২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

টাকা তুলতে ব্যাংকে উপচে পড়া ভিড়

এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় গ্রাহক হয়রানি; ১১ ও ১২ মে ব্যাংক লেনদেন হবে
-

ব্যাংকগুলোতে টাকা তোলার জন্য গতকাল গ্রাহকের উপচে পড়া ভিড় ছিল। আগামী ১৩ এপ্রিল থেকে ঈদের ছুটির জন্য ব্যাংক লেনদেন শেষ হয়ে যাচ্ছে। একে তো সীমিত পরিসরের ব্যাংকিং, সেই সাথে ঈদের কেনাকাটা যুক্ত হওয়ায় ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য গ্রাহকের বাড়তি চাপ ছিল। এ চাপ সামলাতে গতকাল ব্যাংক লেনদেনের নির্ধারিত সময়ের পরেও বেশির ভাগ ব্যাংকের শাখা খোলা রাখতে হয়েছে। এ দিকে করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে অনেকেই প্রয়োজনীয় টাকা উত্তোলন করতে এটিএম বুথে ছুটেছে। কিন্তু দুপুরের আগেই বেশির ভাগ এটিএম বুথে টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় গ্রাহক ব্যাংকের শাখার দিকে ছুটেছে।
জানা গেছে, মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় গত ৪ এপ্রিল থেকেই সীমিত পরিসরে ব্যাংক লেনদেন হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে গত ৪ এপ্রিল থেকে ব্যাংক লেনদেনের সময়সীমা কমিয়ে আড়াই ঘণ্টায় নামিয়ে আনা হয়েছে। ওই সময় ব্যাংক লেনদেন হয় ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। পরে এক ঘণ্টা বাড়িয়ে ১টা পর্যন্ত করা হয়। সর্বশেষ গেল সপ্তাহে আরো এক ঘণ্টা বাড়িয়ে ২টা পর্যন্ত পুনর্নির্ধারণ করা হয়।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এক দিকে ব্যাংকে লেনদেনের সময়সীমা কমিয়ে আনা হয়েছে, সেই সাথে বেড়েছে টাকা উত্তোলনের চাপ। ফলে ব্যাংকাররা সীমিত সময়ের মধ্যে বেশি গ্রাহকের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, ব্যাংকাররা ঠিকই ব্যাংকে আসছেন। শুধু সময় কমিয়ে দেয়ায় অল্প সময়ে গ্রাহকের ভিড় বেড়ে যাচ্ছে। এর বাইরে ঈদের আগে গ্রাহকের সাধারণত বাড়তি কেনাকাটা থাকে। প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে প্রয়োজন হয় বাড়তি নগদ টাকা। এ নগদ টাকা উত্তোলনের জন্য গ্রাহক ব্যাংকে আসছেন। এ কারণে সীমিত ব্যাংক লেনদেনের সময় টাকা উত্তোলনের বাড়তি চাপ সামলানো কঠিন হয়ে উঠেছে।
জানা গেছে, ঈদের আগে গত শুক্র ও শনিবার ব্যাংক বন্ধ ছিল। দুই দিন ছুটির পর সাধারণত সপ্তাহের প্রথম দিনে ব্যাংক লেনদেনের চাপ বেশি থাকে। এরওপর আজ সোমবার ব্যাংক শবে কদরের জন্য বন্ধ থাকবে। ঈদের আগে ১১ মে অর্থাৎ মঙ্গলবার ব্যাংক খোলা থাকার কথা ছিল। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী ঈদের আগের দিন ব্যাংক বন্ধ থাকে। সে অনুযায়ী ১৩ মে ঈদ হলে ১২ মে ব্যাংক বন্ধ থাকার কথা। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সীমিত পরিসরে ব্যাংক লেনদেনের জন্য এবার ঈদের আগের দিন অর্থাৎ ১২ মে ব্যাংক খোলা রাখার ঘোষণা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ঈদ যে দিনই হোক, আগামী ১৩, ১৪ ও ১৫ মে ব্যাংক বন্ধ থাকবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো: সিরাজুল ইসলাম বলেন, গ্রাহকের কথা চিন্তা করে আগামী মঙ্গলবার ও বুধবার ব্যাংক খোলা থাকবে।
এ দিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় চলমান লকডাউনের পাশাপাশি ঈদের ছুটি শুরু হলে মানুষ অনেকটা ঘরবন্দী হয়ে পড়বে। তাই প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সারতে ও নগদ টাকা হাতে রাখতে গ্রাহকরা নগদ টাকা উত্তোলনের জন্য গতকাল সপ্তাহের প্রথমে দিনেই ব্যাংকে ভিড় করেন। সকাল থেকে এটিএম বুথগুলোতে টাকা উত্তোলনের চাপ থাকে। কিন্তু একসাথে বেশি মুনষের টাকা উত্তোলনের চাপ থাকায় দুপুরের আগেই বেশির ভাগ এটিএম বুথে টাকা শেষ হয়ে যায় বলে গ্রাহকরা অভিযোগ করেন। প্রয়োজনীয় টাকা উত্তোলন করতে অনেকেই ব্যাংকের শাখায় আসেন। ২টা পর্যন্ত ব্যাংক লেনদেনের সময়সীমা বেধে দেয়ায় তাই নির্ধারিত সময়েই প্রতিটি ব্যাংকের শাখায়ই গ্রাহকের উপচে পড়া ভিড় থাকে। বাধ্য হয়েই গ্রাহকের চাপ সামলাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া সময়সীমার চেয়ে বেশি সময়ে লেনদেন করতে দেখা গেছে।
ব্যাংকের মতো এটিএম বুথগুলোতে ছিল গ্রাহকদের দীর্ঘ লাইন। এটিএম বুথের ধারণক্ষমতা সীমিত। কিন্তু গতকাল স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বাড়তি টাকা উত্তোলন করায় বারবার এটিএম বুথে টাকার সঙ্কট দেখা দেয়। গ্রাহকরা এক বুথ থেকে টাকা না পেয়ে অন্য বুথে যায়। এ কারণে গ্রাহকদের বাড়তি পরিশ্রম ও সময় ব্যয় করতে হয়।
এ বিষয়ে একটি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের ভয় উপেক্ষা করে কোনো গ্রাহক যখন তার প্রয়োজন মেটাতে ব্যাংকের শাখায় টাকা উত্তোলন করতে আসেন তখন শাখা ব্যবস্থাপকের গ্রাহকের অর্থ সরবরাহ করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প থাকে না। এ কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা শাখায় এসেছেন তাদেরকে একসাথে শাখায় প্রবেশ করিয়ে ব্যাংক শাখার প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়। বিকল্প ফটক দিয়ে ভেতরের গ্রাহকদের লেনদেন শেষে বের করা হয়। ওই শাখা ব্যবস্থাপকের মতে, ব্যাংক লেনদেন কমপক্ষে ৩টা পর্যন্ত করা প্রয়োজন। অন্যথায় স্বল্প সময়ে গ্রাহকের ভিড় সামলানো সম্ভব হয় না। এ সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মানাও কঠিন হয়ে পড়ে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল