২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সপ্তাহের ব্যবধানে শনাক্ত ২৭ ও মৃত্যু ৭ শতাংশ বেড়েছে

-

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশব্যাপী বিধিনিষেধ ১৬ জুন পর্যন্ত দীর্ঘায়িত করেছে। এর বাইরে স্থানীয় পর্যায়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে লকডাউন, কঠোর বিধিনিষেধ ইত্যাদি আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে শনাক্ত ও মৃত্যুর হার অনেকখানি বেড়ে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে পুরো দেশের পরিসংখ্যানেও। স্বাস্থ্য অধিদফতর করোনার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেখা গেছে, আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে দেশজুড়ে করোনা শনাক্তের হার ২৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ৭ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে অবশ্য নমুনা পরীক্ষা ও সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে।
গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া বিজ্ঞপ্তির সপ্তাহভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২৩তম এপিডেমিওলজিক্যাল সপ্তাহে (৬-১২ জুন) করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক লাখ ২২ হাজার ১০৩টি। তার আগের সপ্তাহ অর্থাৎ ২২তম সপ্তাহে (৩০ মে-৫ জুন) পর্যন্ত করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল এক লাখ ১৯ হাজার ২০২টি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে নমুনা পরীক্ষার হার বেড়েছে দুই দশমিক ৪৩ শতাংশ। ২৩তম সপ্তাহে রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ১৭২ জন আর ২২তম সপ্তাহে রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন ১১ হাজার ৯২৮ জন। এক সপ্তাহে রোগী শনাক্তের হার বেড়েছে ২৭ দশমিক ২০ শতাংশ। ২৩তম সুস্থ হয়েছেন ১৪ হাজার ৫৯৯ জন আর ২২তম সপ্তাহে সুস্থ হয়েছিলেন ১২ হাজার ১৭ জন। অর্থাৎ সুস্থ হওয়ার হারও বেড়েছে ২১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অন্য দিকে সর্বশেষ সপ্তাহে করোনাতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৭৯ জন আর তার আগের সপ্তাহে মারা গেছেন ২৫২ জন। সে হিসাবে আগের সপ্তাহের চেয়ে মৃত্যুহার বেড়েছে সাত দশমিক ১৪ শতাংশ। এ দিকে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে আরো ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৬৩৭ জন। গত শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১১ হাজার ৫৯০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ছিল ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ। এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট আট লাখ ২৪ হাজার ৪৮৬। মোট মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ৭১ জনের। সুস্থ হয়েছেন সাত লাখ ৬৪ হাজার ২৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ১১ জন খুলনা বিভাগে। এ ছাড়া ঢাকা বিভাগে ১০ জন, রাজশাহীতে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এর বাইরে চট্টগ্রামে ছয়জন, বরিশালে দু’জন, রংপুরে দু’জন ও সিলেটে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, সাতক্ষীরায় করোনা সংক্রমণ রোধে টানা এক সপ্তাহ লকডাউন শেষে দ্বিতীয় মেয়াদের লকডাউন গতকাল শনিবার রাত ১২টা থেকে শুরু হয়েছে। আগামী ১৮ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত জেলাব্যাপী এই লকডাউন বলবৎ থাকবে। তবে লকডাউনের মধ্যেও ঠেকানো যাচ্ছে না করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি। গত ৫ জুন থেকে সীমান্ত জেলা সাতক্ষীরায় লকডাউন শুরু হয়। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই লকডাউন বাস্তবায়নে এবং মানুষকে ঘরে রাখতে নিরবচ্ছিন্ন সেবা অব্যাহত রেখেছে। রাস্তায় ছোট কিছু যানবাহন ও সীমিত পরিসরে মানুষ চলাচল করছে। শহরের ছোট ছোট গলি রাস্তাগুলোর মুখ বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার গণপরিবহন। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে সীমান্তে বিজিবির কঠোর নজরদারি জারি রয়েছে। জেলাব্যাপী অব্যাহত আছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য কর্মকর্তা ডা: জয়ন্ত সরকার জানান, জেলায় এ পর্যন্ত দুই হাজার ৩২৪ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। জেলায় করোনায় মোট মৃত্যু ৫১ জন ও সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ ও সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে উপসর্গে মৃত্যু হয়েছে ২৪২ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা পজিটিভ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৬৮ জন করোনা পজিটিভ এসেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৩৬ দশমিক ১৭ শতাংশ।
এ দিকে সাতক্ষীরায় পর্যাপ্ত বেড, ডাক্তার ও জনবল সঙ্কটে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমসিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। বর্তমানে ৬৮৩ জন করোনা পজিটিভ নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৩৫ ও সদর হাসপাতালে ৩৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা: হুসাইন শাফায়েত জানান, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৮টি আইসোলেশন ও ১৩৫টি বেড ছাড়াও আট বেডের আইসিইউ রয়েছে। এ ছাড়া সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে বেড রয়েছে মাত্র ৩৫টি। অবশ্য গতকাল শনিবার সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আরো ১৫টি বেড স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে বলে তিনি জানান।
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আবু বকর সিদ্দিক (৭৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবির বিষ্ণুপুর এলাকার বাসিন্দা। শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে বগুড়া টিএমএসএস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ দিকে বগুড়ায় করোনার সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫২ নমুনার ফলাফলে নতুন করে ২৭ জন করোনায় শনাক্ত হয়েছেন। আক্রান্তের হার ১৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ। গতকাল শনিবার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা: মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন। এর আগের দিন জেলায় ১৬৯ নমুনায় ২৩ জন করোনায় শনাক্ত হয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে ১৫৮ জনের। এ সময়ে মারা গেছেন দু’জন। গত শুক্রবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ১২৯ জন। এর আগের দুই দিন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১১৪ ও ১১৯ জন। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা: সেখ ফজলে রাব্বি নয়া দিগন্তকে জানান, গত ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষায় ১৫৮ জন নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এক হাজার চারটি। আক্রান্তদের মধ্যে নগরে ৯২ জন এবং উপজেলায় ৬৬ জন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষের গাছাড়া ভাবের কারণে সংক্রমণ বাড়ছে। তিনি বলেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে এবং গণজমায়েতের মতো জায়গা এড়িয়ে চলতে হবে।
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ও উপসর্গ নিয়ে আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে তাদের মৃত্যু হয়। বর্তমানে হাসপাতালের আইসিইউতে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৩ জন। শুক্রবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় খুলনা জেলা ও মহানগরীতে ৩৩৩ জনের নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ১১৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। মোট নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ৩৪ শতাংশ।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। গতকাল শনিবার সকালে রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা: সাইফুল ফেরদৌস সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গেল ২৪ ঘণ্টায় রামেক হাসপাতালে মৃত চারজনের মধ্যে একজন করোনা পজিটিভ ছিলেন। অন্য তিনজন মারা গেছেন করোনা উপসর্গ নিয়ে। করোনা পজিটিভ হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। এ ছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া তিনজন রোগীর বাড়ি রাজশাহীতে।
ডা: সাইফুল ফেরদৌস বলেন, চলতি মাসের প্রথম ১২ দিনে রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন ১১১ জন। এর মধ্যে ৬৪ জনই মারা গেছেন করোনা শনাক্ত হওয়ার পর। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। অপর দিকে করোনার ‘নতুন হটস্পট’ রাজশাহীতে এক দিনের ব্যবধানে ফের বেড়েছে সংক্রমণের হার। বৃহস্পতিবার দুইটি ল্যাবে রাজশাহীর ৩৬৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ১৪৩ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। সংক্রমণের হার ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ।


আরো সংবাদ



premium cement
বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ট্রাম্পের বিচার নিয়ে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট চুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত, ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত আমদানি ব্যয় কমাতে দক্ষিণাঞ্চলের সূর্যমুখী তেলের আবাদ পাকুন্দিয়ায় গানের আসরে মারামারি, কলেজছাত্র নিহত আবারো হার পাকিস্তানের, শেষ সিরিজ জয়ের স্বপ্ন পাটকেলঘাটায় অগ্নিকাণ্ডে ৩ দোকান পুড়ে ছাই ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু দোয়ারাবাজারে পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যা : স্বামীর আমৃত্যু কারাদণ্ড গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার ভারতে দ্বিতীয় পর্বে ৮৮ আসনে ভোট

সকল