১৮ মে ২০২৪, ০৪ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫
`


প্রধানমন্ত্রীর সাথে উজরা জেয়ার বৈঠক

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র

-


নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার এক বৈঠকে (২১ সেপ্টেম্বর) আবারো বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়।
ওই বৈঠকের পর উজরা জেয়া নিজেই এক্সে (সাবেক টুইটার) সচিত্র একটি পোস্ট দিয়েছেন। এতে তিনি লিখেছেন, ‘রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বাংলাদেশ, কানাডা, গাম্বিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের একটি সাইড ইভেন্টের আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে আবারো যুক্ত হতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, অংশীদারিত্বের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছি এবং ৯ লাখ ৬০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে উদারতার সাথে আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছি।’

এ দিকে বৈঠক নিয়ে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর সাথে উজরা জেয়ার বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুসহ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, শান্তিপূর্ণভাবে তা বাস্তবায়ন হবে বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র।
উল্লেখ্য, গত ১১ জুলাই বাংলাদেশ সফরে যান উজরা। ওই সফরেও সরকারের বিভিন্ন মহলের সাথে তিনি আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেন। জোর দেন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর।

সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ (ইউএইচসি) নিশ্চিত করতে সহযোগিতার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার জন্য সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ (ইউএইচসি) নিশ্চিত করতে পাঁচটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরের সম্মেলন কক্ষে ‘ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ (ইউএইচসি)’ বিষয়ক ইউএনজিএ উচ্চস্তরের বৈঠকে ভাষণদান কালে এ আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, আমি আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সবার জন্য সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ নিশ্চিত করতে পাঁচটি ক্ষেত্রে আমাদের সমর্থন করার জন্য অনুরোধ করছি। ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে : প্রথমত. শিশু, মা ও কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যের জন্য উন্নয়ন সহায়তা বজায় রাখা এবং অভিবাসীদের স্বাস্থ্য এবং জলবায়ু-স্বাস্থ্য চক্র মোকাবেলা করা। দ্বিতীয়ত. সবার জন্য স্বাস্থ্য আইডিসহ একটি আন্তঃচালিত, ডেটানির্ভর স্বাস্থ্য তথ্য সিস্টেম বিকাশে দক্ষতা বিনিময় করা। তৃতীয়ত. আমাদের উপযোগী একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্যবীমা স্কিম বিকাশে সহায়তা করা, চতুর্থত. দ্রুত বর্ধনশীল স্বাস্থ্য-প্রযুক্তি স্টার্ট আপসহ স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং পঞ্চমত. জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য পেটেন্ট প্রকাশ এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরের ‘ট্রিপ’ (ট্রাফিক রেসপন্স অ্যান্ড ইনফর্মেশন পার্টনারশিপ) বাধ্যবাধকতা মেনে চলা।

তিনি বলেন, আমাদের প্রজন্ম ইউএইচসি সমুন্বত করে ইতিহাস পরিবর্তন করতে পারে। আসুন আমরা সকলে হাতে হাত মিলিয়ে তা সম্ভব করে তুলি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী অথচ অর্জনযোগ্য এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সবার জন্য স্বাস্থ্যেসেবার সুযোগ নিশ্চিত করা আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বিশেষায়িত মেডিক্যাল হাসপাতাল পর্যন্ত দেশব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা তৃণমূলে বেসরকারি অংশীদারদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ লভ্যাংশ দিয়েছে, কারণ, বাংলাদেশ প্রতি এক লাখ জন্মে মাতৃমৃত্যুর হার ১৬৩-এ নামিয়ে এনেছে। এগুলো ছাড়াও প্রতি হাজার জন্মে নবজাতকের মৃত্যুহার ১৫ এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী মৃত্যু হার ২৮-এ নেমে এসেছে। তিনি বলেন, শিশু টিকাদানের ওপর আমাদের গুরুত্ব সার্বজনীন কভারেজ অর্জন করেছে। আমাদের গড় আয়ু এখন ৭৩ বছরের কাছাকাছি।
তিনি উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশ কোভিড-১৯ মহামারী ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের অন্যতম সেরা দেশ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। আমরা এখন ডেঙ্গু মোকাবেলায় হাই অ্যালার্টে কাজ করছি। আমরা ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের জন্য উন্নত চিকিৎসা চালু করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মানবিক ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে চিকিৎসাসেবা প্রদানের মান প্রতিষ্ঠা করেছে। এ সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, এমপি এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার উপস্থিত ছিলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্রিফিং
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ৭৮তম জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ফাঁকে (২১ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর নানা বৈঠক প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের বেসামরিক, নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল উজরা জেয়া জাতিসঙ্ঘের ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর সাথে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করা। ওই বৈঠকে তারা বিভিন্ন বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সমস্যা নিয়েও আলোচনা হয়।

বৈঠকে উজরা জেয়া প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তারা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের জন্য ১১৬ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জেয়া রোহিঙ্গাদের উন্নত জীবিকা নিশ্চিত করতে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর জোর দেন। যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো শুরু করার আগে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা উচিত, অন্যথায় এই অঞ্চল নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়বে। কারণ রোহিঙ্গারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। যার মধ্যে রয়েছে হত্যা, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান ও মাদক ব্যবসা। রোহিঙ্গারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে কারণ, তাদের প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হচ্ছে এবং তারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে এবং তারা সেখানে কোনো ভবিষ্যৎ অনুভব করছে না। শেখ হাসিনা গাম্বিয়ার আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) দায়ের করা মামলায় আন্তর্জাতিক সমর্থনও চেয়েছেন। সাতটি দেশ ফ্রান্স, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক ও মালদ্বীপ মামলার প্রতি সম্মতি দিয়েছে।
বৈঠকে তারা বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন নিয়েও আলোচনা করেন। উজরা জেয়া বলেন, তারা বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অহিংস নির্বাচন চান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারাও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চান। জনগণের সমর্থন ছাড়া কোনো সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারে না।
মোমেন বলেন, সহিংসতামুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমরা জনগণের ভোটে বিশ্বাস করি। জনগণের ভোট ছাড়া কেউ ক্ষমতায় আসতে পারে না। ভোট কারচুপির মাধ্যমে কেউ ক্ষমতায় এলে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, দেশের সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচন হবে। আগামী সাধারণ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠানোর প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, আগামী সাধারণ নির্বাচনে আমরা বিদেশী পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানাই।
তিনি বলেন, আমরা বিদেশীদের কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে দেশ চালাতে চাই না।
মোমেন জানান, গণহত্যা প্রতিরোধে জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূত অ্যালিস ওয়াইরিমু এনদেরিতুও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যাকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে জাতিসঙ্ঘের প্রতি আহ্বান জানান। এ ছাড়া তিনি মিয়ানমারে গণহত্যার বিচার অব্যাহত রাখতে জাতিসঙ্ঘের সহযোগিতা চেয়েছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
পানচাষীদের পরিশ্রমের ফসল জিআই স্বীকৃতি : প্রতিমন্ত্রী বগুড়ায় অবৈধ মজুদকৃত ১ লাখ ডিম উদ্ধার তথ্যের জন্য সাংবাদিকরা শতবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যেতে পারেন : ডেপুটি গভর্নর ইসরাইলি হামলায় ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত আফগানিস্তানে গুলিতে ৩ স্প্যানিশ ও ৩ আফগান নিহত বিভিন্ন অপরাধে সাতজনের ফাঁসি কার্যকর করল ইরান কিরগিস্তানে আতঙ্কে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা ‘প্রাচীন হিব্রুদের সাথে ইসরাইলি ইহুদিদের জেনেটিক সংযোগ নেই’ মিয়ানমারের স্বর্ণের খনিসমৃদ্ধ এলাকা দখলে নিলো বিদ্রোহীরা ধর্ষণ মামলায় জুজুৎসুর সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার সেকান্দর সাফিয়া ফাউন্ডেশনের ‘বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ বিষয়ক সেমিনার’ অনুষ্ঠিত

সকল