২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইভিএমে কই নিয়ে গেছে আমাদের ভোট

নারায়ণগঞ্জে আমজনতার প্রশ্ন
ভোটের একটি দৃশ্য - ছবি : নয়া দিগন্ত

এক সময়ে সন্ত্রাসকবলিত নারায়ণগঞ্জে ভোট মানে ছিল এক আতঙ্ক। সহিংসতা হয়নি এমন কোনো নির্বাচন দেখেনি নারায়ণগঞ্জের মানুষ। তবে ১৬ জানুয়ারি নাসিক নির্বাচনে নতুন রূপ দেখেছে মানুষ। নির্বাচনের পরের দিনে সাধারণ মানুষের সাথে আলাপকালে জানা যায়, তাদের মনে একটাই প্রশ্ন এটা কেমন নির্বাচন?
চাষাঢ়া বাগে জান্নাত এলাকার বাসিন্দা সোনিয়া আক্তার জানান, গ্যাঞ্জাম হয় নাই ঠিকই; কিন্তু ভোটের এ কেমন নতুন রূপ দেখলাম । মেশিন কারচুপি করে আমাদের ভোট কই নিয়ে গেছে? ইভিএম আসলে কোনো ভালো পদ্ধতি না। আমরা তো এসব কিছুই বুঝি না।

মিশনপাড়া এলাকার বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন জানান, এবারের নাসিক নির্বাচনে নানা রকম কৌশল নেয়া হয়েছে। সহিংসতা রোধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসার কৌশল হিসেবে। আর ইভিএমই যত নষ্টের মূল।

এ দিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে জনে জনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ভোটের দিনে বিড়ম্বনার কথা মানুষের মুখে মুখে। অনেক ভোটারের কাছে ইভিএমে ভোট প্রদান ছিল নতুন। তাদের এ ব্যাপারে কোনো অভিজ্ঞতাও ছিল না। ফলে ভোট দিতে গিয়ে তাদের দুর্ভোগের শেষ ছিল না। প্রায় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ ছিল সেøা। এ অভিযোগ মেয়রপ্রার্থী যারা ছিলেন তাদের সবারই। বিশেষ করে তৈমূর ও আইভী দুইজনই অভিযোগ করেন এ ব্যাপারে। ভোট কাউন্টিং নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। দুপুর ১২ পর্যন্ত অনেক কেন্দ্রে ১৫ থেকে ২০ ভাগ ভোট কাস্টিংয়ের কথা বলা হয়েছে, গণমাধ্যমসহ প্রার্থীদের কাছে । অথচ বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা হয়ে যায় ৫০ ভাগ এটা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। বেশি অভিযোগ ইভিএম সিস্টেম নিয়ে।

পরাজয়ের পর তৈমূর বলেন, বেশ কিছু কেন্দ্রে ইভিএম ত্রুটিপূর্ণ ও সেøা ছিল। অনেক লোক ভোট দিতে পারেনি। ইভিএমে কারচুপির জন্য আমাদের পরাজয় বরণ করতে হয়েছে।

আইভী বলেন, ভোটের দিন সকাল থেকেই ভোট সেøা ছিল। আমি বারবার অভিযোগ করেছি, সেøা না হলে ভোটের ব্যবধান এক লক্ষের বেশি হতো।’
ইভিএমের কারণে ভোটদানে ধীরগতি সম্পর্কে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো: হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, নারায়ণগঞ্জে মক ভোটিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু নারী ভোটাররা সেখানে আসেননি। ফলে ভোট প্রদান সম্পর্কে তাদের লাইনে দাঁড়িয়ে বুঝিয়ে দিতে হয়েছে। ওইখানে হয়তো একটু সময় লেগেছে। তবে যারাই এসেছে সবার ভোট গ্রহণ করা হয়েছে।

এ দিকে গতকাল নাসিকের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সাধারণ মানুষদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা। ফলাফল কী হলো তার চেয়ে বেশি আলোচনা ভোটের দিনের চিত্র নিয়ে। নানা প্রশ্ন ভোটারদের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। একজন আরেকজনকে প্রশ্ন করছেন, এটা কী হইলেরে ভাই? এমন তো দেখি নাই কখনো।

নিতাইগঞ্জের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, ইভিএম মূলত আমাদের বোকা বানিয়ে গেছে। এটা কোনো সঠিক পদ্ধতি নয় দাবি করে তিনি বলেন, আমাদের ভোট নেয়ার এটা নতুন কৌশল মাত্র। আমরা যেন সিস্টেমের কাছে ধরা খেয়ে গেলাম। এ দিকে মেয়র পদে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়ে ডা: সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, তিনি তার অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে সবাইকে নিয়ে কাজ করবেন। তিনি বলেন, ‘আমার বিজয় হয়েছে। আমি আমার আল্লাহ, দল ও নেত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি সবাইকে নিয়ে কাজ করব। আমার অসমাপ্ত কাজ শেষ করব।’

তৈমূরের ভোট কারচুপির অভিযোগ প্রসঙ্গে আইভী বলেন, ‘আমি এখনো পরিষ্কার জানি না তিনি কী অভিযোগ করেছেন। কিন্তু যদি করে থাকেন সেটি আপনারা (গণমাধ্যমকর্মীরা) দেখেছেন। এ নির্বাচনে সারাদিন গণমাধ্যমের প্রচুর কর্মী ছিল। প্রচুর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল। কোথাও কোনো ধরনের অভিযোগ নেই।’
আইভী বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ। আমি দলের প্রতি কৃতজ্ঞ, জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ এবং আমার যে নেতাকর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’

নবনির্বাচিত মেয়র বলেন, ‘আগামী পাঁচ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাব। এমনকী জীবনের শেষ পর্যন্ত উৎসর্গ করতে চাই এ নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য।’ তিনি বলেন, এই জনগণ আর জনস্রোত আমার শক্তি। তারা না থাকলে আমি নারায়ণগঞ্জে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম না। দল যেমন আমার প্রতি আস্থা রেখেছে, এখানকার জনগণও কখনো আমাকে বিমুখ করেনি। আমি শেখ হাসিনার ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে তাদের সেবা করতে চাই।’

আইভী বলেন, ‘আমার প্রতিটি নির্বাচন চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই তুলনায় এ নির্বাচনও কম নয়। কিন্তু আমার জনশক্তি আর জনস্রোত আমাকে নির্বাচিত করেছে।’
তৈমূর আলম খন্দকার বলেছেন, এটা আমাদের নয়, সরকারের পরাজয়। তিনি বলেন, জনগণের ভালোবাসায় আমরা জয়ী, তাদের প্রতি, মিডিয়ার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। তৈমূর বলেন, আপনারা দেখবেন আমি ঘটনাগুলো জানিয়েছি। সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় আমার সমন্বয়ককে কাগজসহ গ্রেফতার করা হয়। তার মাধ্যমেই শুরু হয় এবং আমার লোকজন প্রতিদিনই গ্রেফতার হতে থাকে। তিনি আরো বলেন, হেফাজতের মামলা দেয়া হয়েছে সবাইকে। এদের মধ্যে হিন্দু লোকও আছে। এখন দেখা যায় মুসলমান তো করেই হিন্দুরাও হেফাজত করে। গতকাল সকাল থেকে আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বন্দরের সমন্বয়ককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমার চিফ এজেন্টের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে। এ অবস্থায় একটা মানুষ স্বতন্ত্র দাঁড়িয়ে কিভাবে ঠিক থাকতে পারে। তারপরও জনগণ আমাকে সমর্থন দিয়েছে। আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।

তৈমূর বলেন, ঢাকার মেহমানদের অতিরঞ্জিত কথার পরে গ্রেফতার শুরু হয়েছে। জাহাঙ্গীর কবির নানককে যখন জিজ্ঞেস করা হয় তখন তিনি বলেছিলেন ১২ ও ১৩ নং ওয়ার্ড তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে আমি থাকি, আমার ভাই তিনবারের কাউন্সিলর। আর ১২ নম্বর ওয়ার্ড সরকারি এমপির ওয়ার্ড। আমি বললাম সরকারই যদি তার এমপির কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে তাহলে আমার কিছু করার নেই। আমার কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র নেই। তৈমূর বলেন, ‘তার (আইভী) বিষয়ে আগেও মন্তব্য করিনি এখনো করবো না। এটা খেলা হয়েছে সরকার বনাম জনগণ, সরকার বনাম তৈমূর আলম খন্দকার। আমি সিটি করপোরেশনের জন্য কী করেছি তা নারায়ণগঞ্জবাসী জানে। বিএনপি আমার রক্তের সাথে মিশে গেছে।’

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির পীর সাহেব চরমোনাই মনোনীত মেয়র প্রার্থী মুফতি মাসুম বিল্লাহ জানান, এবার নাসিক নির্বাচনে জনতার জয় হয়নি, হয়েছে ইভিএমের। ইভিএমের ফলে ভোট কাস্টিং হয়েছে কম। কারচুপির তো শেষ-ই নেই।


আরো সংবাদ



premium cement