৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সারা দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত

-


যথাযোগ্য মর্যাদা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্যদিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ঈদের নামাজ আদায়ের মধ্যদিয়ে পালন করেছেন অন্যতম প্রধান এ ধর্মীয় উৎসব।
জাতীয় ঈদগাহ, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ সারা দেশের ঈদগাহ ও মসজিদগুলোতে খতিব ও পেশ ইমামরা ঈদ জামাত-পূর্ব বয়ানে মাহে রমজান এবং পরবর্তী ১১ মাসের আমল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরেন। এদিন সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানী ঢাকায় হাইকোর্টসংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে প্রধান ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন, প্রধান বিচারপতি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, সংসদ সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতারা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ সর্বস্তরের মানুষ ঈদগাহ ময়দানে নামাজ আদায় করেন।
জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাতের ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন। নামাজ শেষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহসহ দেশ ও জাতির কল্যাণ, সুখশান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করা হয়।

রাজধানীতে দ্বিতীয় বৃহত্তম জামাত অনুষ্ঠিত হয় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। এবারো পাঁচটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় বায়তুল মোকাররমে। জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদুল ফিতরের জামাতের আয়োজন করা হয়। এখানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, জাতীয় সংসদের হুইপ, সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকার মুসল্লিরা জামাতে অংশ নেন।
এদিকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় দামপাড়া জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে। প্রতি বছরের মতো এবারো কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ১০টায়। এছাড়া এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদগাহ দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রখর রোদ আর তাপপ্রবাহেও ময়দানে মুসল্লিদের ঢল নামে। এবারো একসাথে ছয় লাখ মুসল্লি একসাথে জামাতে নামাজ আদায় করেছেন বলে জানান আয়োজকরা। নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর অব্যাহত শান্তি কামনা করে মুনাজাত করা হয়।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সব কারাগার, সরকারি হাসপাতাল, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, শিশুসদন, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, সেফ হোমস, দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্র এবং শিশু ও মাতৃসদনে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। ঈদ উৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিনোদনমূলক বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করছে।
এছাড়াও ঈদের দিন সকাল থেকেই জাতীয় চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, চন্দ্রিমা উদ্যান, লালবাগের কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, হাতির ঝিল, শিশু পার্কসহ সব বিনোদন কেন্দ্রগুলো আবাল বৃদ্ধবনিতার পদচারণায় মুখরিত ছিল। রোদের খরতাপ ঈদ আনন্দে বাধা হতে পারেনি।

চট্টগ্রামে ঈদের জামাতে ফিলিস্তিনিদের জন্য দোয়া কামনা
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রধান দু’টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে জমিয়তুল ফালাহ্ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণ ও এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়ামে। এতে দেশের শান্তি ও সম্প্রীতি কামনায় এবং ফিলিস্তিনসহ নিপীড়িত-নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য মুনাজাত করা হয়। নামাজ শেষে পরস্পরের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন মুসল্লিরা। সকাল ৮টায় জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ ও মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জামাতে ইমামতি করেন জমিয়তুল ফালাহ্ মসজিদের খতিব আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দীন আল কাদেরী। সাধারণ মুসল্লিদের পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, বিএনপি নেতা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, আবু সুফিয়ান, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী ও সোলায়মান আলম শেঠসহ রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতারা নামাজ আদায় করেন। দ্বিতীয় জামাত সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের পেশ ইমাম।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত কমিটির আয়োজনে সকাল ৯টায় এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়ামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ইমামতি করেন বিশিষ্ট ইসলামিক ব্যক্তিত্ব বায়তুশ শরফ দাখিল মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল সাইয়্যেদ ড. আবু নোমান। এতে প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে লালদীঘি শাহি জামে মসজিদ, হজরত শেখ ফরিদ রহ. চশমা ঈদগাহ মসজিদ, সুগন্ধা আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, চকবাজার সিটি করপোরেশন জামে মসজিদ, জহুর হকার্স মার্কেট জামে মসজিদ, দক্ষিণ খুলশী (ভিআইপি) আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, আরেফিন নগর কেন্দ্রীয় কবরস্থান জামে মসজিদ, সাগরিকা গরুবাজার জামে মসজিদ ও মা আয়েশা সিদ্দিকা চসিক জামে মসজিদসহ ৪১টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে একটি করে প্রধান ঈদ জামাত মসজিদ ও ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনায় বরিশালের হেমায়েত উদ্দিন কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদ উল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত এ জামাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
স্টিমারঘাট জামে মসজিদের সানি ইমাম হাফেজ মাওলানা শিহাব উদ্দিন নামাজ আদায় শেষে দোয়া মোনাজাত করেন। দোয়া শেষে মুসল্লিরা কোলাকুলি করেন। এর আগে খুতবা পাঠ করেন কেন্দ্রীয় কসাই জামে মসজিদের খতিব ইমাম কাজী মাওলানা আবদুল মান্নান।

অপর দিকে বরিশালের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের চরমোনাই দরবার শরিফ প্রাঙ্গণ ময়দানে সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় বৃহৎ জামাত অনুষ্ঠিত হয় ঝালকাঠির নেছারাবাদ এনএফ কামিল মাদরাসা ময়দানে। এ ছাড়া বৃহৎ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে পিরোজপুরের নেছারাবাদ ছারছিনা দরবার শরিফ ও পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ মরহুম হযরত ইয়ারউদ্দিন খলিফার (র.) দরবার শরিফ প্রাঙ্গণ ও বরিশালের উজিরপুরের গুঠিয়া বায়তুল আমান জামে মসজিদে। এ দিকে নগরীর বৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে মডেল মসজিদ, নূরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ, মুসলিম কবরস্থানের মসজিদ, বগুড়া রোড মসজিদসহ একাধিক মসজিদে। যেখানে ফিলিস্তিনের মুসলমানদের জন্য শান্তি কামনা করার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য দোয়া করা হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement