২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমিয়ে মুদ্রানীতি ঘোষণা করল বাংলাদেশ ব্যাংক

-

বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ কমিয়ে নতুন অর্থবছরের (২০২২-২৩) জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করল বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থবছর শেষে বেসরকারি খাতের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ দশমিক ১ শতাংশ, যেখানে বিদায়ী অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে বেসরকারি খাতের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হলেও সরকারি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। মুদ্রানীতিতে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ, যেখানে বিদায়ী অর্থবছরের ছিল ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ। যদিও সরকারি ও বেসরকারি ঋণের এ লক্ষ্যমাত্রা বিদায়ী বছরে অর্জন হয়নি।
গতকাল অনুষ্ঠানিকভাবে নতুন বছরের জন্য এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবির। আর এটাই গভর্নর হিসেবে তার মেয়াদের শেষ মুদ্রানীতি। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, কাজী ছাইদুর রহমান, আবু ফরাহ মো: নাসের, আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধান মাসুদ বিশ্বাস, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মো: হাবিবুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক জি এম আবুল কালাম আজাদসহ অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, আমরা মূল্যস্ফীতির সাথে কোনো আপস করব না। আর এ কারণেই মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সম্ভব সবধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে রেপোর হার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫ শতাংশ থেকে সাড়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। বিলাসজাত পণ্যের আমদানি কমাতে এলসির ওপর মার্জিন বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে আমদানি বিকল্প পণ্যের উৎপাদন বাড়ানো জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিম চালু করা হয়েছে। কমানো হয়েছে মুদ্রা সররবাহের লক্ষ্যমাত্রা। আর এসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে মূল্যস্ফীতি নির্ধারিত সীমার মধ্যে ধরে রাখা।
গভর্নর বলেন, নতুন অর্থবছরের জন্য প্রক্ষেপিত ব্যাপক মুদ্রার প্রবৃদ্ধি বিদায়ী অর্থবছরের জন্য গৃহীত ১৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম হলেও জুন শেষে প্রাক্কলিত ৯.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তুলনায় বেশি। তিনি বলেন, নতুন অর্থবছরের জন্য মুদ্রানীতির মূল চ্যালেঞ্জ হবে টাকার অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক মান অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি এবং বিনিময় হারকে স্থিতিশীল রাখা। পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে চলমান অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে সমর্থন অব্যাহত রাখা। সে বিবেচনায় মূল্যস্ফীতি ও টাকার বিনিময় হারের ঊর্ধ্বমুখী চাপকে নিয়ন্ত্রণে রেখে কাক্সিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করার জন্য সতর্কতামূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করা হয়েছে, যা কিছুটা সঙ্কোচনমুখী বলে গভর্নর মনে করেন। আর এ আলোকে পুরো অর্থবছরের জন্য অর্থ ও ঋণ কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়েছে। জাতীয় বাজেটে জাতীয় প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশ ও মূল্যস্ফীতি ৫.৬ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ছয় বছর তিন মাস গভর্নর থাকাকালীন নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছেন বলে তিনি জানান। গত দুই বছর করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার নীতিসহায়তায় কিছুটা শিথিল করেছিল। আবারো করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে। এ কারণে চলতি বছরের জন্যও কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, রেমিট্যান্সের আন্তঃপ্রবাহ কমে গেছে। বিপরীতে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আর এ ঘাটতি পূরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার সরবরাহ করেছে। বিদায়ী অর্থবছরে ৭.৭ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করা হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। নতুন গভর্নরের জন্য চ্যালেঞ্জ কী এমন এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, নতুন যিনি গভর্নর হয়েছেন তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ সদস্য ছিলেন। চলমান সঙ্কট মোকাবেলার ক্ষেত্রে প্রতিটি পদক্ষেপই তার জানা রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement