২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঢিলে হয়ে গেছে কঠোর লকডাউন!

-

অনেকটাই ঢিলে হয়ে গেছে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন। দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউনের শেষের দুই দিন স্বাভাবিকভাবেই চলাচল শুরু করেছে সাধারণ মানুষ। যেসব প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট লকডাউনে বন্ধ রাখার কথা সেগুলোর অনেকটাই খুলতে শুরু করেছে। রাস্তাঘাট, বাজার, দোকানপাট, অলিগলিসহ মোড়ে মোড়ে বেড়েছে মানুষের উপস্থিতি। দোকানগুলোতে ক্রেতাও বাড়ছে অনেক। প্রধান সড়কগুলোতে বাস ছাড়া বেরিয়েছে প্রায় সব ধরনের যানবাহন। কোথাও কোথাও দেখা দিচ্ছে যানজট। কিছু স্থানে চেকপোস্ট থাকলেও তা শিথিল হয়ে পড়েছে। আবার স্বাস্থ্যবিধি মানারও কোনো তোয়াক্কা নেই। মাস্কও পরছেন না ঘর থেকে বের হওয়া নাগরিকরা।
অনেকেই মনে করছেন, লকডাউন ঘোষণার প্রথম দুই-এক দিন কঠোরভাবে চললেও পরে তা হযবরল হয়ে যায়। এ জন্য বেশি দায়ী সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত। তারা শিল্পকারখানা খোলা রেখে শ্রমিকদের যাতায়াতের বাহন গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়। আবার ব্যাংক খোলা রাখলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। এসব নানান অসঙ্গতির মধ্যে পড়ে চরম অসুবিধার শিকার হয়ে কেউ আর লকডাউন মানতে চায় না। এ দিকে গতকাল মঙ্গলবারও বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে প্রবেশ করেছেন শ্রমিকরা। আবার রাজধানী থেকেও বিপুলসংখ্যক মানুষ বেরিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে। বাস না থাকায় চরম ভোগান্তি মাথায় নিয়ে কয়েক গুণ বেশি টাকা খরচ করে আসা-যাওয়া করছেন এসব যাত্রী। গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীর গাবতলী আমিনবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায় শত শত মানুষ হেঁটে গাবতলী ব্রিজ পার হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করছেন। আবার অনেকেই রাজধানীর বাইরেও যাচ্ছেন। তবে যে শুধু হেঁটেই আসা-যাওয়া করছেন তা নয়, অনেকে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশায়ও যাতায়াত করছেন। সেখানে পুলিশের চেকপোস্ট থাকলেও তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।
যশোর থেকে আসা একটি মাইক্রোবাসের যাত্রী নারী শ্রমিক হাসনা বেগম জানান, অনেক কষ্ট ও ব্যয়বহুল হলেও জীবিকার টানে কর্মস্থলে ফিরতে হচ্ছে। গত তিন দিন তিনি গর্মেন্টে অনুপস্থিত। তারপরও অনেক পুরনো শ্রমিক বলে হয়তো তার চাকরিটা আছে। কিন্তু এই তিন দিনের বেতন পাব কিনা জানি না। হাসনা কাজ করেন চট্টগ্রামের একটি গার্মেন্টে। যশোর থেকে আসা ওই মাইক্রোবাসে তিনিসহ অন্যরা চট্টগ্রামে যাবেন।
তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে যখন গ্রামে যাই তখন গার্মেন্ট থেকে বলা হয়েছিল ৫ তারিখ থেকে গার্মেন্ট খোলা থাকতে পারে। তবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত ৩-৪ তরিখে জানিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু হঠাৎ করে গত ১ তারিখ গার্মেন্ট খুলে দেয়া হয়। এ দিকে যানবাহনের ব্যবস্থা না থাকায় হাসনাসহ কয়েকজন ফিরতে পারেননি। গত সোমবার যশোর থেকে মাইক্রোবাসে রওনা দিয়েছেন। ওই গাড়িতে ঢাকার যাত্রীও ছিল। তাদের নামিয়ে দিয়ে গাবতলী থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার যাত্রী নেয়ার জন্য কিছুটা যাত্রা বিরতি দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
রংপুর থেকে আসা সাদেক মিয়া বলেন, তিনি রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর একটি গার্মেন্টে কাজ করেন। গণপরিবহন চালু হলেও শেষ সময় বাস না পাওয়ায় কর্মস্থলে ফিরতে পারেননি। তাইতো পিকআপে আমিন বাজার পর্যন্ত আসেন। সেখান থেকে হেঁটে গাবতলী ব্রিজ পার হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করেছেন। তিনি বলেন, ছোট চাকরি করলে অনেক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। ছোট চাকরিজীবী বা অল্প আয়ের মানুষদের যেন কষ্ট থাকতে নেই। তা না হলে যানবাহনের ব্যবস্থা না করে কারখানা খুলে দেয়া হতো না।
সকালে নগরীর মিরপুর এলাকায় বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। ভোর থেকেই কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য অনেকেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে যানবাহনের অপেক্ষা করছিলেন। তবে গণপরিবহন না পেয়ে তারা রিকশা-ভ্যানে, হেঁটে কিংবা অন্য উপায়ে অফিসে যাচ্ছিলেন। অনেক স্থানে যানবাহনের চাপে যানজট দেখা গেছে।
এ দিকে মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, কাঁঠালবাগান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বেশির ভাগ দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা। কেউ কেউ দরজা অর্ধ খোলা রেখেছেন। আবার কেউ কেউ পুরোটাই খুলে ব্যবসা করছেন। এসব দোকানে ক্রেতারা ভিড় করছেন অনেকে। মিরপুরের পীরেরবাগ এলাকায় দেখা যায় তৈরী পোশাক বিক্রির অনেক দোকানই খোলা। এসব দোকানে ভিড়ও রয়েছে বেশ।
জানতে চাইলে ক্রেতা তানজিলা রহমান বলেন, প্রয়োজনের কোনো শেষ নেই। তবে প্রয়োজন হয়তো কিছু সময় নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। কিন্তু তা কত সময়? বাসায় সন্তানের অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস দরকার। সচেতনতার কারণে এত দিন বের হইনি। কিন্তু এখন আর পারা যাচ্ছে না। তা ছাড়া দোকানও যেহেতু খোলা, তাই আর দেরি করিনি। প্রয়োজন মেটাতেই বের হয়েছি।
ব্যবসায়ী আনোয়ার জানান, গার্মেন্ট মালিকদের দাবিতে কঠোর লকডাউন ভেঙে কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। আবার শ্রমিকদের বহনের জন্য একদিনের জন্য গণপরিবহনও খুলে দেয়া হয়। আমরা কী দোষ করেছি? তিনি আরো বলেন, বুঝলাম গার্মেন্ট সেক্টর দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে। তাহলে আম কী করব? না খেয়ে করোনা হওয়ার আগেই পরিবার নিয়ে মারা যাব?
মিজানুর রহমান নামে একজন ওষুধ ব্যবসায়ী জানান, কঠোর লকডাউন ভেঙে পড়েছে। এ দেশে লকডাউন আর কঠোর হবে বলে মনে হয় না। তিনি বলেন, লকডাউন ডেকে তা সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো আবার হযবরল করে দেয়। একবার কঠোর লকাউন দেন। সব সেক্টরকে কঠোর হতে বলেন। দেখেন কী হয়। তা না করে আপনি গার্মেন্ট খোলা রাখবেন, ব্যাংকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, বাজারঘাট খোলা রেখে রিকশাসহ অন্য যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেবেন। তাহলে বাকিরা কী করবে। এসব কারণেই লকডাউন বাস্তবায়ন হচ্ছে না। দেখা যাক সামনের ১০ তারিখ পর্যন্ত লকডাউন কেমন হয়।


আরো সংবাদ



premium cement
বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ট্রাম্পের বিচার নিয়ে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট চুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত, ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত আমদানি ব্যয় কমাতে দক্ষিণাঞ্চলের সূর্যমুখী তেলের আবাদ পাকুন্দিয়ায় গানের আসরে মারামারি, কলেজছাত্র নিহত আবারো হার পাকিস্তানের, শেষ সিরিজ জয়ের স্বপ্ন পাটকেলঘাটায় অগ্নিকাণ্ডে ৩ দোকান পুড়ে ছাই ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু দোয়ারাবাজারে পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যা : স্বামীর আমৃত্যু কারাদণ্ড গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার ভারতে দ্বিতীয় পর্বে ৮৮ আসনে ভোট

সকল