২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নাগা বিদ্রোহী সন্দেহে ভারতীয় সেনাদের গুলি, ১৩ শ্রমিক নিহত

-

ভারতের নাগাল্যান্ড রাজ্যে দেশটির সশস্ত্রবাহিনীর অতর্কিত হামলায় ১৩ কয়লাখনি শ্রমিক নিহত হয়েছেন। ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যায় রাজ্যটির মন জেলায় ঘটনাটি ঘটেছে বলে স্থানীয় সংগঠনগুলো অভিযোগ করেছে। সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা তাদের খবরে জানিয়েছে, মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নাগাল্যান্ডের মন জেলায় ওটিংয়ে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। বিদ্রোহী ভেবে সাধারণ শ্রমিকদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। যদিও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপরে পাল্টা হামলা চালানোরও অভিযোগ উঠেছে। এনডিটিভি।
তবে স্থানীয় গ্রামবাসীর দাবি নিহতরা নির্দোষ। এলাকাবাসীর দাবি, প্রতিদিনের মতো তিরু থেকে কাজ শেষে পিকআপে করে ফিরছিলেন তারা। সেখানে কয়লা ক্ষেত্রে কাজ করতেন শ্রমিকরা। ট্রাকটিতে ৩০ বা তার বেশি শ্রমিক ছিলেন বলে জানা গেছে। বিদ্রোহী ভেবে ভুলবশত গুলি চালানো হয় জানিয়ে একে অপ্রত্যাশিত ঘটনা বলছে দেশটির সেনাবাহিনী। এ দিনের ঘটনায় এক সেনাসদস্যও প্রাণ হারিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্যারা কমান্ডোরা ভুল করে ওই শ্রমিকদের বিচ্ছিন্নতাবাদী ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ডের (খাপলাং-ইয়ুং অং) সদস্য ভেবে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। কয়লাখনি এলাকা তিরু ও নিহতদের গ্রাম ওটিংয়ের মধ্যবর্তী সড়কে ঘটনাটি ঘটেছে। দুই এলাকার দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। কোনিয়্যাক নাগা সম্প্রদায়ের শীর্ষ সংস্থা কোনিয়্যাক হোহোর একজন নেতা জানান, ওই শ্রমিকরা একটি পিকআপ ভ্যানে করে খনি থেকে গ্রামে ফিরছিল। তারা প্রতি শনিবার বাড়িতে ফিরে রোববারটা পরিবারের সাথে কাটিয়ে সোমবার আবার কাজে ফিরে যায়।
ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা এই নেতা পরিচয় না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ছয়জন প্রাণ হারায় আর ৫ ডিসেম্বর সকালে আহত আরো সাতজনের মৃত্যু হয়। এ পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, আরো ১১ জন আহত আছেন এবং দু’জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।’ ময়নাতদন্তের জন্য নিহতদের লাশ মন জেলার সদর দফতরে নেয়া হয়েছে। স্থানীয় সংগঠনগুলো এ ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে আর না হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে অভিযোগ জানানো হবে বলে সতর্ক করেছে। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা বিচার না হওয়া পর্যন্ত লাশ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ইস্টার্ন নাগাল্যান্ড পিপলস অর্গানাইজেশন (ইএনপিও) রাজ্যের রাজধানী কোহিমার কাছে কিসামায় হতে যাওয়া বার্ষিক হর্নবিল উৎসব থেকে তাদের প্রতিনিধিত্বকারী ছয়টি গোষ্ঠীর নাম প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেছে। ইএনপিও কয়েক মাস আগে তাদের এলাকায় রক্তপাতের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল বলে জানা গেছে। এক বিবৃতিতে ইএনপিও বলেছে, ‘আমাদের লোকজন যখন নিহত হচ্ছে তখন কিভাবে উৎসবে নাচবো আমরা?
মিয়ানমার সীমান্তের মন জেলার ওই এলাকাটিতে ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ অভিযান চালাতে গিয়ে ‘বিপর্যয়’ ঘটে এবং এতে নিরাপত্তা বাহিনীর এক জওয়ানও নিহত হন বলে জানিয়েছে পুলিশ। গোপন সূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে সশস্ত্রবাহিনী তিরু-ওটিং সড়কে একটি অতর্কিত আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিল কিন্তু গ্রামবাসীদের বিদ্রোহী ভেবে তাদের ওপর হামলা চালায়। গুলিতে গ্রামবাসীরা নিহত হওয়ার পর স্থানীয়রা উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনীর দলটিকে ঘেরাও করে ফেলে।
আক্রান্ত হওয়ার পর ‘আত্মরক্ষার্থে’ সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা গুলি করলে বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী গুলিবিদ্ধ হয় বলে পুলিশের সূত্রগুলো এনডিটিভিকে জানিয়েছে। এ সময় উত্তেজিত জনতা সশস্ত্রবাহিনীর কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। রোববার সকালে নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেইফিউ রিও টুইটারে দেয়া এক বিবৃতিতে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বেসামরিকদের হত্যাকাণ্ডকে ‘দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা’ বলে বর্ণনা করে ‘উচ্চপর্যায়ের বিশেষ তদন্ত দল’ ঘটনার তদন্ত করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement