্রথম ধাপে ভোট হবে আগামী ৮ মে। এরপর ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে, ২৯ মে তৃতীয় এবং ৫ জুন চতুর্থ ও শেষ ধাপের নির্বাচন হবে।
জানা গেছে, নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি ভোটারদের মাঝে ‘আওয়ামী সরকারের আসন্ন প্রতারণামূলক ডামি উপজেলা ও সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করুন’-শিরোনামে লিফলেট বিতরণ করছে। সেখানে বিএনপির উপজেলা নির্বাচন বর্জনের কারণগুলো তুলে ধরে জনগণকে ভোট বর্জনের আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির ২৫ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার এবং সাজা প্রদানের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। সেই সাথে জানানো হয়েছে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির এক দফা দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখার কথাও। জনগণকে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে
গত বৃহস্পতিবার নরসিংদী সদর উপজেলা থেকে লিফলেট বিতরণের কার্যক্রম শুরু করে বিএনপি। ওই দিন জেলা বিএনপি কার্যালয়ে জেলার কর্মিসভা শেষে জনগণের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা জনগণকে শান্তিপূর্ণভাবে উপজেলা নির্বাচনের ভোট বর্জনের আহ্বান জানাচ্ছি। এ লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ উপায়ে আমাদের লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। যেখানে যেখানে নির্বাচন হচ্ছে, সেখানে আমাদের এই ক্যাম্পেইন চলছে। নির্বাচনের শেষ ধাপ পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলবে।
এ দিকে রাজনীতির পাশাপাশি মানবিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রচণ্ড তাপদাহে অতিষ্ঠ শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। তাদের মাঝে বিতরণ করছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইন। দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে রাজধানী ঢাকায় পরিচালিত হচ্ছে এই কার্যক্রম। বিএনপি নেতারা জানান, প্রচণ্ড এই তাপদাহে দলের নেতারা স্থান-কাল-পাত্রভেদে যার যার সাধ্য অনুযায়ী মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement