২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনা মোকাবেলায় জাতীয় কমিটি গঠনের দাবি বিএনপির

-

করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলায় জাতীয় কমিটি গঠন করার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উত্তরার বাসায় সাংবাদিকের সাথে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের এই অবস্থানের কথা তুলে ধরেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বারবার বলেছি, আমরা কখনোই সমালোচনার জন্য সমালোচনা করছি না, আমরা সরকারকে সাহায্য করতে চেয়েছি। আমরা বলেছি, আসুন আমরা সবাই একসাথে কাজ করি।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত একটা জাতীয় কমিটি তৈরি হয়নি, যেটা করা উচিত ছিল বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশ তো এক শ’ ৬০ মিলিয়নের দেশ। এখানে একেবারের নিচের দিককার অর্থনীতি। সেখানে এই ধরনের সঙ্কট মোকাবেলার ক্ষেত্রে যদি একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করা যায় সেটিই হবে দেশের জন্য ভালো কাজ। আমরা মনে করি যে, এখনো সময় আছে, জাতীয় কমিটি করা দরকার, এটা গঠন করা উচিত।
কিভাবে এই কমিটি হতে পারে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীকেই উদ্যোগ নিতে হবে। পলিটিক্যাল পার্টি, সিভিল সোসাইটি সবাইকে নিয়ে করতে হবে। এগুলোকে নিয়ে একখানে বসে মিটিং করতে হবেÑ তা বলছি না। ঘোষণা করে আপনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেই এটা করতে পারেন। তখন সবার মধ্যে একটা ধারণা আসবেÑ ‘উই আর ওয়ান’। আমরা এক। দে কেন ডু। অথবা ওইভাবে সব নিরাপত্তা রেখে যদি সভা করতে চান তা-ও পারেন।
করোনাভাইরাসের মহামারী থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই ঘরবন্দী মানুষজন বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষজনের জন্য খাবার পৌঁছে দেয়ার কাজ করছে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কটের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটা দাঁড়াচ্ছে সেটি হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষজনের আর্থিক সমস্যা। এখন সবাই এটার কথা বলছেন বিশেষ করে যারা অর্থনীতিবিদ আছেন তারা বেশি করে বলছেন। বাংলাদেশে বেশির ভাগ মানুষই এখন দিন আনে দিন খায়Ñ এই বিশাল একটা অংশ তারা; কিন্তু কয়েক দিন ধরে কোনো আয় করতে পারছে না এবং এটা একটা টার্নিং পজিশনে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।’
‘সেই মানুষগুলোর জন্য যদি ইমিডিয়েটলি উপযোগী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না যায় তাহলে কিন্তু একটা বড় রকমের বিপর্যয় দেখা দেবে। যেটা আমরা ১৯৭৪ সালে দেখেছি এই ধরনের বিপর্যয় দেখা দেবে। এই বিষয়গুলো সরকারের দেখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি যেটা মনে করি, সেনাবাহিনীকে যদি সেই কাজে লাগানো যায় এবং অন্য দিকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি যারা আছেন একেবারে তৃণমূলপর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান- মেম্বার যারা আছেন তাদের সম্পৃক্ত করে যদি সেই কাজগুলো করা যায়, রাজনৈতিক দলগুলোকে যদি সম্পৃক্ত করা যায়, তাদেরকে একসাথে করা যায়Ñ অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে। তার জন্য বরাদ্দ থাকতে হবে, তার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী থাকতে হবে।’
হাসপাতালের বর্তমান চিকিৎসাসেবার প্রসঙ্গে টেনে ফখরুল বলেন, ‘এখন ঢাকার অবস্থা কী দেখছেন যে, হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছে না; অন্য কোনো রোগে কেউ অসুস্থ হয়ে গেলেও। আজকের পত্রিকায় আছে যে, একজন এপেনডিসাইটিজের রোগী আটটা হাসপাতালে ঘুরে আল্ট্রাসোনোগ্রাম করতে পারছে না। বিষয়টাকে পুরোপুরি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে জাতিকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, এটা এক্সিসটেন্সের প্রশ্ন। সেই এক্সিসটেন্সের জন্য এখন সরকারকে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। বিষয়টার দায় সরকারের, দায়িত্ব সরকারের। তাকেই উদ্যোগটা নিতে হবেÑ বিরোধী দলকে কিভাবে কাজে লাগাবে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কিভাবে কাজে লাগাবে, পরিবেশ কিভাবে সৃষ্টি করবে। এখানে সমস্যা অনেক। আমরা মনে করি, সরকারের অনেক বেশি দায়িত্ব, তাদের উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।
সরকারের ভুলের কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি মনে করি এটা বড় ভুল হয়েছে যে, ছুটি ঘোষণা করে তার দুই দিন পর পর্যন্ত পরিবহন চালু রাখা। এতে করে সব মানুষজন ছড়িয়ে গেছে সারা দেশে। এটা হতে পারে যে, ঢাকাকে এলিমেটেড করেছে। এট দ্য সেইম টাইম, আমি দেখলাম এক কোটি মোবাইল ফোন ঢাকার বাইরে চলে গেছে।
এদের মধ্যে পত্রিকায় দেখেছি সত্য-মিথ্যা জানি না, ৪০ হাজার বিদেশফেরত প্রবাসীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই ৪০ হাজারের মধ্যে কতজনের করোনাভাইরাস আছে, জানা নেই। একটা জিনিস আমি যতটুকু দেখছি, তাপমাত্রা যত বাড়বে তত ভাইরাসের প্রকোপ কমে আসবে। দ্যাটস এ হোপফুল সাইন, আল্লাহ তায়লার অশেষ রহমত।
চীনের ঘটনার পর সরকার যথাযথ প্রাক-প্রস্তুতি নিলে সমস্যা প্রকট হতো না বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, সমস্যাগুলো প্রথম থেকে তারা (সরকার) দেখলে এটা প্রকট আকার ধারণ করত না। লকডাউন যেটাকে বলে সেটি তো সেভাবে হয়নি। যার ফলে দেখা গেছে যে, প্রথম দুই-এক দিন কক্সবাজারে পর্যন্ত মানুষ বেড়াতে গেছে, ছুটি কাটাতে সিলেটে গেছে। আমাদের দেশে সবাই তো আমরা সচেতন না, অনেকে বুঝতে পারেনি।
হাজার হাজার মানুষ ট্রেনে, লঞ্চে একসাথে গেছে। এটা তো আরো ভয়ঙ্কর।

 


আরো সংবাদ



premium cement