৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


উর্ধ্বমুখী সুদহারে শিল্পোদ্যোক্তা ও আবাসন গ্রাহকরা দিশেহারা

৯ মাসের ব্যবধানে সুদহার বেড়েছে ৫ বেসিস পয়েন্ট
-

ব্যাংক ঋণের ঊর্ধ্বমুখী সুদহারে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন শিল্পোদ্যোক্তা ও আবাসন শিল্পের গ্রাহকরা। মাত্র ৯ মাসের ব্যবধানে তা ৫ থেকে সাড়ে ৬ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে গেছে। এক দিকে নানাবিধ কারণে আয় কমে গেছে। অপর দিকে প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে ব্যয়। একই সাথে বেড়েছে ঋণের কিস্তির পরিমাণ। এমনি পরিস্থিতিতে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতার কমে গেছে শিল্প প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা ও ব্যক্তি পর্যায়ে গৃহনির্মাণ উদ্যোক্তাদের। ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ৯ মাস আগের সুদেই ঋণের কিস্তি পরিশোধের সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বর্ধিত সুদহারের কিস্তি মেয়াদ শেষে পরিশোধ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এর ফলে গ্রাহকদের আপাতত ঋণের কিস্তি বাড়বে না। আগের হারেই ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন।
জানা গেছে, গত বছরের জুন মাসের আগে সবঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণের সুদহার ছিল ৯ শতাংশ। কিন্তু আন্তর্জাতিক মুদ্রাতহবিল আইএএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে ব্যাংক ঋণের সুদহারের একক হার তুলে দেয়া হয়। নতুন মানদণ্ড চালু করা হয়। ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের গড় সুদহার যেটা হবে তাই সুদহার নির্ধারণের প্রাথমিক মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়। আর এ মানদণ্ডকে সংক্ষেপে স্মার্ট বলা হয়। এই স্মার্টের সাথে সাড়ে তিন শতাংশ সুদহার যুক্ত করে নতুন সুদহার নির্ধারণ করা হয়। ওই সময় স্মার্ট ছিল ৭ শতাংশ। এর সাথে সাড়ে তিন শতাংশ যুক্ত করে হয় সাড়ে দশ শতাংশ। কিন্তু এ স্মার্টের হার দিন দিন বাড়তে থাকে। যেমন গহত অক্টোবরে ছিল ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ, নভেম্বরে তা বেড়ে হয় ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। আর ডিসেম্বরে তা আরো বেড়ে হয় ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। এর পরের পরের তিন মাসে তা অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে। যেমন জানুয়ারিতে ৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং সর্বশেষ গত মার্চে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ উঠে যায়। এর সাথে ৩ শতাংশ যুক্ত করলে হয় ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ, আর ভোক্তা ঋণের ক্ষেত্রে তা আরো বেড়ে হয় প্রায় ১৫ শতাংশ। অথচ গত বছরের জুনের আগে ছিল ৯ শতাংশ।

ব্যাংক ঋণের সুদহার অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মেয়াদি ঋণের উদ্যোক্তা ও আবাসন খাত বিশেষ করে ব্যক্তি পর্যায়ে গৃহনির্মাণ গ্রাহকরা। এক দিকে ব্যবসা-বাণিজ্য মন্দা, ডলার সঙ্কট ও দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো সহজেই ব্যাংকের মাধ্যমে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি খোলা যাচ্ছে না। এতে শিল্পের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে গেছে কোনো কোনো খাতের। অপর দিকে সবধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ চাকরিজীবীরা বিশেষ করে যারা ঋণ করে বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনেছেন তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এমন একজন গ্রাহক জানিয়েছেন, তিনি ব্যাংক থেকে ঋণ করে ছোট একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। মাসে কিস্তি আসত ২৫ হাজার টাকা। ৯ মাসের ব্যবধানে তা প্রায় ৩০ হাজার টাকায় উন্নীত হয়েছে। এমনিতেই সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে, এরওপর ঋণের কিস্তি বেড়ে যাওয়ায় তিনি ঠিকমতো কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না। আবার কিস্তি পরিশোধ করলে সংসারের অন্য ব্যয় মেটাতে পারছেন না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় এ দুই গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা কমে গেছে। এমনি পরিস্থিতিতে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা ধরে রাখার জন্য গত বছরের ১ জুলাইয়ের আগে মেয়াদি ঋণ ও গৃহঋণের যে কিস্তি ছিল তাই পরিশোধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে গত ৩১ মার্চের ঋণস্থিতি বিবেচনায় নিতে হবে। সুদহার বাড়ার কারণে যে পরিমাণ অর্থ বাড়তি হবে তা ব্লকড অ্যাকাউন্টে রাখতে হবে। ঋণের কিস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার বর্ধিত অংশ সক্ষমতা অনুযায়ী পরবর্তীতে পরিশোধ করতে হবে। তবে বর্ধিত অংশ আদায় না হওয়ার আগে তা আয় খাতে নিতে পারবে না ব্যাংক। তবে কোনো ঋণখেলাপির জন্য এ সুবিধা প্রযোজ্য হবে না। এ নির্দেশনা পরিপালনের জন্য ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর জন্য এক সার্কুলার জারি করা হয়েছে। এর ফলে গ্রাহকরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement