২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ডিএসসিএসসি গ্র্যাজুয়েটরাই ২০৪১ সালের সৈনিক হিসেবে কাজ করবেন : প্রধানমন্ত্রী

-

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নতসমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) গ্র্যাজুয়েটরা সেই ২০৪১-এর উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক হবেন।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ডিএসসিএসসির কোর্স সমাপনী (২০২০-২১) অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে যারা গ্র্যাজুয়েশন লাভ করেছেন তারাই আমার সেই ২০৪১ এর উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক হবেন। কাজেই, দেশকে যেন আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি এবং দেশের ভাবমর্যাদা যাতে উজ্জ্বল হয় সে দিকেই সবাইকে দৃষ্টি রাখতে হবে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে দেশকে যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা থেকে টেনে তুলে স্বল্পোন্নত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে যাওয়ার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য আরো অনেক দূর যাওয়া। আমাদের সার্বিক প্রচেষ্টায় আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছি। যে কারণে তার সরকার পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পাশাপাশি ১০ বছর ও ২০ বছর মেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে এবং সমগ্র গাঙ্গেয় বদ্বীপের উন্নয়নে শতবর্ষ মেয়াদি ‘ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০’ নামে এক মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে, মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সের অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে ডিএসসিএসসির কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো: জুবায়ের সালেহীন স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের কমান্ড্যান্টকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সনদপত্র প্রদানের অনুমতি দেন শেখ হাসিনা। এই কোর্সে ১৬টি বন্ধুপ্রতিম দেশের ৪৩ জন বিদেশী কর্মকর্তা এবং ১০ নারী কর্মকর্তাসহ ২২৫ জন সশস্ত্রবাহিনীর কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ শেষ করে এ দিন পিএসসি অর্জন করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ৪৩টি বন্ধুপ্রতিম দেশের এক হাজার ২০৮ জন অফিসার এ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে বলেন, আজ আপনাদের জীবনের একটি বিশেষ দিন। আপনারা সমর বিজ্ঞান এবং সাম্প্রতিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের ওপর উচ্চতর জ্ঞান লাভ করেছেন। আমার বিশ্বাস, এই প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালনে এবং যেকোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হবে। প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসের কারণে সাম্প্রতিককালের বিশ^ স্থবিরতার প্রসঙ্গ টেনে এই সময়ে কোর্স সম্পন্ন করায় শিক্ষার্থী এবং ডিএসসিসির কমান্ড্যান্টসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, নানা প্রতিকূলতা ও ঝুঁকিসহ কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্য দিয়ে আমরা নতুন বছর ২০২১-এ পদার্পণ করেছি। করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্ব যখন স্থিমিত, তখন দেশের মানুষের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি আমরা দেশের অর্থনীতিসহ সব উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সমর্থ হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরই ধারাবাহিকতায়, সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ নিজস্ব উদ্ভাবিত উপায়ে অত্যন্ত অল্প সময়ে ও কম খরচে নিরাপদ ই-লার্নিং সলিউশন স্থাপন করে নিজস্ব সার্ভার এবং ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীদের নিরাপদ অনলাইন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। ফলে এক দিনের জন্যও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়নি। সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের এই উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয়, উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ বাংলাদেশের প্রাচীনতম ট্রাই সার্ভিস প্রতিষ্ঠান। এ সময় ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি কুমিল্লার তৎকালীন সামরিক অ্যাকাডেমিতে প্রথম শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানে বিদায়ী ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণের চুম্বক অংশ উদ্ধৃত করেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমার বিশ্বাস, আমরা এমন একটি অ্যাকাডেমি সৃষ্টি করব, সারা দুনিয়ার মানুষ আমাদের এই অ্যাকাডেমি দেখতে আসবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বাস্তবে এটা আমরা করতে পেরেছি। আজকে আমাদের এই অ্যাকাডেমি সারা বিশে^র কাছে বিস্ময় এবং সবাই এটা অনুভব করেন এবং এর প্রশংসা করেন।
বঙ্গবন্ধুর করে যাওয়া পররাষ্ট্রনীতির অনুশীলনে আন্তর্জাতিক বিশে^ বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ অবস্থান, রোহিঙ্গা সমস্যা, দেশে নারীর ক্ষমতায়নসহ অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখায় তার সরকারের ভূমিকাও ভাষণে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’Ñ এ নীতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা আন্তঃরাষ্ট্রীয় সুসম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিতে সর্বদা সচেষ্ট। আজ বাংলাদেশের সাথে সব দেশের একটা সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ঐক্য উন্নয়নে বাংলাদেশ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও গৌরবময় ভূমিকা রাখছে। শেখ হাসিনা বলেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদসহ নানাবিধ সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা বিপন্ন মানবতার ডাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছি। মিয়ানমার থেকে প্রায় ১০ লাখেরও অধিক রোহিঙ্গা আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাদেরকে আমরা আশ্রয় দিয়েছি। এজন্য আমরা কোনো দেশের সাথে কোনো দ্বন্দ্বে লিপ্ত হইনি। আমরা মিয়ানমারের সাথে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি যাতে তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এ জন্য বন্ধুত্বসুলভ একটা মনোভাব নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জনগণের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনসহ সব ক্ষেত্রে তার সরকার ব্যাপক সাফল্যের পরিচয় রেখে চলছে, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের এ যুগে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছি। এ বছর প্রশিক্ষণার্থী কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন বিদেশী নারী অফিসারসহ মোট ১০ জন নারী অফিসার রয়েছে। প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী অফিসারের অংশগ্রহণ, আমাদের সশস্ত্রবাহিনীতে নারীর ক্ষমতায়নের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের অবকাঠামোগত সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, নতুন জনবল অনুমোদনের পাশাপাশি স্টাফ কলেজের বেশ কিছু অবকাঠামোগত পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হয়েছে, যা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে আরো বেগবান করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এ ছাড়াও এ রকম আরো নির্মাণ ও উন্নয়ন কার্যক্রমের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে এই কলেজের প্রশিক্ষণ কলেবরকে আরো আধুনিক ও যুগোপযোগী করবে বলেন তিনি। তার সরকারের বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের পাশাপাশি আগামী বছরের ২৬ মার্চ থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন শুরুর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিববর্ষে আমাদের অঙ্গীকার বাংলাদেশের একটি মানুষও আর গৃহহারা, ভূমিহীন থাকবে না। প্রতিটি মানুষেরই একটা ঠিকানা হবে এবং প্রতি ঘরেই বিদ্যুতের আলো জ¦লবে। শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সে সময় প্রতিটি মানুষের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি তারা উন্নত জীবনের ও অধিকারী হবেন। তিনি বলেন, আমি বিশ^াস করি, এটা কোনো কঠিন কাজ নয়। এটা করা সম্ভব। হয়তো চিরদিন থাকব না কিন্তু পরিকল্পনাটা দিয়ে যাচ্ছি।


আরো সংবাদ



premium cement