২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পবিত্র ঈদুল আজহা কাল

-

আগামীকাল হিজরি ১০ জিলহজ শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহা, কোরবানির ঈদ। ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করবেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। মুসলিম মিল্লাতের পিতা হজরত ইবরাহীম আ:-এর ত্যাগের স্মৃতি বিজড়িত এই ঈদ। মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রয়োজনে নিজের প্রিয় বস্তুকে কোরবানি দেয়ার প্রস্তুতির শিক্ষাই এই ঈদের আদর্শ।
ঈদুল আজহার সাথে পবিত্র হজের সম্পর্ক রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পবিত্র মক্কা নগরীর অদূরে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার মধ্য দিয়ে পবিত্র হজ পালিত হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে মাত্র ১০ হাজারের মতো মুসলিমের অংশগ্রহণে এবারের হজ পালিত হয়। আজ শুক্রবার সৌদি আরবে ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে। সকালে মুজদালিফা থেকে ফিরে হাজিরা মিনায় অবস্থান করে পশু কোরবানিসহ হজের অন্যান্য কার্যাদি সম্পাদন করবেন।
মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে ঈদুল আজহা অত্যন্ত ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, আনন্দ ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়। সমার্থ্যবান মুসলমানরা পশু কোরবানি করেন। রাজধানীসহ সারা দেশের পশুর হাটগুলো গত দুই-তিন দিন ধরে চলছে। বেচাকেনা চলবে ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত। করোনাভাইরাসের অন্য বছরের মতো এবার স্বজনদের নিয়ে ঈদ উদযাপনের জন্য মানুষের ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার তাগাদা নেই। বাস, ট্রেন ও লঞ্চে নেই কোনো ভিড়। আজ থেকে তিন দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে।
ঈদুল আজহা হজরত ইবরাহীম আ: ও তাঁর পুত্র হজরত ইসমাঈল আ:-এর সাথে সম্পর্কিত। হজরত ইবরাহীম আ: স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করতে গিয়েছিলেন। আসলে আল্লাহর পক্ষ থেকে এই আদেশ ছিল হজরত ইবরাহীমের জন্য পরীক্ষা। তিনি পুত্রকে আল্লাহর নির্দেশে জবাই করার সব প্রস্তুতি নিয়ে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ফলে সাথে সাথে পুত্র ইসমাঈলের পরিবর্তে পশু কোরবানি করার নির্দেশ এসেছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে। সেই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি ধারণ করেই হজরত ইব্রাহিম আ:-এর সুন্নত হিসেবে পশু জবাইয়ের মধ্য দিয়ে কোরবানির বিধান এসেছে ইসলামী শরিয়তে। সামর্থ্যবানদের জন্য পশু কোরবানি করা ওয়াজিব। আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করার পর আনন্দ থেকেই উদযাপিত হয় ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। জিলহজ মাসের ১০ তারিখে এ ঈদ উদযাপিত হয়। এ ছাড়া এ মাসের ১১ ও ১২ তারিখও কোরবানি করা যায়। ইসলামে কোরবানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পবিত্র কুরআনের সুরা কাউসারে এ ব্যাপারে বলা হয়েছেÑ ‘অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়–ন এবং কোরবানি করুন।’ সূরা হজে বলা হয়েছে ‘কোরবানি করা পশু মানুষের জন্য কল্যাণের নির্দেশনা।’ কোরবানির মূল উদ্দেশ্যই তাকওয়া বা খোদাভীতি। এ প্রসঙ্গে কুরআনে বলা হয়েছেÑ ‘এগুলোর গোশত আমার কাছে পৌঁছায় না। কিন্তু তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে যায়।’ রাসূল সা: বলেছেন, ‘ঈদুল আজহার দিন কোরবানির চেয়ে আর কোনো কাজ আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয় নয়।’ অন্যত্র বলেছেনÑ ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পারও কোরবানি দিলো না সে যেন আমার ঈদগাহে না যায়।’
বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায়, পৃথিবীতে মানবজাতির সূচনা থেকেই কোরবানির প্রচলন। হজরত আদম আ:-এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিল সর্বপ্রথম কোরবানি দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে কুরআনে এসেছে- ‘আপনি তাদেরকে আদমের দুই পুত্রের বাস্তব অবস্থা পাঠ করে শোনান। যখন তারা উভয়ে কিছু কোরবানি করেছিল। তখন তাদের একজনের কোরবানি গৃহীত হয়েছিল এবং অপরজনেরটি গৃহীত হয়নি’ (সুরা মায়েদা-২৭)।
আল্লাহর সন্তুষ্টিই কোরবানির মূল উদ্দেশ্য। তাঁর পথে প্রয়োজনে জীবন ও সবচেয়ে প্রিয় বস্তু উৎসর্গের জন্য তৈরি হওয়ার শিক্ষাই এতে নিহিত। এ জন্যই কোরবানির পশু জবাইয়ের সময় বলা হয়Ñ ‘ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহ্ইয়াইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।’ অর্থাৎ- নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কোরবানি আমার জীবন, আমার মৃত্যু সবই আল্লাহর জন্য, যিনি নিখিল বিশ্বের প্রতিপালক।’
গরু, মহিষ, উট, ভেড়া, ছাগল, দুম্বা থেকে যেকোনো একটি প্রাণী দিয়ে কোরবানি করা যায়। কোরবানির পশুর গোশত তিন ভাগ করে একভাগ আত্মীয়স্বজনকে, আরেক ভাগ গরিবদের মধ্যে বণ্টন এবং বাকি এক ভাগ নিজেরা খাওয়া সুন্নত। কোরবানির চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে নিজে ব্যবহার করার অনুমতি আছে। তবে বিক্রি করলে তার অর্থের হকদার গরিব মিসকিনরা। ঈদুল আজহার দুই রাকাত নামাজ জামাতে আদায় করা ওয়াজিব।

 


আরো সংবাদ



premium cement