২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিচারের আশায় দিন কাটছে রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গাদের

শরণার্থী আগমনের তৃতীয় বছর আজ
-

মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে জাতিগতভাবে নির্মূল করার অভিপ্রায়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পরিকল্পিত গণহত্যা, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের মুখে রোহিঙ্গাদের ব্যাপকভাবে নিজ দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার তৃতীয় বছর আজ। ২০১৭ সালের এ দিনে বৌদ্ধ উগ্রবাদীদের সাথে নিয়ে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর পরিকল্পিত নিধনযজ্ঞ চালিয়েছিল। মানবতাবিরোধী এসব অপরাধের জন্য মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একাধিক আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার চলছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ ও জাতিসঙ্ঘের সাথে চুক্তিও করেছে দেশটি। কিন্তু নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে, নিত্য নতুন অজুহাত দাঁড় করিয়ে এখনো পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার। বর্তমানে রাখাইনে বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী আরাকান আর্মির সাথে চলমান সশস্ত্র সঙ্ঘাত এবং আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রোহিঙ্গা নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনায় আগ্রহী নয় মিয়ানমার।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা-নির্যাতন বন্ধ, তাদের বাস্তুচ্যুতিরোধ এবং গণহত্যার অভিযোগ সংশ্লিষ্ট আলামতগুলো সংরক্ষণ করার জন্য মিয়ানমারের প্রতি গত ২৩ জানুয়ারি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা ওআইসির প্রস্তাবনা অনুযায়ী আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনে। আইসিজেতে রাষ্ট্র হিসেবে মিয়ানমারের বিচার হবে। অন্য দিকে গণহত্যাসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আলাদাভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) বিচারের মুখোমুখি করার প্রক্রিয়া চলছে। রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান বারবার উপেক্ষা করে চলেছে মিয়ানমার। রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গারা আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিচারের আশায় আজো দিন কাটাচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের দেশ ত্যাগের তৃতীয় বছর সামনে রেখে গতকাল সোমবার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ (সিপিএস) একটি ওয়েবিনারের (অনলাইন আলোচনা) আয়োজন করে। এতে মালয়েশিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সৈয়দ হামিদ আলবার, মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার, কানাডার হাইকমিশনার বেনো প্রিফনটেইন, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক যোগ দেন।
সৈয়দ হামিদ আলবার বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট মিয়ানমার ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় নয়, এটা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যা। তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান জোটগতভাবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে না। কেননা জোটভুক্ত দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার নীতি আসিয়ান অনুসরণ করে। তবে ইস্যুটি নিয়ে সার্কসহ অন্যান্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে খোলামেলা আলোচনা করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা একটি নিরাপত্তা ইস্যু। দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকারগুলো সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা না নিলে তাদের মধ্যে সশস্ত্র গ্রুপ সক্রিয় হয়ে উঠবে। আর এ ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি হলে চীন বা ভারত কেউই তার প্রভাবের বাইরে থাকবে না। তাই আঞ্চলিক নিরাপত্তার স্বার্থেই চীন ও ভারতকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
রোহিঙ্গাদের সর্ববৃহৎ মানবিক সহায়তাদানকারী দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার বলেন, শরণার্থীদের খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করে চলেছে। রাখাইনে মানবাধিকার পরিস্থিতি সমুন্নত রাখা এবং আনান কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। এ জন্য জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক আদালতগুলোতে সক্রিয় থাকা প্রয়োজন। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমারের ওপর যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক চাপ অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চাপ সামলানো কেবল বাংলাদেশের একার দায়িত্ব না। এই চাপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ভাগ করে নিতে হবে।
রাখাইনের ঘটনা কানাডার জনগণকে আতঙ্কিত করে তুলেছিল বলে মন্তব্য করে হাইকমিশনার বেনো প্রিফনটেইন বলেন, ইস্যুটি খতিয়ে দেখতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী একজন বিশেষ দূত নিয়োগ দিয়েছিলেন। বিশেষ দূত বব রে সার্বিক দিকটি খতিয়ে দেখে কানাডার প্রধানমন্ত্রীকে সুপারিশসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন দিয়েছেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। আর এ সমাধানের পথ রয়েছে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে। রাখাইনের ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করে কানাডার পার্লামেন্টে সর্বসম্মত প্রস্তাব পাস হয়েছে। গণহত্যার জন্য মিয়ানমারকে বিচারের আওতায় আনতে আইসিজেতে সক্রিয় রয়েছে কানাডা।
রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ দীর্ঘমেয়াদে চরমপন্থার বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে হাইকমিশনার বলেন, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ও মানবিক কর্মীদের সাথে স্থানীয়দের দূরত্ব ঘোচানো এবং আস্থার সঙ্কট দূর করার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রোহিঙ্গারা অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ সব দিক থেকে অধিকারবঞ্চিত। তবে তাদের অবশ্যই মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে। এ জন্য রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সক্রিয় থাকতে হবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘমেয়াদে অবস্থান কক্সবাজারের স্থানীয় অধিবাসীদের আর্থ-সামাজিকভাবে ক্ষতির মুখে ফেলেছে। বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর চাহিদা মেটাতে কক্সবাজারের পরিবেশ বিপর্যস্ত হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করতে চায় সরকার। বঙ্গোপসাগর থেকে উদ্ধার হওয়া ৩০৭ জন রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে সেখানে বসতি শুরু করেছে। জাতিসঙ্ঘ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মিডিয়ার প্রতিনিধিদের ভাসানচর পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়া হবে, যাতে তারা সরেজমিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
পররাষ্ট্রসচিব জানান, আগামী কিছুদিনে মধ্যে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ৩-জি এবং ৪-জি ইন্টারনেট সেবা আবারো চালু করা হবে। রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য মিয়ানমারের পাঠ্যক্রমে শিক্ষা নেয়ার সুযোগ সম্প্রসারিত করা হবে। একই সাথে রোহিঙ্গা তরুণদের জন্য কম্পিউটারসহ কারিগরি শিক্ষা উন্মুক্ত করা হবে।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বাংলাদেশ শর্তসাপেক্ষে রোহিঙ্গাদের তৃতীয় কোনো দেশে স্থানান্তরের অনুমতি দিতে পারে। এ জন্য সর্বোচ্চ দুই বছরের মধ্যে কোনো দেশ অন্তত ৫০ লাখ রোহিঙ্গাকে নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারে।
প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে গুরুত্বারোপ
এ দিকে কক্সবাজার (দক্ষিণ) সংবাদদাতা জানান, রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া জোরদার করার জন্য জাতিসঙ্ঘ, আইএনজিও এবং সরকারের কাছে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ)। তারা জানায়, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে সময় লেগেছিল ১০ বছর। যদি ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর প্রত্যাবাসন যদি শুরুও হয়, তবে তা সম্পন্ন হতে এক দশকেরও বেশি সময় লাগবে, তাই এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে অলস অবস্থায় রাখা উচিত নয়, তাদের মানবিক মর্যাদার সুবিধার্থে তাদের জন্য সহজে বহন ও স্থানান্তরযোগ্য ঘর, শিক্ষা, উপার্জনমূলক প্রশিক্ষণ দেয়া উচিত। সিসিএনএফ রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনায় স্থানীয়দের অংশগ্রহণ, খরচ কমিয়ে আনা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে ১১ দফা সুপারিশমালার পুনরুল্লেøখ করে। সেগুলো হলো (১) সরকারের নেতৃত্বাধীন একটি একক ব্যবস্থাপনা এবং সব তহবিল ব্যবস্থাপনার একটি একক চ্যানেল বা মাধ্যম থাকতে হবে (২) জাতিসঙ্ঘের সংস্থাগুলোকে সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করতে হবে, সরকারের বিকল্প সমান্তরাল প্রতিষ্ঠান হিসেবে নয় (৩) রোহিঙ্গা শিবিরে ত্রাণ ও মানবিক কর্মীদের যাতায়াত খরচ কমিয়ে আনা এবং কক্সবাজার শহরের ওপর চাপ কমাতে ত্রাণ কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত সংস্থাগুলোর কার্যালয় টেকনাফ বা উখিয়া স্থানান্তর করা। (৪) শরণার্থীদের জন্য সহজে স্থানান্তরযোগ্য আবাসন, শিক্ষা এবং আয়বর্ধনমূলক প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। (৫) মানবিক এবং ত্রাণকর্মীদেরকে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে প্রয়োজনে ২৪ ঘণ্টা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেয়া, যাতে ক্যাম্পগুলোতে মাদক ব্যবসা, মানবপাচার, নারীর প্রতি সহিংসতা এবং বিশেষত উগ্রপন্থী কোনো কার্যক্রম হতে না পারে। (৬) স্থানীয় এনজিও এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইএসসিজি এবং আরআরসিসির সভাগুলোতে এবং জাতীয় টাস্কফোর্সে (এনটিএফ) অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া। (৭) অর্থসহায়তার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, ব্যবস্থাপনা খরচ এবং কর্মসূচির খরচ সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা পেতে এ সম্পর্কিত পরিষ্কার তথ্য প্রকাশ করা, যাতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সরাসরি কত খরচ হচ্ছে সে বিষয়ে তথ্য জানা যায় এবং এসব বিষয়ে জনগণের নজরদারি নিশ্চিত হতে পারে। (৮) বিদেশীদের ওপর নির্ভরতা কমাতে স্থানীয়দের কাছে কিভাবে প্রযুক্তি-দক্ষতা স্থানান্তরিত করা হবে তার একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ। (৯) স্থানীয় এনজিওদের জন্য একটি বিশেষ তহবিল (পুলড ফান্ড) গঠন এবং মাঠপর্যায়ের সব কার্যক্রম স্থানীয় এনজিও দিয়ে করানো। (১০) জাতিসঙ্ঘের সব অঙ্গ সংস্থা এবং আইএনজিওগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য সামনে রেখে অংশীদারিত্ব নীতিমালা অনুসরণ করা, অংশীদারিত্বে স্থানীয় এনজিওদের অগ্রাধিকার দেয়া, অংশীদার বাছাইপ্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক করা। (১১) আইএনজিওদের কক্সবাজার এবং বাংলাদেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ না করে তাদের নিজ নিজ দেশ থেকে তহবিল সংগ্রহ করা।


আরো সংবাদ



premium cement
নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ট্রাম্পের বিচার নিয়ে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট

সকল