২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাজনৈতিক দলে নারী সদস্য নিয়ে ইসির প্রস্তাব আত্মঘাতী

সংবাদ সম্মেলনে সুজন
-

বাংলাদেশের প্রতিটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সব স্তরের কমিটিতে ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) তার সময়সীমা তুলে দেয়ার প্রস্তাবকে একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের জন্য আত্মঘাতী বলে মনে করছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের সংশোধন নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সুজন নেতারা বলেন, মানুষের প্রত্যাশা যখন একটি স্বাধীন, সাহসী ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের, তখন নির্বাচন কমিশন এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদেরকে দুর্বল করছে- খেলো করছে।
সুজন কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ড. শাহদীন মালিক ও সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সুজন কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান, সুজন কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও রাজশাহী জেলা কমিটির সভাপতি সফিউদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী সদস্য ও ঢাকা জেলা কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী মুজবাহ আলীম এবং সুজন ঢাকা অঞ্চলের সমন্বয়কারী মুর্শিকুল ইসলাম শিমুল।
সুজন বলছে, রাজনৈতিক দলে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব পূরণের সময়সীমা তুলে দেয়ার উদ্যোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশন চরম দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। সুযোগ থাকার পরও দলগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি না করে পিছু হটতে চাইছে তারা। এই শর্ত পূরণে সময় বাড়ানোর পাশাপাশি দলগুলোর কাছে রোডম্যাপ আদায় করা উচিত। কিন্তু কোনোভাবেই সময়সীমা তুলে দেয়া যৌক্তিক নয়। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রয়োজনেই বাধ্যবাধকতা জরুরি।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন জনগণের কাছে দায়বদ্ধ, কোনো দলের কাছে নয়। এই আইনটি প্রণয়নের উদ্দেশ্য কি জনস্বার্থ না রাজনৈতিক দলের স্বার্থ এটাই আমার কাছে বড় প্রশ্ন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল যদি উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে লক্ষ্য হওয়া উচিত দলগুলোকে গণতান্ত্রিক করা। বর্তমান নির্বাচন কমিশন দীর্ঘদিন ধরেই জনস্বার্থবিরোধী কাজ করে আসছে, নানা অপকর্ম করে আসছে। আমি মনে করি এই আইনটা এই অপকর্মের ধারাবাহিতারই অংশ।
ড. শাহদীন মালিক বলেন, আমাদের জাতীয় জীবনে এমন উদ্ভট, বিবেচনাহীন সব বিষয় সামনে আসে, এসব নিয়ে সুস্থভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো কঠিন। একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান যদি মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষার বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় তখন কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবো। নির্বাচন কমিশন এখন আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় দুর্যোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কমিশন জাতির অগ্রগতির পথে অনেক বড় অন্তরায় হয়ে আবির্ভূত হয়েছে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এই উদ্যোগ চরম আপত্তিকর, অগণতান্ত্রিক, অগ্রহণযোগ্য এবং সংবিধানবিরোধী। একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান কিভাবে জনগণের অধিকার চর্চা সঙ্কোচিত করার মতো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে আমার কাছে পরিষ্কার না। আমি বলব এটি একটি চরম অগ্রহণযোগ্য একটি কাজ। এর ফলে আমাদের গণতন্ত্র চর্চার ন্যূনতম সুযোগও থাকবে না।
সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার বলেন, জাতীয় জীবনে করোনার মতো একটি দুর্যোগ চলাকালীন এরকম একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরকম একটি আইন প্রণয়ন করতে হলে সব দলের সাথে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় কমিশনের স্বচ্ছতা ও জবাদিহিতা নিশ্চিতকরণে ঘাটতি আছে বলে আমার মনে হয়।


আরো সংবাদ



premium cement