২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

টাকা না দিলে জেলে যেতে হবে

পিপলস লিজিংয়ের ঋণখেলাপিদের হাইকোর্ট
-

পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের ঋণখেলাপিদের উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেছেন, আগে প্রথম একটা কিস্তির টাকা দেবেন তারপর আলোচনা, না দিলে কারাগারে যেতে হবে। আদালত বলেন, এটা চোর-ডাকাতের টাকা না, এটা জনগণের টাকা। আপনারা তো টাকা নিয়েছেন। আর যারা এ প্রতিষ্ঠানে টাকা জমা রেখেছিলেন, তারা তো না খেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন।
বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চে গতকাল বৃহস্পতিবার পিপলস লিজিংয়ের ৪৫ জন ঋণখেলাপি হাইকোর্টে হাজির হয়ে তাদের ঋণের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানানোর সময় আদালত এ কথা বলেন।
আদালত একজন ঋণখেলাপিকে উদ্দেশ করে বলেন, টাকা না দিয়ে কোনো মন্ত্রী বা কারো প্রভাবে কাজ হবে না। আইনের মধ্যে থেকেই টাকা দিতে হবে। প্রথম ইনস্টলমেন্ট (কিস্তি) দিয়ে তারপর বাকি আলোচনা করে নেবেন বোর্ড বা কমিটির সাথে। শুনানির সময় একজন ঋণগ্রহীতা আদালতে বলেন, আমি ২৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা নিয়েছি। তা বেড়ে ৭২ কোটি টাকা হয়েছে। এ সময় আদালত বলেন, প্রথম দায়িত্ব হলো, কিছু টাকা দিতে হবে। টাকা না দিলে কাজ শুরু করবে কি করে। প্রথম কিস্তির টাকা দেয়ার পর আলোচনা হবে। টাকা দিতে হবে তা না হলে ভিতরে (জেলে) পাঠানো হবে।
আদালতে অপর একজন ঋণগ্রহীতা জানান, তিনি ৩৮৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। আদালত তাকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি তো পুরনো ব্যবসায়ী। এ অবস্থা কেন? কিভাবে টাকা পরিশোধ করবেন? এ সময় আদালত আরো বলেন, এখানে মন্ত্রীর কোনো ইনফ্লুয়েন্সের চেষ্টা করবেন না। ওপেন বলছি নিয়ম অনুযায়ী সব কিছু হবে।
এরপর একজন ঋণগ্রহীতা বলেন, আমি ১৬৮ কোটি টাকা নিয়েছি। ৬৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেছি। আদালত বলেন, অ্যাফিডেভিট দিয়ে বলতে হবে বাকি টাকা কিভাবে পরিশোধ করা হবে। প্রথমে একটি অ্যামাউন্ট পরিশোধ করতে হবে।
আদালত বলেন, যদি এখানে ১০ জনের কমিটি বানানো হয়। তারা প্রতিষ্ঠানটি চালাবে। এখানে ঋণগ্রহীতাদের দায়িত্ব হলো, প্রথমে কিছু টাকা দিতে হবে। কিছু টাকা না দিলে কাজ শুরু করবে কিভাবে।
গতকাল হাজিরা দেয়া ৪৫ ঋণগ্রহীতার কেউ কেউ টাকা পরিশোধে সময় চান, কোনো কোনো ঋণগ্রহীতা মারা গেছেন এখন তার কী হবে, সে ব্যাখ্যা চান তার উত্তরসূরিরা। এ সময় বিচারপতি আগে একটি কিস্তি পরিশোধ করার পরামর্শ দেন। আদালত বলেন, এটি একটি তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান। এখানে জনগণের টাকা। এটা চোর-বাটপাড়দের টাকা না।
এক আইনজীবী আদালতকে বলেন, আদালত যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তাতে আমানতকারীরা আলোর মুখ দেখছেন। বাইরে আলোচনা হচ্ছে এভাবে যদি আরো দুই-একটি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা যায়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা সাহস পাবেন। এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হবে।
তখন বিচারপতি খুরশীদ বলেন, এটা তো কোর্টের কাজ না। এর জন্য যাদের দায়িত্ব রয়েছে তারা কেন এটা করছেন না? আমাদের কাজ হলো প্রতিষ্ঠান ওয়েন্ডিং আপ (অবসায়ন) করা। এখন প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচাতে চাই বলে এসব করতে হচ্ছে।
পিপলস লিজিং থেকে ঋণ গ্রহণ করা সর্বনিম্ন ৫ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ পর্যন্ত ২৮০ জনকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। তলবে এর আগে ২৩ ফেব্রুয়ারি ৫১ জন হাজির হয়েছিলেন। গতকাল দ্বিতীয় দফায় ৪৫ জন ঋণখেলাপি হাজির হন। গত দুই দিনে যারা আসেননি তাদের আগামী ৯ মার্চ হাজির হতে আবারো বলেছেন আদালত। এ বিষয়ে হাইকোর্ট বলেন, আদালতের তলবে যারা আসেননি, তাদের আরেকবার সুযোগ দেয়া হবে। এরপরও তারা আদালতে হাজির না হলে প্রয়োজনে গ্রেফতার করে কোর্টে হাজির করা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুর্নীতি রোধে সমন্বিতভাবে কিভাবে কাজ করা যায় সে বিষয়ে আগামী ধার্য তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ও সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্য শুনবেন হাইকোর্ট।
গত ২১ জানুয়ারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে পাঁচ লাখ টাকা ও তার বেশি অর্থঋণ নিয়ে খেলাপি হওয়া ২৮০ ব্যক্তিকে তলব করেন হাইকোর্ট। ২৩ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি তাদের পর্যায়ক্রমে আদালতে হাজির করে ঋণ ও ঋণ পরিশোধের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে বলা হয়।ধারাবাহিক লোকসানে থাকা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে পুঁজিবাজারে শেয়ার লেনদেন বন্ধ করে। এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা বোর্ড ভেঙে নতুন বোর্ড গঠন করে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

 


আরো সংবাদ



premium cement