২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিশ্লেষণে ড. বদিউল আলম মজুমদার

ইভিএম নিকৃষ্ট যন্ত্র, মানুষ বঞ্চিত হয় ভোটাধিকার থেকে

-

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট নেয়ার কারণে মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ইভিএম যদি মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে, সেই ইভিএম ব্যবহারের যৌক্তিকতা কী? এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি। তিনি বলেন, যে যন্ত্র, যা সফটওয়্যার দিয়ে পরিচালিত হয়, তাতে কারসাজি করা যেতে পারে। কারণ যারা প্রোগ্রামিং করে তারাও কারসাজি (ভোট ডাকাতি) করতে পারে। আবার যেহেতু নির্বাচন কর্মকর্তাদের ওভার রাইটিংয়ের ক্ষমতা দেয়া আছে, তারাও কারসাজি করতে পারেন। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে এই ইলেট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) একটা নিকৃষ্ট যন্ত্র, এটা প্রতিষ্ঠিত।
রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে গতকাল মঙ্গলবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তথ্যের বিশ্লেষণ উপস্থাপনের শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেনÑ সুজনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ড. রোবায়েত ফেরদৌস, সুজন জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন। লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কুমিল্লা নির্বাচনেও ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহৃত হয়েছিল ছয়টি আসনে। আর ২৯৪টি আসনে নির্বাচন হয়েছিল পেপার ব্যালটে। নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, ব্যালটে ভোট নেয়া ২৯৪ আসনে গড়ে ভোট পড়েছে ৮১ শতাংশ। অন্য দিকে ইভিএমে ভোট নেয়া ছয়টি আসনে ভোট পড়েছিল গড়ে ৫১ শতাংশ। তিনি বলেন, দুই ধরনের পদ্ধতিতে ভোটের পার্থক্য ৩০ শতাংশ। এর অর্থ যেখানে পেপার ব্যালটে ভোট হয়েছে সেখানে কারসাজি করা হয়েছে, অথবা যেখানে ইভিএমে ভোট হয়েছে, সেখানে মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
ড. মজুমদার বলেন, ২০১২ সালে কুমিল্লা নির্বাচনে ব্যবহৃত বায়োমেট্রিক ইভিএমে ভোট পড়েছিল প্রায় ৭৫ শতাংশ। ২০১৭ সালে পেপার ব্যালটে ভোট পড়েছিল ৬৪ শতাংশ। এবারে সেখানে ভোট পড়েছে মাত্র ৫৯ শতাংশ। তিনি বলেন, কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে ইভিএমে ভোট দিতে গিয়ে বায়োমেট্রিক ছাপ না মেলায় অনেকে বিরক্ত হয়ে চলে গেছেন। এখানে ইভিএম মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।
নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতার কথা তুলে ধরে সুজন সম্পাদক বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। কমিশনের দায়বদ্ধতা কেবল জনগণের কাছে। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুসংগঠিত করাই কমিশনের কাজ। নির্বাচন কমিশন তার সক্ষমতা প্রদর্শন করে বিধিবিধান প্রয়োগের মাধ্যমে কিন্তু কুমিল্লাতে তারা সে সক্ষমতা দেখাতে পারেনি। কিছু চুনোপুঁটির ক্ষেত্রে সক্ষমতা দেখালেও রাঘববোয়ালদের ক্ষেত্রে দেখাতে পারেনি। কমিশনাররা তাদের শপথ অনুযায়ী কর্তব্য পালন করছেন কি না, তা একটি বড় প্রশ্ন।
ড. রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, কুমিল্লা নির্বাচন ছিল এই কমিশনের প্রথম পরীক্ষা। প্রথম পরীক্ষাতেই তারা অনেকগুলো প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ইভিএমে প্রিন্ট-আউট না থাকার কারণে পুনঃগণনার সুযোগ নেই। যারা ইভিএমে ভোট দিতে না পেরে ফেরত যান, তাদের জন্য বিকল্প ভোটের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। সরকারি লোকজন যদি সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে পদত্যাগ করার সাহস ও দৃঢ়তা দেখাতে হবে। কমিশন এই দৃঢ়তা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।
একরাম হোসেন বলেন, কুমিল্লা নির্বাচনে নাগরিকদের জন্য উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কয়েকটি কারণ আছে। একটি হলো সমাজকর্মীদের বদলে ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি হারে নির্বাচিত হচ্ছেন। আরেকটি হলো, মামলা সংশ্লিষ্টরাও নির্বাচিত হচ্ছেন বেশি করে। খুনের মামলার আসামিও আছেন অনেকে।


আরো সংবাদ



premium cement