৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


যুদ্ধ বিস্তারের শঙ্কা বাড়ছে মধ্যপ্রাচ্যে

-

- প্রতিশোধমূলক হামলায় অংশ নেবে না যুক্তরাষ্ট্র
- হামলার ৭২ ঘণ্টা আগেই সতর্কবার্তা দেয়ার দাবি ইরানের
- গোয়েন্দা কেন্দ্র ও বিমানঘাঁটি ধ্বংসের দাবি ইরানের
- খাদের কিনারে মধ্যপ্রাচ্য : গুতেরেস

মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে আশঙ্কায় ইসরাইলকে সংযত থাকার আহ্বান বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র সরাসরিই জানিয়ে দিয়েছে, তারা ইরানের বিরুদ্ধে ‘প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপে’ অংশ নেবে না। এ অবস্থায় ইরানের হামলার বিরুদ্ধে ইসরাইল কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে চলেছে, তা নিয়ে বাড়তে থাকা উদ্বেগের মধ্যে ইসরাইলি মন্ত্রী বেনি গান্তজ বলেছেন, তার দেশ সঠিক সময়ে ইরানের কাছ থেকে ‘সঠিক মূল্য উসুল’ করবে।
গত শনিবার রাতে ইসরাইলকে লক্ষ্য করে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। এ মাসের প্রথম দিন সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে ড্রোন হামলায় ইরানের শীর্ষ পর্যায়ের দুইজন জেনারেলসহ কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা নিহত হওয়ার জেরে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে তেহরান ইসরাইলে এই হামলা চালিয়েছে। যদিও ইসরাইল সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে তারাই যে ওই হামলা চালিয়েছে সেটা ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়।
শনিবার রাতে ইরানের ছোড়া ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের ৯৯ শতাংশ ইসরাইলের ভূখণ্ডে পৌঁছানোর আগেই ধ্বংস করা হয়। যদিও এ হামলায় ছোট্ট একটি মেয়ে গুরুতর আহত হয়েছে এবং দুই চিরশত্রু দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র,ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জর্দানসহ মিত্র দেশগুলো ইসরাইলকে তাদের প্রতিরক্ষায় সহায়তা করেছে।

হামলার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র মিত্র ইসরাইলের পাশে ‘দৃঢ়ভাবে অবস্থানের প্রতিশ্রুতিতে অটল’ থাকার কথা বলেছে। তবে সাথে এ-ও বলেছে, তারা ইরানের এই হামলার জবাব দিতে গ্রহণ করা ইসরাইলি পদক্ষেপে অংশ নেবে না এবং তারা প্রতিশোধমূলক কোনো হামলায় ‘সমর্থন দেবে না’। ইসরাইল সফলভাবে নিজেদের প্রতিরক্ষা করতে পেয়েছে এবং এটাই ইরানের বিরুদ্ধে তাদের জয় বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির একজন শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, তার দেশের এখন উচিত হবে ‘খুব সাবধানে’ পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
তিনি বলেন, ‘কখন প্রতিশোধ নেয়া হবে সেটাই একমাত্র বড় প্রশ্ন নয়। বরং ইসরাইল কোনো পদক্ষেপ বেছে নেবে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। এটা এখন তাদের সিদ্ধান্ত।’ ইরানের হামলার পর ইসরাইলের পাঁচ সদস্যের যুদ্ধ মন্ত্রিসভা, যাদের মধ্যে গান্তজও রয়েছে, রোববার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে বৈঠক করেছেন। তবে বৈঠকে কী ধরনের এবং কখন প্রতিক্রিয়া জানানো হবে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে খবর প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এ দিকে ইরান রোববার হুঁশিয়ার করে বলেছে, যদি ইসরাইলে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পর প্রতিশোধমূলক কোনো পাল্টা হামলা করে তবে তাদের ‘আরো বড় জবাব’ দেয়া হবে। আর ইসরাইল বলেছে, ‘অভিযান এখনো শেষ হয়নি।’
সতর্কবার্তা দেয়ার দাবি ইরানের : অন্য দিকে ইসরাইলে হামলার ৭২ ঘণ্টা আগে প্রতিবেশী কয়েকটি দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্কবার্তা দেয়ার দাবি করেছে ইরান। তুরস্ক, জর্দান এবং ইরাকের কর্মকর্তারা ওই দাবির পক্ষে কথা বললেও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা তা অস্বীকার করেছেন। রোববার তারা বলেছেন, তেহরান হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে কোনো সতর্কবার্তা দেয়নি এবং তাদের লক্ষ্য ছিল হামলার মাধ্যমে ইসরাইলের ‘মারাত্মক ক্ষতিসাধন’।
হামলার আগে সতর্কবার্তা পাঠানোর বিষয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান রোববার বলেছেন, ইরান প্রতিবেশী দেশ এবং ইসরাইলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকে ৭২ ঘণ্টা আগে নোটিশ পাঠিয়ে ইসরাইলে হামলা চালাতে যাওয়ার কথা বলেছে। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, ইসরাইলে হামলার আগে তারা ওয়াশিংটন এবং তেহরান উভয়ের সাথেই কথা বলেছেন। হামলার প্রতিক্রিয়া আনুপাতিক হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে তারা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বার্তা প্রেরণ করেছে বলেও জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া বিবৃতি অস্বীকার করে বলেন, সুইজারল্যান্ডের মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ওয়াশিংটন ইরানের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করলেও ৭২ ঘণ্টা আগে ইসরাইলে হামলার বিষয়ে তারা কোনো নোটিশ পায়নি। তিনি বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণরূপে অসত্য। তারা কোনো নোটিশ দেয়নি। এমনকি তারা এমন কোনো আভাসও দেয়নি যে, ‘এখানে হামলা হবে, তাই সেই স্থান খালি করে ফেলুন’।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা আগাম সতর্কবার্তা পাওয়ার কথা অস্বীকার করলেও তারা শুক্রবার ও শনিবার বেশ কয়েকবারই বলেছেন, ইরান যেকোনো সময় হামলা করতে চলেছে, এমনটাই তারা প্রত্যাশা করছেন। এমনকি প্রেসিডেন্ট বাইডেন সরাসরি তেহরানকে হামলা ‘না করতেও’ বলেছেন। ইরাক, তুরস্ক এবং জর্ডানের কর্মকর্তারা বলেছেন, গত সপ্তাহেই ইরান তাদের প্রত্যেককে হামলার বিষয়ে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে। হামলার ধরন নিয়ে বেশ কিছু বিস্তারিত তথ্যও দিয়েছে।
গোয়েন্দা কেন্দ্র ও বিমানঘাঁটি ধ্বংস : ইসরাইলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে একটি গোয়েন্দা কেন্দ্র ও একটি বিমানঘাঁটি ধ্বংসের দাবি করেছে ইরান। দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ বাকেরি এ দাবি করেছেন। রোববার ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত একটি টেলিভিশন চ্যানেলে দেয়ার ভাষণে তিনি এই দাবি করেন বলে জানিয়েছে এএফপি। রোববার ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে জেনারেল বাঘেরি বলেছেন, ‘অপারেশন ট্রুথফুল প্রমিজ...গতকাল (শনিবার) রাত থেকে আজ (রোববার) সকাল পর্যন্ত সফলভাবে শেষ হয়েছে এবং এর সব লক্ষ্য অর্জন করেছে।’

এ সময় জেনারেল বাকেরি আরো জানিয়েছেন, ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলা ইসরাইলের একটি গোয়েন্দা কেন্দ্র ও একটি বিমানঘাঁটিকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছিল। তেহরানের দাবি, এই ঘাঁটিগুলো থেকেই গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে ও ইসরাইলি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালানো হয়েছিল। ইরানের এই শীর্ষ জেনারেল বলেন, ‘এই দুটি কেন্দ্রই উল্লেখযোগ্যভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।’ তবে ইসরাইলের দাবি, তারা ইরান ও এর প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোর উৎক্ষেপণ ৯৯ শতাংশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে এবং এতে সামান্যই ক্ষতি হয়েছে।
এ দিকে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি ইরানের এই অভিযানকে ‘সীমিত পরিসরের অপারেশন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই সীমিত পরিসরের অপারেশনে ইসরাইলের সেসব অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল, যেগুলো আমাদের দূতাবাস আক্রমণে ব্যবহার করা হয়েছিল।’ জেনারেল সালামি বলেন, ‘এই অপারেশন প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি সফল হয়েছে।’ এ সময় তিনি ইসরাইলকে যেকোনো ধরনের পাল্টা আক্রমণের বিষয়েও সতর্ক করে দেন।

৮৬ ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস : নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সরাসরি ইসরাইলে হামলা চালিয়েছে ইরান। আকাশপথে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে চালানো এই হামলা অনেকাংশেই প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে ইসরাইল। আর এই কাজে ইসরাইলকে বেশ ভালোই সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হামলার সময় ইরান ও ইয়েমেনের ৮৬টি ড্রোন এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে দিয়েছে মার্কিন বাহিনী।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) গতকাল সোমবার বলেছে, ইউএস ইউরোপীয় কমান্ড ডেস্ট্রয়ারদের সমর্থন নিয়ে মার্কিন বাহিনী শনিবার এবং রোববার ইরান ও ইয়েমেন থেকে ইসরাইলকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করা ৮০টিরও বেশি একমুখী আক্রমণকারী ড্রোন এবং অন্তত ছয়টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেয়া এক পোস্টে সেন্টকম বলেছে, এর মধ্যে লঞ্চার গাড়িতে থাকা একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুথিদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় উৎক্ষেপণের আগে মাটিতেই ধ্বংস করে দেয়া সাতটি ইউএভি-ও রয়েছে।

নিষেধাজ্ঞা চায় ইসরাইল : মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাময় পরিস্থিতি শান্ত করতে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠকে বসেছিল সদস্য দেশগুলো। সেই বৈঠকে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে। বলা যায়, একপ্রকার ধমকাধমকিই করেছে দুই দেশ। একই বৈঠকে ইরানের ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি করেছে ইসরাইল।
সৌদি সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের খবরে বলা হয়েছে, ইরান বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সামরিক সঙ্ঘাতে জড়ানোর কোনো ইচ্ছাই তেহরানের নেই। তবে ওয়াশিংটন যদি ইরানের জনগণ ও এর স্বার্থের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালায় তবে ইরানের আত্মরক্ষার যে, স্বতঃসিদ্ধ অধিকার আছে তার প্রয়োগ করবে এবং উপযুক্ত জবাব দেবে।
জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি আমির সাইয়িদ ইরাভানি স্থানীয় সময় গত রোববার অনুষ্ঠিত বৈঠকে বলেন, ইসরাইলের ওপর তার দেশের আক্রমণ ছিল ‘সুনির্দিষ্ট এবং এই হামলা কেবল সামরিক লক্ষ্যবস্তুকে লক্ষ্য করে ও সতর্কতার সাথে চালানো হয়েছিল। যাতে এই অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কা কমানো যায় ও বেসামরিক ক্ষতি রোধ করা যায়।’

গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে বিমান হামলা হয়। এতে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) আল-কুদস ফোর্সের দুই শীর্ষ জেনারেলসহ সব মিলিয়ে ১১ জন নিহত হন। ইসরাইল আনুষ্ঠানিকভাবে এই হামলার দায় স্বীকার না করলেও ইরান ইসরাইলকেই এর জন্য দায়ী করে আসছে। জবাবে গত শনিবার ইসরাইলকে লক্ষ্য করে একসঙ্গে বেশ কয়েকটি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। ইরান দাবি করেছে, তারা শনিবার যে হামলা চালিয়েছে তা জাতিসঙ্ঘ সনদের ৫১-অনুচ্ছেদের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এই অনুচ্ছেদ অনুসারে, জাতিসঙ্ঘের সদস্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র হামলা হলে নিরাপত্তা পরিষদ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত ব্যক্তিগত বা সম্মিলিত আত্মরক্ষার অন্তর্নিহিত অধিকার সংশ্লিষ্ট দেশের আছে। এ দিকে জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট উড হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘ইরান বা তার মিত্ররা (প্রক্সি গোষ্ঠীগুলো) যদি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয় বা ইসরাইলের বিরুদ্ধে আরো পদক্ষেপ নেয় তাহলে ছাড় দেয়া হবে না।’ তিনি বলেন, ‘ইরানের বেপরোয়া পদক্ষেপ কেবল ইসরাইলিদের জন্যই হুমকি সৃষ্টি করেনি একই সাথে জর্দান ও ইরাকসহ এ অঞ্চলের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর জন্যও হুমকি সৃষ্টি করেছে।’
মার্কিন এই কূটনীতিক দাবি করেন, ইরানের এই হামলার বিষয়টি যেন বিনা প্রশ্নে ছেড়ে দেয়া না হয় তা নিশ্চিত করতে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের বাধ্যবাধকতা আছে। তিনি দাবি করেন, বহুদিন ধরে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি হিজবুল্লাহকে অস্ত্র দিয়ে, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওপর হুথি গোষ্ঠীকে সশস্ত্র সহায়তা দিয়ে স্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক আইনি বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করেছে।

খাদের কিনারে মধ্যপ্রাচ্য : গুতেরেস
মধ্যপ্রাচ্য খাদের কিনারে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এ অঞ্চলের মানুষ একটি পূর্ণমাত্রার ধ্বংসাত্মক সঙ্ঘাতের মুখোমুখি। তারা যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এখনই সময় তাদের খাদের কিনার থেকে ফিরিয়ে আনার। আর এ দায়িত্ব যৌথভাবে সবার। জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি সভার শুরুতে দেয়া ভাষণে গুতেরেস এসব কথা বলেন।
স্থানীয় সময় রোববার বিকেলে ইসরাইলের অনুরোধে ইরানের হামলা নিয়ে এ সভা শুরু হয়। এতে স্ব স্ব দেশের অবস্থানের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেন জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত ইসরাইল ও ইরানের রাষ্ট্রদূতরা। গুতেরেস তার বক্তব্যে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন দিকের বড় বড় সামরিক পক্ষ সঙ্ঘাতে জড়িয়ে যেতে পারে, এমন যে কোনো পদক্ষেপ উপেক্ষা করা জরুরি। ইতোমধ্যে এখানকার বেসামরিক নাগরিকরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তাদের (গাজাবাসী) চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। তাই এখনই সময়, সবাইকে যুদ্ধের কিনার থেকে ফিরে আনার।
গুতেরেস বলেন, (ইরান-ইসরাইল-গাজা) সঙ্ঘাত যাতে আবার উসকে না যায়, তা প্রতিরোধে সবার দায়িত্ব রয়েছে। সবাইকে সক্রিয়ভাবে এই দায়িত্বপালনের সাথে যুক্ত হতে হবে। সবার যৌথ অংশগ্রহণে এখনই গাজায় যুদ্ধ বিরতি প্রয়োজন উল্লেখ করে গুতেরেস বলেন, সেখানে মানবিক অবস্থা বিপর্যস্ত। এজন্য সব বন্দীকে নিঃশর্ত মুক্তি ও বাধাহীনভাবে ত্রাণ তৎপরতা চালাতে দেয়া দরকার। গুতেরেস তার বক্তব্যে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে সঙ্ঘাত বন্ধ ও লোহিত সাগরে নৌ-যান চলাচল আবার স্বাভাবিক করা নিয়েও কথা বলেন।
বিশ্বে শান্তি স্থাপনে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর যৌথ দায়িত্ব থাকার কথা উল্লেখ করে গুতেরেস আরো বলেন, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি-নিরাপত্তার অবস্থা প্রতি ঘণ্টায় অবনতি হচ্ছে। এ অঞ্চলের (মধ্যপ্রাচ্য) বা বিশ্বের কেউ আর যুদ্ধ চায় না। জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব তার বক্তব্যে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে আঞ্চলিক অখণ্ডতার ওপর আক্রমণে জাতিসঙ্ঘের সনদের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেন।


আরো সংবাদ



premium cement