২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস আজ

দেশে প্রতি ৭ সেকেন্ডে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে

-

প্রতি সাত সেকেন্ডে দেশে একজন মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রতিরোধযোগ্য টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সংখ্যাই বেশি। বর্তমানে এক কোটি ১০ লাখ লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলেও ২০৪৫ সাল নাগাদ ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা দেড় কোটিতে পৌঁছাতে পারে।

ডায়াবেটিস তখনই হয় যখন দেহ ইনসুলিন উৎপাদন করার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলে। ইনসুলিন নামক হরমোনই রক্তে চিনি বা গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। সেই ইনসুলিনই দীর্ঘ সময় যার শরীরে উৎপাদন না হয় তখন তাকে ডায়াবেটিক রোগী বলা হয়। এ ধরনের রোগীর স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হয়। এ ধরনের রোগীদের টাইপ-১ ডায়াবেটিক বলা হয়। অন্য দিকে শরীরে পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন না হলেও শারীরিক পরিশ্রম করে যারা নিয়মিত রক্তে থাকা চিনি দহন বা পোড়াতে পারে তারা বাইরে থেকে ইনসুলিন না নিয়েও বেঁচে থাকতে পারেন। এ ধরনের রোগীকে টাইপ-২ ডায়াবেটিক বলে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা: এ কে আজাদ খান বলেছেন, ‘ডায়াবেটিস প্রতিরোধে প্রতিদিন নিয়ম করে অন্তত এক ঘণ্টা হাঁটতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। একই সাথে খেলাধুলা বাড়িয়ে দিতে হবে।’

মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে প্রতি বছর ১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালন করা হয়। এ বছরও বাংলাদেশে বিভিন্নভাবে দিবসটি পালন করা হবে। ঢাকা মহানগরীতে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

টাইপ-১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে শরীরে অগ্নাশয়ে থাকা ইনসুলিন উৎপাদন কোষগুলোকে নিজেই ধ্বংস করে ফেলে। এটাকে ‘অটো ইমিউন’ রোগও বলা হয়ে থাকে। এ ধরনের সিস্টেম শিশু ও তরুণদের মধ্যে বেশি ঘটে। তবে কখনো কখনো বয়স্কদের ক্ষেত্রেও ঘটে। অন্য দিকে টাইপ-২ ডায়াবেটিস বিপাকীয় সমস্যাজনিত রোগ। এটা তখনই ঘটে যখন অগ্নাশয় যথেষ্ট পরিমাণে ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না কিংবা উৎপাদিত ইনসুলিন যথাযথ কাজে লাগাতে পারে না। এ ধরনের ডায়াবেটিস সাধারণত বয়স ৪০-এর পর হয়ে থাকে কিংবা যাদের পরিবারের কারো ডায়াবেটিস আছে তাদের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। তা ছাড়া যেসব মানুষের উচ্চতার তুলনায় ওজন অত্যন্ত বেশি অথবা যারা শারীরিকভাবে ‘ফিট’ না তাদের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের হলেও তরুণদের মধ্যে হতে পারে টাইপ-২ ডায়াবেটিস।

এ ছাড়া আরেক ধরনের ডায়াবেটিস আছে যাকে জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস বলা হয়েছে। গর্ভকালীন এটা হয়ে থাকে। গর্ভবতী মায়ের ব্লাড সুগার অনেক বেশি থাকে। তবে শিশু জন্মের পর মায়েদের রক্তে চিনির পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে এলেও পরে এদেরই টাইপ-২ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।

ডায়াবেটিস হওয়ার আগে কিছু লক্ষণ প্রকাশ হয়। এগুলো হলো- স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পানি পিপাসা, ঘন ঘন প্রস্রাব, শরীরে ওজন বাড়তে পারে অথবা কমতে পারে, শরীরে শক্তি না পাওয়া অথবা চরম ক্লান্তি ভাব, সামনের সবকিছুই ঝাপসা দেখা, ঘন ঘন জীবাণু সংক্রমণের শিকার হওয়া, কেটে গেলে অথবা ছিঁড়ে গেলে দ্রুত ঘা না শুকানো। এ ছাড়া হাতে ও পায়ে অবশ অনুভব করা হলে মনে করতে হবে রক্তে হয়তো চিনির পরিমাণ বেড়েছে। এ রকম হলে দ্রুত চিৎিসকের কাছে যেতে হবে।

বাংলাদেশে ৯৫ শতাংশ ডায়াবেটিক রোগীই টাইপ-২ ধরনের। সতর্কতা অবলম্বন করলে এ ধরনের ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস বিলম্বিত করা যায়; কিন্তু নগরজীবনে মানুষের শারীরিক পরিশ্রম এবং হাঁটার প্রবণতা অনেক কমে গেছে।

কম্পিউটার বা মোবাইলে কাজ করতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। কম্পিউটার ও মোবাইল হাঁটাচলা কমিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া কোথাও গেলে বা ঘর থেকে বেরুলেই কোনো না কোনো যানবাহন পাওয়া যায়। ফলে মানুষ আর হাঁটতে চায় না বলে তারা মুটিয়ে যাচ্ছে। এভাবে নিজেই নিজের মধ্যে ডায়াবেটিস টেনে নিয়ে আনছে মানুষ। আক্রান্ত হওয়ার আগে নিয়মিত হাঁটাচলা ও শারীরিক পরিশ্রম করতে পারলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement