৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ড. ইউনূসের জামিনের মেয়াদ বেড়েছে

খালাস চেয়ে আপিলের শুনানি ২৩ মে
-


শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জামিনের মেয়াদ আগামী ২৩ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছেন আদালত। একই সাথে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের আপিলের শুনানি আগামী ২৩ মে নির্ধারণ করেছেন। গতকাল শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের সদস্য জেলা ও দায়রা জজ এম এ আউয়ালের আদালত উভয়পক্ষের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
আদেশের পর আদালতের বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এই নতুন বছর যেন শান্তিপূর্ণ হয়। আমরা শান্তিময় পরিবেশে বসবাস করতে চাই। পুরো জাতিকে নিয়ে আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারি সেটাই আমরা সবাই প্রত্যাশা করি। আমরা শঙ্কার মধ্যে না থাকি। শঙ্কামুক্ত জীবন যাপন করি। আইনের শাসনের মধ্যে জীবন যাপন করি। তিনি বলেন, আমরা আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই যার যার মতো করে। তরুণদের মধ্যে স্বপ্ন আছে এবং আমাদের আরো স্বপ্ন আছে। সেই স্বপ্ন যাতে পূরণ করতে পারি সেই প্রত্যাশা করি। আদালতে ড. ইউনূসসহ এ মামলায় অন্য বিবাদী গ্রামীণ টেলিকমের এমডি আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো: শাহজাহান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া দুটি দেশের কূটনীতিকরাও শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এদিন বেলা পৌনে ১১টায় আপিল শ্রম ট্রাইব্যুনালে আসেন ড. ইউনূস। এরপর বেলা ১১টায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা আপিল নিষ্পত্তি পর্যন্ত জামিন আবেদন করছি। আইনের বিধান অনুযায়ী আপিল নিষ্পত্তি পর্যন্ত জামিন দেয়া হয়। কিন্তু শুধু এই মামলায় একমাস করে জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। এখানে একজন হুইল চেয়ারে আদালতে এসেছেন। আরেকজন স্ট্রোকের রোগী। এখানে আপিল নিষ্পত্তি পর্যন্ত জামিন না দিয়ে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে।
এরপর তিনি এই মামলার বিষয়ে হাইকোর্টের একটি রায় উল্লেখ করে বলেন, হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় না পাওয়া পর্যন্ত আমরা আপিল শুনানি মুলতবি রাখার আবেদন করছি। এরপর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, তিনি বারবার বলছেন, তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। কিভাবে হয়রানি করা হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। তারা আপিল শুনানি মুলতবি চাচ্ছেন এ বিষয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। তবে আপিল নিষ্পত্তি পর্যন্ত জামিনের বিষয়ে আপত্তি আছে।

এরপর আদালত ২৩ মে পর্যন্ত ড. ইউনূসসহ চারজনের জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করেন। সেই সাথে আগামী ২৩ মে আপিলের শুনানির দিন ধার্য করে আদেশ দেন। এর আগে গত ৩ মার্চ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্য আসামিদের জামিনের মেয়াদ ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ান শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। একই সাথে খালাস চেয়ে ড. ইউনূসসহ অন্যদের আপিল শুনানির জন্য রাখা হয়।
গত ২৮ জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলায় ছয় মাসের কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন আদালত। একই সাথে ড. ইউনূসসহ চারজনকে ৩ মার্চ পর্যন্ত জামিন দেন। এ ছাড়া ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতের দেয়া রায়ের কার্যকারিতাও স্থগিত করেন আদালত।
আইনজীবীরা জানান, শ্রম আদালতের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালাস ও জামিন চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে ২৫টি যুক্তি তুলে ধরে ড. ইউনূসসহ চারজন আপিল আবেদন করেছেন। আবেদনে বলা হয়েছে, আইনের ৩০৩(৩)(ঙ) ধারায় ছয় মাসের সাজা ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অথচ আইনের এই ধারায় ভিন্ন অপরাধের কথা বলা হয়েছে। আর এ মামলার বাদি বলেছেন, ৩০৩(৩)(ঙ) ধারা মামলার আর্জিতে উল্লেখ করেননি। আর ৩০৩(৩)(ঙ) ধারা যেখানে মামলার আর্জিতে নেই। আইনের সেই ধারায় ড. ইউনূসসহ চারজনকে ৬ মাসের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
গত ১১ জানুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে দেয়া কারাদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানার স্বাক্ষরের পর ৮৪ পৃষ্ঠার রায় প্রকাশ করা হয়।
গত ১ জানুয়ারি ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানার আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পর ড. ইউনূসসহ অন্য তিনজনের পক্ষে আপিলের শর্তে জামিন আবেদন করা হয়। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে পাঁচ হাজার টাকা বন্ডে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে এক মাসের জন্য জামিন দেন।
রায়ে বলা হয়, আসামিরা শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ৪(৭) (৮), ১১৭, ২৩৪ এর বিধান লঙ্ঘন করে আইনের ৩০৩(৩)(ঙ) ও ৩০৭ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তা প্রমাণিত হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। এ অবস্থায় আসামি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনূস, চেয়ারম্যান, আশরাফুল হাসান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নুরজাহান বেগম, পরিচালক, মো: শাহজাহান, পরিচালক গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ৪(৭) (৮), ১১৭, ২৩৪ ও বিধি ১০৭ লঙ্ঘনের জন্য ৩০৩(৩) (ঙ) ও ৩০৭ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের ওই আইনের ৩০৩ (৩) (ঙ) ধারার অপরাধে ৬ (ছয়) মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫,০০০ (পাঁচ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৩০৭ ধারার অপরাধে ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে অতিরিক্ত ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হলো।

 


আরো সংবাদ



premium cement