২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
৭২ ঘণ্টায় শনাক্ত এক : চারজনকে মুক্ত ঘোষণা

করোনা উপসর্গ নিয়ে আরো ৭ জনের মৃত্যু

সাতক্ষীরায় প্রতিদিন ভারত থেকে আসছে লোক; শেবাচিম ও রমেকে প্রস্তুত পিসিআর মেশিন; টেলিফোনে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে চমেক
-

বিশ্বজুড়ে যেখানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, সেখানে বাংলাদেশে পরিস্থিতি অনেকটাই স্থিতিশীল রয়েছে। গতকাল সোমবার করোনাভাইরাসে একজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে গত ৭২ ঘণ্টায় বাংলাদেশে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা এক। করোনায় মৃত্যুর কোনো খবরও জানায়নি রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট। বরং করোনাভাইরাস থেকে একজন ডাক্তার ও একজন নার্সসহ চারজনকে করোনাভাইরাসমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে মুন্সীগঞ্জ, যশোর, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, শেরপুর, সুনামগঞ্জে শিশুসহ সাত ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় সেসব এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেসব এলাকায় লকডাউন করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনাভাইরাসের সন্দেহ দেখা দিলে প্রশাসন সেসব এলাকায় লকডাউন ঘোষণা করেছে। এ দিকে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে, বরিশালে, গাজীপুরে অনেকের মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রেক্ষিতে কোয়ারেন্টিনমুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া রংপুর ও বরিশালে করোনা শনাক্তকরণ মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যেই সেগুলো দ্বারা করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের শনাক্ত করা শুরু হবে।
গত ৭২ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত ১ চারজন করোনামুক্ত ঘোষিত
নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে একজন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ৭২ ঘণ্টায় মাত্র একজন আক্রান্ত হয়েছেন। ৭২ ঘণ্টায় করোনার টেস্ট করা হয়েছে ৩০৪টি। এ পর্যন্ত করোনা সন্দেহে সর্বমোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এক হাজার ৩৩৮টি। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৫৩টি। নিশ্চিত করোনা সংক্রমিত একজনকে পাওয়া গেলেও এর মধ্যেই পূর্বের করোনা সংক্রমিত রোগী থেকে চারজন করোনামুক্ত হয়ে গেছেন। এটা নিয়ে বাংলাদেশে মোট ১৯ জন করোনা সংক্রমিত হলেন। গতকালও করোনাভাইরাসে কারো মৃত্যু ছিল না।
গতকাল সোমবার নিয়মিত অনলাইন প্রেস ব্রিফিংয়ে রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, নতুন যে একজন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন তিনি ২০-এর ঘরের একজন নারী। যে চারজন করোনাভাইরাস মুক্ত হয়েছেন এর মধ্যে একজন ডাক্তার ও একজন নার্স রয়েছেন। যে চারজন সুস্থ হয়েছেন তাদের একজনের বয়স ৮০ বছর। দুইজনের বয়স ৬০ বছরের বেশি। এদের মধ্যে দু’জন বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। ৮০ বছরের একজন বৃদ্ধ চিকিৎসায় সুস্থ হলেও অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা ষাটোর্ধ্বদের ঘরের বাইরে না যেতে পরামর্শ দিয়েছেন। বাড়িতে থাকাবস্থায় বয়স্কদের একটি ঘরে থাকার জন্য আহবান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন থেকে ৩৬ জনকে মুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে এ রকম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ৩২ জন। আইসোলেশনে আছেন ৬২ জন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরার সাথে ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএসের পরিচালক ডা: হাবিবুর রহমান। পরে প্রেসব্রিফিংয়ে যোগ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। জাহিদ মালেক তার বক্তব্যে বলেন, সারা দেশে আমরা এর মধ্যেই ২০০ আইসিইউ প্রস্তুত করেছি। এর মধ্যেই ভেন্টিলেটর রয়েছে। বাংলাদেশে ১১টি ল্যাবকে প্রস্তুত করা হয়েছে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার জন্য। আরো ১৭টি ল্যাবকে প্রস্তুত করা হবে। তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে এ পর্যন্ত ২০০টি আইসিইউ স্থাপন করা হয়েছে। তিনি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, যে পিপিই দেয়া হয়েছে সেগুলো যেন নষ্ট না হয়।
তিনি চিকিৎসকদের উদ্দেশ করে বলেন, চিকিৎসক প্রাইভেট চেম্বারও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তিনি তাদের উদ্দেশে বলেন, এই সময় সবাইই যেন যার যার কর্মস্থলে উপস্থিত হয়ে নিজের কাজটি করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে কথা বলেছি। তারা আবারো জানিয়েছেন, ‘বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং দূরত্ব বজায় রাখাটাই প্রতিকার। চিকিৎসার বাইরে যেন কেউ না থাকে।
সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, এটা ডেঙ্গুর সময়। এটা ফ্লুর সময়ও। আমাদের শুধুমাত্র কোভিড-১৯ নিয়ে চিন্তিত হলে চলবে না। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেসব কিট এসেছে সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে ব্যবহার করি না। আমাদের পরীক্ষা করার সক্ষমতা আছে। আইইডিসিআরে একদিনে এক হাজার পরীক্ষা করা যায়। লক্ষণ-উপসর্গ না থাকলে পরীক্ষা করা ঠিক নয়। কুর্মিটোলা হাসপাতালকে শুধুমাত্র করোনার হাসপাতাল করে ফেললে অন্য রোগীরা কোথায় যাবেনÑ এমন প্রশ্নের তিনি বলেন, কুর্মিটোলা হাসপাতালে যে রোগীরা যেতেন তারা অন্যান্য হাসপাতালে যাবেন।
ডা: হাবিবুর রহমান বলেন, বর্তমানে আমরা ৯২ হাজার করোনা পরীক্ষা কিট সংগ্রহ করেছি। আমরা বিতরণ করেছি ২০ হাজার। ৭২ হাজার কিট স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে জমা রয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকায় ৮টি হাসপাতালকে শুধুমাত্র করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
বর্তমানে ২৬ হাজার তিনজন কোয়ারেন্টিনে আছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ৭৯০ জনকে কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে। কোয়ারেন্টিনমুক্ত করা হয়েছে চার হাজার একজনকে। ৬৪ জেলায় ৩২৩টি প্রতিষ্ঠানকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সারা দেশে ছয় হাজার ২০০ জনটি বেড প্রস্তুত করা হয়েছে আইসোলেশনের জন্য।
ঝিকরগাছায় কোয়ারেন্টিন শেষে এক ইউপি সদস্যের মৃত্যু
ঝিকরগাছা (যশোর) সংবাদদাতা জানান, যশোরের ঝিকরগাছায় ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার একদিন পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গোলাম মোস্তফা (৬০) নামে এক ইউপি সদস্য মারা গেছেন। তিনি উপজেলার বাঁকড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য এবং মৃত আবদুল মজিদের ছেলে।
পারিবারিক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ইউপি সদস্য গোলাম মোস্তফা গত ১৪ মার্চ মালয়েশিয়া ভ্রমণ শেষে দেশে ফেরেন। বিমানবন্দরের নির্দেশমত তিনি বাড়ি ফিরে গত ২৮ মার্চ পর্যন্ত নিজ বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। এ দিকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা গোলাম মোস্তফার আকস্মিক মৃত্যুর খবরে এলাকার মানুষের মধ্যে চরম করোনাভাইরাস আতঙ্ক বিরাজ করে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা: হাবিবুর রহমান জানান, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। তিনি করোনা নয়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
কুষ্টিয়ায় কাশি ও শ্বাসকষ্টে এক ব্যক্তির মৃত্যু
কুষ্টিয়া সংবাদদাতা জানান, কুষ্টিয়ায় গতকাল সোমবার সকালে সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ওই ব্যক্তি তিন দিন ধরে সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ছিলেন। হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি করানোভাইরাস আক্রান্ত হতে পারেন। এ জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। ওই ব্যক্তি (৪০) পেশায় ইজিবাইক চালক ছিলেন। শহরের চৌড়হাস শাহপাড়া এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। গত শুক্রবার তার সর্দি দেখা দেয়। এরপর কাশি ও শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। রোববার সকালে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেড়ে যায়। একপর্যায়ে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন জানান, ওই ব্যক্তির গ্রামের বাড়িতে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুবায়ের হোসেন চৌধুরী মৃত লোকটির বাড়িতে গিয়ে সেখানকার ১০টি বাড়ি লকডাউন করে দেন।
দিনাজপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে একজনের মৃত্যু
দিনাজপুর সংবাদদাতা জানান, দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় করোনাভাইরাস উপসর্গ নিয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তির নাম ফরহাদ হোসেন অপি ওরফে তাহের উদ্দিন। তার বয়স ৪০ বছর। তিনি উপজেলার জজবানী ইউনিয়নের তফসি গ্রামের বাসিন্দা। গতকাল সোমবার দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডা: আবদুল কুদ্দুস বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, মৃত্যুর সময় তাহের উদ্দিনের সর্দি-জ্বর ও শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তাহের উদ্দিন কুমিল্লা জেলায় ইতালিফেরত প্রবাসীর বাড়িতে কাজ করতেন। সম্ভবত সেখান থেকেই তিনি করোনা আক্রান্ত হতে পারেন। তাহেরের পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলেছি। আমরা তাহের উদ্দিনের বসবাসরত পুরো গ্রামটিকে কোয়ারেন্টিনের আনার চিন্তা করছি।
মুন্সীগঞ্জে শিশুর মৃত্যু, আতঙ্কে প্রতিবেশীরা
মুন্সীগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সোহরাব হোসেন (১২) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার বাউশিয়া ইউনিয়নের মনাইরকান্দি গ্রামে গতকাল সোমবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গ্রামের প্রতিবেশীদের মধ্যে করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শিশু সোহরাব ওই গ্রামের শহীদুল ইসলামের ছেলে।
গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: তাসলিমা আক্তার জানান, গত রোববার রাত সাড়ে ৩টায় সর্দি-কাশি ও জ্বর নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয় শিশু সোহরাব। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সোমবার সকালে তাকে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকায় রেফার্ড করেন। ঢাকায় নেয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সেই ওই শিশু মারা যায়। এ দিকে সোহরাবের মৃত্যুর খবরে উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রামে প্রতিবেশীদের মধ্যে করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
নালিতাবাড়ীতে ১ ব্যক্তির মৃত্যু, কয়েকবাড়ি লকডাউন
নালিতাবাড়ী (শেরপুর) সংবাদদাতা জানান, শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে শ্বাসকষ্টে গত রোববার রাত ১০টায় আবদুল আওয়াল (৫৫) নামের এক ব্যক্তি নিজ বাড়িতে মারা গেছে। এরপর করোনা সন্দেহে আশপাশের কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তির বাড়ি নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের দক্ষিক পলাশিকুড়া গ্রামে।
জেলা সিভিল সার্জন এ কে এম আনোয়ারুর রব বলেন, গত রোববার ১২টায় সংবাদ পাওয়ার পরে আইইডিসিআরে যোগাযোগ করে না পেয়ে আমি নিজেই নমুনা সংগ্রহ করেছি। রিপোর্টের জন্য আইইডিসিআরে পাঠাব। রিপোর্ট আসলে জানা যাবে করোনায় আক্রান্ত ছিল কি না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, যেহেতু নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, এ জন্য রিপোর্ট আসার আগ পর্যন্ত পরিবার ও আশপাশের কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জে শ্বাসকষ্টে নারীর মৃত্যু
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের পূর্ব নতুনপাড়া এলাকায় শ্বাসকষ্টে সবিতা রানী দাস (৫৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি পৌর শহরের পূর্ব নতুনপাড়ার সামন্ত দাসের স্ত্রী। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা: সামসুদ্দিন জানান, সবিতা রানী নামের একজন মহিলাকে জ্বর শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে গতকাল সোমবার সকালে সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে নিহতের স্বজনরা লাশ বাড়িতে নিয়ে যায় এবং দাহ করে ফেলে। খবর পেয়ে ডাক্তারের একটি টিম পাটিয়ে নিহতের স্বামীসহ পরিবারের সদস্যদের করোনাভাইরাস আছে কি না পরীক্ষার জন্য সিলেট সামছুদ্দিন মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে এবং বাড়িটি লকডাউন করা হয়েছে।
যশোরে শিশুর মৃত্যু
শীর্ষনিউজ জানায়, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাসের জন্য নির্মিত আইসোলেশন ওয়ার্ডের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে চিকিৎসাধীন এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে তার মৃত্যু হয়। ১২ বছর বয়সী কন্যাশিশুটিকে তার অভিভাবকরা গত রোববার বিকেল সাড়ে ৪টায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার আরিফ আহমেদ জানান, ভর্তির সময় তার শারীরিক অবস্থার উপসর্গ দেখে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। সোমবার সকাল সাড়ে ৬টায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর আইইডিসিআরের প্রতিনিধিরা উপসর্গ শুনে বলেছেন, সে করোনো আক্রান্ত ছিল না। তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
নড়াইলে কোয়ারেন্টিনের বাইরে ১,০২০
নড়াইল সংবাদদাতা জানান, করোনাভাইরাসের এই পরিস্থিতিতে নড়াইলে বিদেশফেরত ব্যক্তির সংখ্যা এক হাজার ৫৪১ জন। এর মধ্যে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ৪১৩ এবং অব্যাহতি দেয়া হয়েছে ১০৮ জনকে। হোম কোয়ারেন্টিনের বাইরে আছেন এক হাজার ২০ জন।
গত রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসনের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত নড়াইলের তিনটি উপজেলায় বিদেশফেরত ব্যক্তির সংখ্যা এক হাজার ৫৪১ জন। এদের মধ্যে এক হাজার ৫০৭ জনের অবস্থান চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। বাকি ৩৪ জনকে চিহ্নিতকরণের চেষ্টা চলছে।
এ দিকে নড়াইল সদর হাসপাতাল, লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৭ জন চিকিৎসক ও ১০ জন নার্সের সমন্বয়ে করোনাভাইরাস চিকিৎসায় ২০টি বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের জন্য ৪৯০টি পিপিইর (পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইক্যুইপমেন্ট) ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আরো জানান, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বাড়িতে থাকা কর্মহীন অসহায়-দিনমজুর মানুষের জন্য জেলায় ৩৮৬ দশমিক ৫৪০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য এবং ৯ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দুই হাজার ৪০০ পরিবারের মধ্যে এ খাদ্যদ্রব্য এবং অর্থ বিতরণ করা হবে। ইতোমধ্যে উপজেলাপর্যায়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেনÑ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার), সিভিল সার্জন ডাক্তার আবদুল মোমেন, সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আবদুস শাকুর, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক শামিমুল ইসলামসহ গণমাধ্যমকর্মীরা।
আদমদীঘিতে তিন পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টিন
আদমদীঘি (বগুড়া) সংবাদদাতা জানান, দুবাইফেরত এক ব্যক্তি ও ঢাকা থেকে আসা দুই ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস থাকার সন্দেহে তিন পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। প্রথমে তাদের অবস্থ’ান গোপন করা হলেও প্রশাসন টের পেয়ে তাদের বাড়িতে পৌঁছে ওই তিন পরিবারের সবাইকে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার নির্দেশ দিয়ে লাল পতাকা টানিয়ে দিয়েছেন। গতকাল সোমবার দুপুরে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার কেশরতা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, আদমদীঘির কেশরতা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে ইউসুফ আলী প্রায় দুই বছর দুবাই থাকার পর গত ২০ মার্চ নিজ বাড়িতে আসেন। একই তারিখে বয়েজ উদ্দিনের ছেলে মেরিন প্রকৌশলী মেহেদি হাসানও বাড়িতে এসে আত্মগোপন করে। এরপর একই গ্রামের মোজাম্মেল হকের ছেলে কাবিল উদ্দিন ঢাকা থেকে শরীরে জ্বর নিয়ে গতকাল সোমবার ভোরে ট্রাকে করে বাড়িতে আসেন। বাড়ি আসার পর তার শরীরে জ্বর রয়েছে, কথাটি শুনে তার স্ত্রী ঘর থেকে তাকে বের করে ঘরের দরজা বন্ধ করেন। এ নিয়ে হই চই শুরু হলে এলাকায় বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।
বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুুর রহমানকে অবগত করার পর তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডা: শহীদুল্লাহ দেওয়ানের শরণাপন্ন হন এবং পুরো মেডিক্যাল টিম নিয়ে কেশরতা গ্রামে যান। সেখানে ওই তিন পরিবারের সাথে কথা বলে ও শরীর পরীক্ষা করে তাদের তেমন কোনো উপসর্গ নেই বলে দাবি স্বাস্থ’্য কর্মকর্তার। পরে ওই তিন পরিবারের সবাইকে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে রেখে বাড়িগুলোতে লাল পতাকা উড়িয়ে দেন।
টাঙ্গাইলে হোম কোয়ারেন্টিনে ৫৬৫ জন
টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫২ জন প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে। এ নিয়ে সোমবার পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনা হলো ১৬৫৯ জন প্রবাসীকে।
টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান জানান, সোমবার পর্যন্ত ১৬৫৯ জন প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনা হয়। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ায় সেখান থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে ১০৯৪ জনকে। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ৫৬৫ জন প্রবাসী। তারা চীন, ইতালি, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, দুবাই, ভারত, ওমান, আমেরিকা, ইরাক, কাতার ও বাহরাইন থেকে দেশে আসেন। সবাইকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
ইসলামপুরে ১০ বাড়ি লকডাউন
ইসলামপুর (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, করোনা সংক্রমণ সন্দেহে জামালপুরের ইসলামপুরে ১০ বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ।
জানা যায়, গত শনিবার উপজেলা পার্থশী ইউনিয়নের ঢেংগারগড় গ্রামের সরদার বাড়ির লাইজু মিয়ার মেয়ে রেশমী আষারকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে সন্দেহে রাতের আঁধারে বাবার বাড়িতে রেখে যায় তার স্বামী পুলিশ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর। এমন খবরে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসী ঘটনাটি প্রশাসন ও স্বাস্থ’্য বিভাগকে জানায়। প্রশাসন গত রোববার রাতে ওই বাড়ি এবং সোমবার সকালে আশপাশের ১০টি বাড়ি লকডাউন করে দেয়। জামালপুরের সিভিল সার্জন ডা: গৌতম রায় জানান, করোনার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে রিপোর্ট পাবো বলে আশা করছি।
কোম্পানিগঞ্জে কোয়ারেন্টিনমুক্ত আরো ৮ জন
কোম্পানিগঞ্জ (নোয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জে বসুরহাট পৌর ভবনে স্থাপিত কোয়ারেন্টিন থেকে আরো আট প্রবাসীকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে পৌরসভার কোয়ারেন্টিনে থাকা ৩৫ জনের মধ্যে মোট ২৪ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। প্রবাস থেকে ফেরতের ১৪ দিন পূর্ণ হওয়ায় এবং তাদের মধ্যে কোনোরূপ অসুস্থতার লক্ষণ না থাকায় তাদের ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে ১১ জন রয়েছে। গতকাল সোমবার পৌরসভার কোয়ারেন্টিন কন্ট্রোল রুম থেকে এই তথ্য জানানো হয়।
বরিশালে কোয়ারেন্টিনমুক্ত ১৫১৪ জন
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশালে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকাদের মধ্যে গতকাল সোমবার দুপুর পর্যন্ত ছাড়পত্র পেয়েছে এক হাজার ৫১৪ জন। যার মধ্যে অধিকাংশই বিদেশফেরত। ১৪ দিন বাড়িতে থাকার পরেও এদের কোনো শারীরিক অসঙ্গতি দেখা না যাওয়ায় হোম কোয়ারেন্টিন থেকে তাদের ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ মার্চ থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত বরিশাল সিটি করপোরেশনসহ বিভাগের ছয় জেলায় দুই হাজার ৮২৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। যার মধ্যে এ পর্যন্ত এক হাজার ৫১৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।
অপর দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের মধ্যে পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি জেলায় কাউকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়নি। বাকি তিন জেলায় ১৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ১৭৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। এর বাইরে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঁচজন ও ভোলায় একজন রোগী আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঠাকুরগাঁয়ের ১ শ’ পরিবার কোয়ারেন্টিনে
ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে একই পরিবারের পাঁচজনকে হাসপাতালে পাঠানোর পরদিন ওই গ্রামের ১ শ’ পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। রোববার রাত সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের নদীপাড়া গ্রামের এক শ’ পরিবারের জন্য প্রশাসন থেকে এ নির্দেশ কার্যকর হয়েছে বলে জানান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি আরো জানান, ১ শ’ পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে সাত দিনের খাবার পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, শনিবার সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের ভেলাজান নদীপাড়ার বাসিন্দা রুহুল আমিন সপরিবারে ঢাকায় থাকতেন। কয়েকদিন আগে অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে আসেন। এতে তার পরিবারের পাঁচ সদস্য জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হলে তাদের রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় ওই গ্রামের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংক্রমণ রোধে গ্রামটির এক শ’ পরিবারকে কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়।
বরগুনায় কেউ আক্রান্ত নয়
বরগুনা সংবাদদাতা জানান, বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ গতকাল সোমবার দুপুরে এক প্রেস রিলিজের মাধ্যমে জানিয়েছেন, জেলায় গতকাল সোমবার পর্যন্ত কোনো করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী নেই। হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ১৩৪ জন। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন তিনজন। কোয়ারেন্টিন থেকে ১ মার্চ হতে এ পর্যন্ত ছাড়পত্র পেয়েছেন ২৭৯ জন এবং আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন তিনজন। ১ মার্চ থেকে সোমবার পর্যন্ত বিদেশ প্রত্যাগত ৯৭৫ জন। বিদেশ থেকে এ পর্যন্ত ঠিকানা ও অবস্থান চিহ্নিত বিদেশ প্রত্যাগত ব্যক্তি ৮৯৬ জন।
গাজীপুরে কোয়ারেন্টিনমুক্ত ৩৬ প্রবাসী
গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, কোয়ারেন্টিন শেষে গাজীপুরের মেঘডুবি কেন্দ্র থেকে ছাড়পত্র পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন নারী ও শিশুসহ ইতালিফেরত ৩৬ জন প্রবাসী। গতকাল সোমবার দুপুরে তারা গাজীপুরের পূবাইল এলাকার ‘মেঘডুবি ২০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’ থেকে মুক্ত হয়ে নিজ বাড়িতে ফেরেন। দেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র থেকে বিদেশফেরতদের সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার এটিই প্রথম ঘটনা। এ ছাড়াও আগামী ১ এপ্রিল কাপাসিয়ার পাবুর মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোয়ারেন্টিনে থাকা অপর ৭ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম। এ ছাড়াও গাজীপুর কারাগারে একজন কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তাকে ছাড়পত্র দেয়া হবে।
গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা: মো: খায়রুজ্জামান জানান, এখন পর্যন্ত জেলার কারো দেহে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। তবে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে সোমবার পর্যন্ত জেলায় বিদেশফেরত সর্বশেষ ৪৪১ জনসহ মোট এক হাজার ৮৯৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে এবং ১১ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে কোয়ারেন্টিনে (আইসোলেশনে ১ জনসহ) রাখা হয়। এদের মধ্যে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা ৮৯০ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ৬ জনসহ ৬৯ জন হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছে। ২৫৭ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। কুড়িগ্রামে করোনাভাইরাস রোধে পঞ্চম দিনের মতো সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। তবে প্রশাসনিক তৎপরতা শিথিল হওয়ায় শহরের লোকজনের আনাগোনা বেড়ে গেছে। বেড়ে গেছে যানবাহনের সংখ্যাও। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, নি¤œ আয়ের এবং কর্মহীন মানুষের তালিকা তৈরি করে খাদ্যসামগ্রী বিতরণকার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
নেত্রকোনা সংবাদদাতা জানান, সামান্য চাল, ডালের আশায় নিরাপদ দূরত্ব বজায় ও সব ধরনের জনসমাগমের নিষেধাজ্ঞাজনিত সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নেত্রকোনার বড় বাজারে ব্যাপক ভিড় পরিলক্ষিত হয়েছে। এমনকি লোকজনের চাপাচাপিতে অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার নেত্রকোনা শহরের বড় বাজারের মেসার্স শশী মোহন রায় বিটিসি স্থানীয় ডিলারের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
গতকাল সকাল থেকে স্থানীয় বড় বাজারের ওই স্থানে বিটিসি নেত্রকোনা ডিলার সেন্টু রায় কর্তৃক নি¤œ আয়ের নারী-পুরুষদের মধ্যে চাল, ডাল, লবণ বিতরণ করা হয়। দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আশা নি¤œ আয়ের নারী-পুরুষ সকাল থেকেই সেখানে প্রচণ্ড ভিড় জমান। উপস্থিত কারো মুখেই কোনো মাস্ক ছিল না। এক পর্যায়ে ঠেলাঠেলি ও ভিড়ের কারণে সাত বৃদ্ধ-বৃদ্ধা আহত হন।
শাহজাদপুরে দু’টি বাড়ি লকডাউন
সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ জেলার ১০ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া জেলায় হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা ব্যক্তিদের মধ্যে ১৩৭ জনকে সুস্থতার ছাড়পত্র দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ দিকে শাহজাদপুরের কৌজুরি ইউনিয়নের ভাটাপাড়া গ্রামে করোনা সন্দেহে দুইজনকে বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টিনে রেখে তাদের বাড়ি দু’টি লকডাউন করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ জেলার ৯টি উপজেলায় সোমবার সকাল পর্যন্ত বিদেশফেরত মোট ৫৬৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয় এবং তাদের মধ্যে ৪৪১ জনকে সুস্থতার ছাড়পত্র দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। এর ফলে সিরাজগঞ্জ জেলায় এখন বিদেশফেরত হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ১২৮ জন।
রাজশাহীতে হোম কোয়ারেন্টিনে ৫১৯ প্রবাসী
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী জেলায় গতকাল সোমবার পর্যন্ত ৫১৯ জন বিদেশফেরত ব্যক্তি হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৫১ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনা হয়েছে। তবে এখনো রাজশাহীতে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি। রাজশাহী সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেয়া তথ্যানুযায়ীÑ রাজশাহী জেলায় নতুন করে কোয়ারেন্টিনে ৫১ জনের মধ্যে ভারত থেকে এসেছেন ৪৪ জন, মালদ্বীপ থেকে একজন, সৌদি আরব থেকে একজন, মালয়েশিয়া থেকে দুইজন, জর্ডান থেকে একজন, জার্মান থেকে একজন ও সিঙ্গাপুর থেকে একজন এসেছেন।
রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা: এনামুল হক জানান, গত ১ মার্চ থেকে রাজশাহী জেলায় মোট ৯৪০ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ দিন শেষ হওয়ায় ৪২১ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত মোট হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫১৯ জন।
সাতক্ষীরায় প্রতিদিন ভারত থেকে আসছে লোক
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানায়, সাতক্ষীরায় গত ২৪ ঘণ্টায় বিদেশফেরত আরো নতুন ১৫২ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনা হয়েছে। এ নিয়ে এ পর্যন্ত মোট দুই হাজার ৫৪২ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ১৪ দিন মেয়াদ শেষ হওয়ায় হোম কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে আরো ২৪৫ জনকে। এ দিকে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে এখনো প্রবেশ করছে শত শত বাংলাদেশী পাসপোর্ট যাত্রী। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা হলেও আতঙ্ক বাড়ছে।
ভোমরা ইমিগ্রেশনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ বন্দর দিয়ে ১২৭ জন বাংলাদেশী যাত্রী ভারত থেকে দেশে প্রবেশ করেছে। গত শনিবার প্রবেশ করেছে আরো ১০৪ জন বাংলাদেশী। গতকাল সোমবার বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত এসেছে ৮৯ জন।
বরিশালে এসেছে পিসিআর মেশিন
বরিশাল ব্যুরো জানায়, করোনাভাইরাস শনাক্তসহ বিভিন্ন জটিল রোগীর নমুনা পরীক্ষার জন্য পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) মেশিন গতকাল সোমবার বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে এসে পৌঁছেছে। কলেজের অ্যাকাডেমিক ভবনের দ্বিতীয় তলার মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে পিসিআর মেশিনটি স্থাপন করা হবে। সবকিছু সঠিকভাবে শেষ হলে দ্রুতই করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ এখানে শুরু করা হবে।
টেলিফোনে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে চমেক হাসপাতাল
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, ঘরে বসে টেলিফোনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, মোবাইলের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিষয়ে পরামর্শ দিতে দু’টি মোবাইল নম্বর (০১৮১৮৯৯২৬৫৭ ও ০১৯৪০২৩৩০৭৯) সার্বক্ষণিক চালু রাখবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত রোববার থেকে এ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষ যেন টেলিফোনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা যাতে পেতে পারে, সে জন্যেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
রমেকে প্রস্তুত পিসিআর মেশিন
রংপুর অফিস জানায়, ছয় ঘণ্টায় করোনা সন্দেহ আক্রান্ত ৯৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা যাবে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ কলেজে স্থাপনের অপেক্ষায় থাকা পিসিআর মেশিনে। সোমবার মেশিন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে, চলছে সফটওয়্যার ইনস্টলেশনের কাজ। আজ মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট টেকলোজিস্টসহ অন্যদের সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে। সব মিলিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে রংপুর বিভাগের করোনা আক্রান্ত সন্দেহভাজনদের শরীরের নমুনা পরীক্ষা শুরুর আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিভিল সার্জন হিরম্ব কুমার রায় জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগের রেফারেন্সের ভিত্তিতে এখানে করোনা আক্রান্ত সন্দেহভাজনদের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হবে। রংপুর বিভাগের ৮ জেলার ৫৪ উপজেলার করোনা আক্রান্ত সন্দেহভাজন রোগীরা এই সুবিধা পাবেন।
বগুড়ায় নতুন কোয়ারেন্টিনে ৩২ জন
বগুড়া অফিস জানায়, করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা করতে বগুড়ায় হোম কোয়ারেন্টিনে আছে ৭৫০ জন। গতকাল সোমবার জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয় ৩২ জনকে।
বগুড়া জেলা সিভিল সার্জন এর কার্যালয় জানায়, নতুন করে হোম কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে ৩২ জনকে। ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২১৫ জনের। ৯৬৫ জনের মধ্যে এখন হোম কোয়ারেন্টিনে আছে ৭৫০ জন।


আরো সংবাদ



premium cement