২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রোহিঙ্গারা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

-

মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আটকে পড়া পাকিস্তানিরা দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বাংলাদেশে নবনিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত অ্যানা জেরার্ড ভ্যান লিউয়েনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ কথা বলেন তিনি।
পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বৈঠকের বিষয়ে ব্রিফ করেন। বাসস, বাংলানিউজ।
শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা চার বছর ধরে বাংলাদেশে আছে। রোহিঙ্গারা বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহু পাকিস্তানি দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশে আটকা পড়ে আছে। তারা (রোহিঙ্গা ও আটকে পড়া পাকিস্তানিরা) বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের বন ও পরিবেশ ধ্বংস করছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রীকে জানান, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা, এনজিও কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নেতৃবৃন্দের সাথে তার আলাপ হয়েছে এবং রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনই এ সঙ্কটের একমাত্র সমাধান বলে সবাই মনে করেন। রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশকে একটি বদ্বীপ রাষ্ট্র উল্লেখ করে বলেন, নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশের সাথে অভিজ্ঞতাবিনিময় করতে পারে। ডাচ রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করেন। দূত বলেন, তিনি বিমানে বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছেন এবং দেশের দৃশ্যাবলি দেখেছেন, যা তার নিজের দেশের অনুরূপ।
বাংলাদেশের উন্নয়নে নেদারল্যান্ডসের অবদান এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ প্রণয়নে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সরকার দেশের নদীগুলোর পানির ধারণক্ষমতা বাড়াতে ড্রেজিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। নেদারল্যান্ডস সফরের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, নেদারল্যান্ডসে কৃষির সংরক্ষণে গ্রিন হাউজ প্রকল্প দেখে অভিভূত হয়েছি। বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক দেশ এবং তার সরকার কৃষির উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেয় বলে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাইজেশনে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে তার আইসিটি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে এর স্থপতি হিসেবে উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন বালুকাময় সমুদ্রসৈকতে আরো পর্যটক আকৃষ্ট করতে তার সরকার কক্সবাজার বিমানবন্দরকে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তর করছে। তিনি বলেন, তার সরকার দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার মাধ্যমে এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে গতিশীল করতে দেশের অভ্যন্তরে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে।
মংলা ও পায়রা বন্দর ব্যবহার করতে পারবে নেপাল : পরে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন নেপালের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত বংশীধর মিশ্র। সাক্ষাৎকালে নেপালের রাষ্ট্রদূত বিভিন্ন সঙ্কটে দেশটিকে বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসাসামগ্রীসহ বিভিন্ন সহায়তা দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেপাল বাংলাদেশের মংলা ও পায়রা বন্দর এবং সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশের ইপিজেড, বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন তার হৃদয় স্পর্শ করেছে বলে মন্তব্য করেন নেপালের রাষ্ট্রদূত। রাষ্ট্রদূত তাদের কৃষি খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশের সহযোগিতা চান।
বাংলাদেশের হাঁড়িভাঙা আম উপহার দেয়ায় বংশীধর মিশ্র তার দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস।
জার্মান রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ : জলবায়ু ও জ্বালানি ইস্যুতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে জার্মানি। বাংলাদেশে নবনিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত অচিম ট্রয়েস্টার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে গতকাল গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে বলেন, আমরা জলবায়ু ও জ্বালানি খাতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চাই। রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশ তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পার করছে। তিনি বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও কোভিড-১৯ পরিস্থিতি যথাযথভাবে মোকাবেলা করার পদ্ধতির প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, অন্যান্য দেশের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশে মৃত্যুর হার খুবই কম।
জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নিজস্ব সম্পদ দিয়ে অভিযোজন ও প্রশমন কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষকে মোট ছয় কোটি ডোজ কোভিড টিকা (একক ও দু’টি ডোজ মিলে) দেয়া হয়েছে। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জার্মানির সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক জার্মান পরিবার মুক্তিযুদ্ধের পর ‘যুদ্ধশিশু’ দত্তক নেয়।


আরো সংবাদ



premium cement