০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

ফরিদপুরের ঘটনায় তদন্ত কমিটি, দুর্নীতিতে উদ্বেগ

-


ফরিদপুরের মধুখালী মন্দিরে অগ্নিসংযোগ এবং পার্শ্ববর্তী প্রাইমারি স্কুলের দুই শ্রমিককে নির্মমভাবে নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। গত সোমবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে বিভিন্ন সেক্টরের দুর্নীতি ও ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। দলটি আর্থিক খাতের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরারও পরিকল্পনা করছে।
গতকাল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গত ১৮ এপ্রিল ফরিদপুর জেলার মধুখালীতে একটি মন্দিরে অগ্নিসংযোগ ও পার্শ্ববর্তী প্রাইমারি স্কুলে শৌচাগার নির্মাণের কাজ করার সময়ে সহোদর দুইজন শ্রমিককে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের জন্য দলের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী ৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হচ্ছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী। কমিটির সদস্যরা হলেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য বিজন কান্তি সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, ধর্মবিষয়ক সহসম্পাদক অমলেন্দু দাশ অপু ও নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সেক্টরের দুর্নীতি ও ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
নেতারা মনে করেন, দেশের ব্যাংকিং খাতে এখন লুটপাট চলছে। এর সাথে সরকারের ঘনিষ্ঠরা জড়িত। দেশের অর্থনীতিতেও এক ধরনের দুরবস্থা বিরাজ করছে। এ জন্য সরকার সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতি ও লুটপাট দায়ী। দেশবাসীর কাছে এর প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে চায় বিএনপি। শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন কিংবা বিবৃতির মাধ্যমে এটা তুলে ধরা হতে পারে।
বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা কোনো মামলাই রাজনৈতিক নয় বলে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য নিয়ে বৈঠকে কেউ কেউ কথা বলেছেন। বিএনপির নেতারা বলেছেন, গত ১৫ বছরে সারা দেশে এক লাখের অধিক মামলায় তাদের ৫০ লক্ষাধিক নেতাকর্মী আসামি। আর এসব মামলা গায়েবি, মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। নেতাদের দাবি, বিএনপিকে ঘায়েল করতে এসব মামলাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার।
বৈঠকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে মাহবুব উদ্দিন খোকনের অব্যাহতি বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। খোকন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অন্তত দুজন সদস্য খোকনের বিষয়টি উত্থাপন করেন। তবে বৈঠকে তার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তমূলক আলোচনা হয়নি।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার বিএনপির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র সহসভাপতির পদ থেকে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে দলীয় শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজের কথা বলা হয়। গত ৬ ও ৭ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন হয়। এতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ঐক্য প্যানেলের (নীল প্যানেল) প্রার্থী সিনিয়র আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হট্টগোল, মারধর, মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে। বিএনপিপন্থী আইনজীবী ফোরাম ভোট জালিয়াতি, কারচুপি ও মনগড়া ফলাফলের অভিযোগ করে। এ ঘটনায় বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের আসামি করে মামলা হয়, গ্রেফতার করা হয়। এ পরিস্থিতিতে বিজয়ী সভাপতি পদ ছাড়া আরো তিনজন সদস্যকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সমিতির এ মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণ না করার আহ্বান জানায়। তিনজন সদস্য দায়িত্ব গ্রহণ না করলেও মাহবুব উদ্দিন খোকন দায়িত্ব নেন।
এ দিকে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানা গেছে। বিএনপি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও দলটির অন্তত ৩৮ জন সাবেক-বর্তমান নেতা এবং তাদের স্বজন চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন। প্রথম দফার নির্বাচনে তারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। এদের মধ্যে ১৮ জন বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের পদধারী নেতা।
বিএনপির সূত্র জানিয়েছে, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা নির্বাচনে থাকছেন, শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় গত রোববার পটুয়াখালী ও কক্সবাজারের দুই নেতা এবং গতকাল মুন্সীগঞ্জের এক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এটি উপজেলা নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়া নেতাদের প্রতি একটি বার্তা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।


আরো সংবাদ



premium cement