২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বছরে ২৪ হাজার কোটি টাকার উপরে ভোজ্যতেল আমদানি

চাহিদার ১০ শতাংশ দেশে উৎপাদন, উৎপাদন বৃদ্ধিতে ২৭৮ কোটি টাকার প্রকল্প
-

বাংলাদেশে যে পরিমাণ ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে তার মাত্র ১০ শতাংশ দেশে উৎপাদন হয়। বাকি ৯০ শতাংই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ২০১৮-১৯ সালে বিদেশ থেকে প্রায় ৪৭ লাখ মেট্রিক টন তেল ফসল আমদানি করতে হয়েছে, যার পেছনে ব্যয় হয়েছে ২৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। দেশে তেল উৎপাদনের মূল বাধা হলো জমির স্বল্পতা। ‘তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সরকার তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
গতকাল ‘তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি’ প্রকল্পের এক ভার্চুয়াল জাতীয় কর্মশালায় প্রকল্পের সামগ্রিক কার্যক্রম তুলে ধরতে গিয়ে এসব তথ্য জানান প্রকল্প পরিচালক মো: জসীম উদ্দিন। ২০২০-২৫ মেয়াদে ২৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি’ প্রকল্পটি দেশের ২৫০টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রচলিত শস্য বিন্যাসে কৃষিগবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষিত স্বল্পমেয়াদি তেল ফসলের আধুনিক জাত অন্তর্ভুক্ত করে সরিষা, তিল, সূর্যমুখী, চীনাবাদাম, সয়াবিনসহ তেল ফসলের আবাদ এলাকা ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হবে। এ ছাড়া বিএআরআই ও বিনা কর্তৃক উদ্ভাবিত তেল ফসলের আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ এবং মৌ-চাষ অন্তর্ভুক্ত করে তেলজাতীয় ফসলের হেক্টর-প্রতি ফলনও ১৫-২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ফলে তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়বে ও আমদানির পরিমাণ হ্রাস পাবে বলে কর্মশালায় উল্লেখ করা হয়।
কর্মশালায় বলা হয়, দেশে তেলজাতীয় ফসল উৎপাদনের মূল সমস্যা হলো জমির স্বল্পতা। ধানসহ অন্যান্য ফসলের তুলনায় কৃষকরা এ ফসল চাষে কম আগ্রহী। বর্তমানে দেশে ফসল আবাদের ৭৫ শতাংশ জমিতে দানাজাতীয় ফসলের চাষ হয়। অন্য দিকে ক্রমেই তেলের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৫ সালে তেল এবং চর্বি ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ২.২২ মিলিয়ন টন, তা বেড়ে ২০১৯ সালে হয়েছে ৩.০৮ মিলিয়ন টন। মাথাপিছু তেল ও চর্বি ব্যবহারের পরিমাণ বছরে ২০১৫ সালে ছিল ১৩.৮০ কেজি, তা বেড়ে ২০১৯ সালে হয়েছে ১৮.৭ কেজি।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: মেসবাহুল ইসলাম বলেন, ব্রিধান-৭১, ব্রিধান ৮১, ব্রিধান ৮৯, ব্রিধান ৯২সহ উন্নতজাতের ধান চাষ করে হেক্টর-প্রতি এক টন উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। এটি করতে পারলে ১০ শতাংশ জমি উদ্বৃত্ত থাকবে, যাতে ধান চাষ না করে অন্যান্য ফসল চাষ করা যাবে। এ ছাড়া উন্নত জাতের ধান ও সরিষার চাষ করে শস্যের নিবিড়তা বাড়ানোও সম্ভব।
২০০৯ সালে তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ছয় লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৫৪ হাজার মেট্রিক টনে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বর্তমান সরকারের কৃষিবান্ধবনীতি ও নানামুখী প্রণোদনার ফলে বিগত ১২ বছরে দেশে তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও ভোজ্যতেলের বেশির ভাগ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় এবং এর পেছনে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। দেশে তেল উৎপাদনের মূল বাধা হলো জমির স্বল্পতা। ইতোমধ্যে আমাদের বিজ্ঞানীরা উচ্চ ফলনশীল ও স্বল্পকালীন উন্নত জাতের ধান ও সরিষার জাত উদ্ভাবন করেছেন। এগুলোর চাষ দ্রুত কৃষকের কাছে ছড়িয়ে দেয়া ও জনপ্রিয় করতে পারলে ধান উৎপাদন বৃদ্ধি না কমিয়েও অতিরিক্ত ফসল হিসেবে সরিষাসহ তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে। সে লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় সমন্বিত কর্মসূচি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো: আসাদুল্লাহর সভাপতিত্বে কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) ড. মো: আব্দুর রৌফ, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) হাসানুজ্জামান কল্লোল বক্তব্য রাখেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement