৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


একীভূত হওয়া নিয়ে সরকারি ব্যাংক কর্মকর্তাদের অসন্তোষ

-


ব্যাংক একীভূত হওয়া নিয়ে সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। বিশেষ করে কৃষি ব্যাংকের সাথে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, সোনালী ব্যাংকের সাথে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট (বিডিবিএল) ব্যাংক এবং বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সাথে সরকারি খাতের বেসিক ব্যাংক একীভূত হওয়ার খবরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে কর্মকর্তা কর্মচারীরা একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর বিরোধিতা করে মিছিল-মিটিং শুরু করেছেন। সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছেন বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন এ প্রতিষ্ঠানটি বেসরকারি ব্যাংকের সাথে বিলীন হয়ে গেলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ কি হবে তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তার স্বজনরা।

ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, বেসরকারি ব্যাংক সিটির সাথে তারা বিলীন হয়ে গেলে নানাবিধ সমস্যায় পড়ে যাবেন। প্রথমত, স্থায়ী চাকরি থেকে তারা অস্থায়ী চাকরিতে চলে যাবেন। অনেকেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আবাসনের ব্যবস্থা করেছেন। বেসরকারি খাতে গেলে আর সেই সাথে চাকরি চলে গেলে তারা কিভাবে ঋণ পরিশোধ করবেন। এ ছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর বেশির ভাগ চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আউটসোর্সিং করে বিশেষ করে বিভিন্ন কোম্পানি থেকে চুক্তিভিত্তিতে লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু বেসিক ব্যাংক শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের শত শত কর্মচারীরা সরকারি বিধি মেনে চাকরি পেয়েছেন ও সুনামের সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। সিটি ব্যাংকের সাথে একীভূত হলে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আর চাকরি থাকবে না। তখন তারা কি করবেন।

এ দিকে বেসরকারি খাতের ব্যাংকের পরিবর্তে সরকারি ব্যাংকের সাথে একীভূত হওয়ার দাবিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে গতকাল স্মারকলিপি পেশ করেছেন বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
গভর্নরকে দেয়া স্মারকলিপিতে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, দেশের ক্ষুদ্র শিল্পে অর্থায়নের লক্ষ্যে ১৯৮৯ সালে বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের কার্যক্রম শুরু হয়, যা ১৯৯২ সালে শতভাগ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে একটি রাষ্ট্র মালিকাধীন বিশেষায়িত ব্যাংক হিসেবে সরকারি আর্থিক সেবা প্রদান করে আসছে, যা ২০১৫ সালে পুরোপুরি রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে রূপান্তরিত হয়। বেসিক ব্যাংক একটি সরকারি খাতের ব্যাংক হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সাথে ব্যাংকিং ব্যবসা পরিচালনা করেছে এবং দীর্ঘ প্রায় ২৩ বছর ধরে বাংলাদেশ সরকারকে বিপুল অঙ্কের মুনাফা প্রদান করেছে, যা অন্যান্য ব্যাংকের কাছে ছিল উদাহরণ। শতভাগ রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকে অন্যান্য রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের অনুরূপ চাকরি বিধিমালা অনুসরণ করা হয়, যা বেসরকারি মালিকানার ব্যাংকের সাথে পুরোপুরিভাবেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ। জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ অনুযায়ী বেসিক ব্যাংককে বিদ্যমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেড নির্ধারণ এবং বেতন ও অন্যান্য ভাতাদি প্রদান করা হয়। পাশাপাশি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন সুবিধা বলবৎ রয়েছে। এ ছাড়া বেসিক ব্যাংকে নিয়োগ ও পদন্নোতিতে সম্পূর্ণরূপে সরকারি ব্যাংকের অনুরূপ বিধিবিধান অনুসরণ করা হয়। বেসিক ব্যাংকে ১২তম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের স্থায়ী চাকরি বিদ্যমান রয়েছে। শ্রম আইন অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেসিক ব্যাংকে সরকারি শ্রম অধিদফতর অনুমোদিত ও রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

একই সাথে দেশের অন্যান্য সরকারি ব্যাংকের ন্যায় শতভাগ রাষ্ট্রমালিকাধীন বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। আলোচ্য বিষয়গুলোর সাথে বেসরকারি কোনো ব্যাংকের সামঞ্জস্যতা নেই। এ ছাড়া ইতোমধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অনেকেই সরকারি ব্যাংকের পদন্নোতির অধীনে পদন্নোতিপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজনকে সোনালী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদায়নের পর কয়েক মাস আগে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে এমডি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া রূপালী ব্যাংক ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে দুইজনকে ডিএমডি হিসেবে, একজনকে জনতা ব্যাংকে এবং দুইজনকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে জি এম হিসেবে পদায়ন করা হয়। উক্ত ঊধ্বর্তন নির্বাহীগণ অত্যন্ত সুনামের সাথে পদায়িত ব্যাংকে দায়িত্ব পালন করে আসছে।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, যেখানে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক অন্য দু’টি রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের সাথে মার্জ হতে চলেছে সেখানে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংককে কেন বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সাথে মার্জারের আলোচনা চলছে? মার্জার প্রক্রিয়ায় কোনোভাবেই বৈষম্য কাম্য নয়। এ ধরনের বৈষম্যনীতি নীতি পরিহার করে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মার্জার প্রক্রিয়ার সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংককে অন্য একটি রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের সাথে মার্জারের জন্য আবেদন জানানো হয়।
এ দিকে গতকাল কৃষি ব্যাংকের সাথে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে রাজশাহীতে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন করেছেন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ।

 


আরো সংবাদ



premium cement