২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এলপি গ্যাস লাগামহীন

সরকারের মূল্য নির্দেশনা মানছে না কেউ
-

গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত তরল প্রাকৃতিক গ্যাস এলপিজির দাম লাগামহীন হয়ে পড়েছে। সরকারনির্ধারিত নতুন দামও মানছেন না ডিলাররা। প্রতি ১২ কেজির এলপি গ্যাসের মূল্য একসাথে ২৬৬ টাকা বা প্রায় ২২ শতাংশ বাড়িয়ে এক হাজার ৪৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এই দামে এখন আর এলপি গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। ১২ কেজি সিলিন্ডারের মূল্য স্থানভেদে এক হাজার ৮০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। অর্থাৎ নির্ধারিত দরের চেয়েও ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এক দিকে সরকার বাড়াচ্ছে, অপর দিকে ব্যবসায়ীরা তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন, এতে অসহায় হয়ে পড়েছেন গ্রাহকরা। তাদের বাধ্য হয়ে মেনে নেয়া ছাড়া যেন করার কিছুই নেই। রাজধানীতে এমনিভাবে চলছে এলপি গ্যাস নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড।

সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, তারা এখন কী করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না। কারণ, গত মাসে দুই দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। আবাসিকে গ্যাসের দাম না বাড়ালেও শিল্পে প্রায় ২০০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে ভোক্তাদের ওপর। শিল্পের উৎপাদনব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বেড়ে গেছে পণ্যের দাম। অপর দিকে অনেকেরই আয় কমে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো বেতনভাতা দিতে পারছে না। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে বেতনভাতা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এমনি পরিস্থিতিতে জীবনযাত্রার ব্যয় বহন করা এখন দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

গ্যাসসঙ্কটের কথা বলে ২০০৯ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আবাসিকে গ্যাসসংযোগ বন্ধ রয়েছে। নতুন সংযোগ না থাকায় গ্রাহকরা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন এলপি গ্যাসের ওপর। গত কয়েক মাস ধরে বলা চলে একটানা এলপি গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে। সর্বশেষ গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে একলাফে প্রতি ১২ লিটার এলপি গ্যাসের মূল্য ২৬৬ টাকা বা প্রায় ২২ শতাংশ বৃদ্ধি করে এক হাজার ৪৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এত বেশি দাম বাড়ানোর পরও এ মূল্য কার্যকর হচ্ছে না, বরং এ থেকে স্থানভেদে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে রাজধানীর একাধিক ডিলারের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, তারা এলপি গ্যাসের কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে কাক্সিক্ষত হারে গ্যাস কিনতে পারছেন না। এক গাড়ি এলপি গ্যাসের জন্য কোম্পানিগুলোর গেটের সামনে লাইনে ট্রাক দাঁড়িয়ে রাখতে হয় ৬ থেকে ৭ দিন। এই দিনগুলোতে ট্রাকভাড়া ডেমারেজ দিতে হচ্ছে। এতে গাড়িপ্রতি বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। আবার কোম্পানিগুলোও বেশি দাম রাখছে। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা মূল্যের ওপর। এতে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম এক হাজার ৭০০ টাকা থেকে কোনো কোনো স্থানে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে হচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নির্ধারিত মূল্যে সিলিন্ডার তো পাওয়া যাচ্ছেই না, কোথাও কোথাও কমে গেছে গ্যাসের সরবরাহও। সংশ্লিষ্ট খুচরা বিক্রেতা বলছেন তার কাছে গ্যাসই নেই। গ্রাহকরা বলছেন, কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে ব্যবসায়ীরা অসৎ প্রক্রিয়ায় সিলিন্ডার গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বনশ্রীর ইমরান আলম জানান, কিছুদিন আগে যখন সিলিন্ডারের দাম এক হাজার ২৩২ টাকা ছিল তখনো সেটি কিনতে ১৮০০ টাকায় নিয়েছে। কিন্তু তাদের করার কিছুই নেই। সালাম শেখ নামক এক বিক্রেতা জানান, তারা ইচ্ছে করে দাম বেশি রাখছেন না। কোম্পানির লোকদের কাছ থেকে তাদের কেনা পড়ছে বেশি দামে। তারা লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে পারেন না। এ কারণে বেশি দাম রাখছেন।

সংশ্লিষ্ট এক ব্যবসায়ী জানান, ডলার সঙ্কটের কারণে আগের মতো এলপি গ্যাস আমদানি করা যাচ্ছে না। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম। আবার ডলারের দাম বেড়ে গেছে। সবমিলেই আমদানিব্যয় বেশি পড়ছে। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্যই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement