২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রিজার্ভে চাপ কমাতে বৈদেশিক মুদ্রা তহবিল ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে

৭ মাসে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি সোয়া চার শতাংশ
-


রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ জন্য রফতানিকারকদের আপৎকালীন দায় মেটাতে গঠিত রফতানি উন্নয়ন তহবিল বা ইডিএফের আকার ছোট করা হচ্ছে। পাশাপাশি গতকাল এ তহবিল থেকে অর্থ ব্যবহারে সুদহার বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি ডলারের প্রবাহ বাড়াতে সেবা আয় দেশে আনার নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে গতকাল পৃথক দু’টি সার্কুলার জারি করা হয়েছে। অপর দিকে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করে এমন ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন কারেন্সি ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন বা বাফেদার পক্ষ থেকে রফতানিকারকদের ডলারের দাম এক টাকা বাড়ানো হয়েছে। আগে যেখানে ছিল ১০২ টাকা, গতকাল থেকে তা বাড়িয়ে ১০৩ টাকা করা হয়েছে।


গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারি করা সার্কুলারে বলা হয়েছে, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে রফতানি উন্নয়ন তহবিলের ঋণের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ৩ শতাংশ সুদে অর্থ দেবে। আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে হবে রফতানিকারকদের। এতদিন ইডিএফ থেকে ব্যাংকগুলো ২ দশমিক ৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে রফতানিকারকদের কাছে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করত। এ বিষয়ে এক সার্কুলার জারি করে ব্যাংকারদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে।


জানা গেছে, ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল করোনাভাইরাস মহামারীতে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রথমবারের মতো ইডিএফ ঋণের সুদের হার ২ শতাংশে নামিয়ে আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। তার আগে সুদের হার ছয় মাসের লন্ডন ইন্টার-ব্যাংক অফারড রেটের (লাইবর) সাথে দেড় শতাংশ যুক্ত করে নির্ধারণ করা হতো। সে ক্ষেত্রে লাইবর রেট প্রতিদিনই ওঠানামা করায় সুদের হার ৩ থেকে ৪ শতাংশের মতো পড়ে যেত। করোনার সময় বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ইডিএফ থেকে ঋণ নিলে লাইবর রেটের সাথে কোনো সম্পর্ক থাকবে না। সুদের হার হবে সরাসরি ২ শতাংশ। কিন্তুডলার সঙ্কট ও রিজার্ভের পরিমাণ কমে আসায় এ তহবিল থেকে ঋণ নিতে ব্যবসায়ীদেরকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। আর এ কারণে সুদহার বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি রফতানি খাতের উন্নয়নে দেশীয় মুদ্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ফান্ড গঠন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে ঋণ দিয়ে দেশের রফতানিকারকদের সহায়তা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ এই তহবিলটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব অর্থায়নে গঠিত। এই তহবিল থেকে ঋণ নেয়ার জন্য গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে চুক্তি করেছে ৪৯ ব্যাংক।


প্রসঙ্গত, রফতানিমুখী শিল্পের বিকাশ ও প্রসারের চলমান ধারা অব্যাহত রাখতে বৈদেশিক মুদ্রায় স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যে ১৯৮৮ সালে রফতানি উন্নয়ন তহবিল গঠিত হয় এবং ১৯৮৯ সালে তহবিলটির যাত্রা শুরু হয়। ২০০৫ সালে তহবিলটি ১০ কোটিতে উন্নীত করা হয়। এরপর ধাপে ধাপে আকার বাড়িয়ে এখন ৭০০ কোটি ডলারে উন্নীত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল। এই তহবিল থেকে রফতানিকারকরা ঋণ নিয়ে ২৭০ দিনের মধ্যে ফেরত দেন। ইডিএফ তহবিল থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ সুবিধা নিয়েছেন বিজিএমইএ সদস্যরা।
এ দিকে ডলার সঙ্কট মেটাতে বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে সেবা দিয়ে পাওয়া বৈদেশিক মুদ্রা বা ডলার দেশে আনার প্রক্রিয়া সহজ করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন থেকে সেবার বিনিময়ে পাওয়া আয় আনতে কাগজের ফরম পূরণ (ফরম-সি নামে পরিচিত) করতে হবে না। ইলেকট্রনিক উপায়ে অনলাইনে ঘোষণা দিয়ে আনা যাবে। তবে প্রবাসীদের আয় বা রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য এসব ফরম পূরণ বা ঘোষণা দিতে হয় না। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়েছে।


অনুমোদিত ডিলার (এডি) ব্যাংকগুলোকে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ‘অ্যাপ’ ভিত্তিতে রেমিট্যান্স আনতে অনলাইনে ঘোষণা দিয়ে লেনদেন করা যাবে। পরে ইলেকট্রনিকভাবে ঘোষণার প্রিন্ট করা ফরম ৩০ দিনের মধ্যে গ্রাহকের সই নিলেই হবে। এত দিন ফরম পূরণ করে সরাসরি জমা দেয়ার পর বৈদেশিক মুদ্রা আনতে হতো।
এ ছাড়া গতকাল বাফেদার পক্ষ থেকে রফতানিকারকদের ডলারের দাম এক টাকা বাড়িয়ে ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এতদিন প্রতি ডলারের বিপরীতে ১০২ টাকা দেয়া হতো। এখন থেকে ১০৩ টাকা দেয়া হবে। হঠাৎ এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, রফতানি আয় বাড়াতেই মূলত এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে আমদানির ডলারের দাম অপাতত না বাড়লেও কিছু দিনের মধ্যে তা বেড়ে যাবে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।


৭ মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে সোয়া চার শতাংশ : চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) দেশে রেমিট্যান্স বেড়েছে সোয়া চার শতাংশ। চলতি ৭ মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ২৪৫ কোটি ২১ লাখ মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ১৯৪ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, জানুয়ারিতে ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ১৭০ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এ হিসাবে জানুয়ারিতে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ।
গত কয়েক মাসে রেমিট্যান্স কমে গিয়েছিল। এর ফলে সামগ্রিক রেমিট্যান্স প্রবাহ ঋণাত্মক হয়ে গিয়েছিল। জানুয়ারিতে বেশি আসায় সাত মাসের হিসাবে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।


জানুয়ারিতে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২৫ কোটি ৫৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৪ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৬৫ কোটি ৩৬ লাখ ৯০ হাজার ডলার এবং বিদেশী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৭০ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
অন্যান্য সময়ের মতো এবারো ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। জানুয়ারিতে ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। এরপরেই রয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের অবস্থান। ব্যাংকটির মাধ্যমে ১২ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এ ছাড়া আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ কোটি ৭১ লাখ ডলার, অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ৪২ লাখ ডলার, পূবালী ব্যাংকের মাধ্যমে ৯ কোটি ৮৯ লাখ ডলার, এনসিসি ব্যাংকের মাধ্যমে ৭ কোটি ৫১ লাখ ডলার, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ৭ কোটি ২৫ লাখ ডলার, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে ৬ কোটি ৭৫ লাখ ডলার, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ৬ কোটি ৬২ লাখ ডলার, প্রিমিয়ার ব্যাংকে ৬ কোটি ২২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement