৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ফিলিস্তিনের শিরোপা জয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে শিরোপা জয়ী ফিলিস্তিনি দলের হাতে ট্রফি তুলে দিচ্ছেন হ নয়া দিগন্ত -

শুরুর দিকে গোল খাওয়া পুরনো অভ্যাস বুরুন্ডির। গ্রুপ পর্বে দুই ম্যাচে তারা পিছিয়ে পড়েও পরে ঘুরে দাঁড়ালেও গতকাল শনিবার ফাইনালে আর তা পারেনি। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ফাইনালে প্রতিপক্ষ যে ফিলিস্তিন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি যে, সব সাইডেই অগ্রবর্তী অবস্থানে। ফিলিস্তিন (১০৬), বুরুন্ডি (১৫১)। তাই বুরুন্ডির গোল উৎসব আর নয়। উল্টো তাদের জালে তিনবার বল পাঠিয়ে ৩-১ গোলে ম্যাচ জিতে শিরোপা ধরে রাখল ফিলিস্তিন। ২০১৮ সালেও চ্যাম্পিয়ন ইহুদিদের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত দেশটি। সেবার তারা ফাইনালে হারের স্বাদ দিয়েছিল মধ্য এশিয়ান দেশ তাজিকিস্তানকে। কাল বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ জিতে এই আসরে একটি রেকর্ডও গড়ল ফিলিস্তিন। টানা দুইবারের ট্রফি জয়। আর দেশটির ফুটবল ইতিহাসে এটি চতুর্থ সাফল্য। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ছাড়া আল নাকবা কাপ এবং এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ জয়ের কৃতিত্ব আছে তাদের। ফাইনাল শেষে চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে ট্রফি তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী আসরে অংশ নেয়া সব দলকে অভিনন্দন জানান তার ভাষণে। চ্যাম্পিয়ন দল ট্রফি ও ৩০ হাজার ডলার পায়। আর রানার্সআপ বুরুন্ডি পেয়েছে ট্রফির সাথে ২০ হাজার ডলার।
দুর্ধর্ষ আক্রমণ ভাগই বুরুন্ডির প্রধান শক্তি। আগের ম্যাচগুলোতে তারা এভাবেই একে একে পার পায় মরিশাস, সেশেলস ও বাংলাদেশের বিপক্ষে। ডিফেন্স লাইন নিয়ে তেমন মাথাব্যথা ছিল না আফ্রিকান এই দেশটির। গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকবার এ কথা উল্লেখ করেছিলেন বুরুন্ডির কোচ জসলিন বিপুভসা। তবে কাল তার এই অ্যাটাকিং ফুটবলে কোনো কাজ হয়নি। সাত গোল দিয়ে আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা জসপিন শিমিরিমানা ব্যর্থ হয়েছে। ফিলিস্তিনের সুদৃঢ় রক্ষণপ্রাচীর ভাঙতে পারেনি। সাথে ফিলিস্তিনের বিশাল দেহী গোলরক্ষক তৌফিক আবু হামাদ ছিলেন আরেক বাধা। যে কারণে ম্যাচের ১০ মিনিটেই ফিলিস্তিন সেই যে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় জোড়া গোলে লিড নিয়ে সে ধারাই অব্যাহত রাখে। ২৬ মিনিটে তাদের তৃতীয় গোল। মাঠে আসা ও টিভি পর্দার সামনে থাকা ফুটবলপ্রেমীরা জমজমাট এবং উপভোগ্য যে ফাইনালের আশা করেছিলেন তার ইতি ঘটে তখনই।
ফিলিস্তিন ভালো করেই জানতো বুরুন্ডির রক্ষণভাগে সমস্যা আছে। গোল করতে হবে শুরুতেই। এই লক্ষ্যে ম্যাচের তিন মিনিট বয়সেই লিড তাদের। সামেহ মারাবাহর থ্রু থেকে বল পেয়ে বক্সে তা ফেলেন মোহাম্মদ দারউইশ। তাতে শট নিয়ে দলকে এগিয়ে নেন খালেদ সালেম। শুরুর এই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার কোনো সুযোগই বুরুন্ডিকে দেয়নি প্রতিপক্ষরা। অবশ্য তাতে বুরুন্ডির গোলরক্ষক আইমে ফালিসের ভুলও যোগ হয়। ১০ মিনিটে কর্নার থেকে আসা বল তিনি ঠিক মতো ফিস্ট করতে পারেননি। তা পড়ে সামেহ মারাবাহর কাছে। ইসরাইলি কারাগারে এক বছর বন্দী থাকা হামাসের সমর্থক এই ফরোয়ার্ড আলতো যে টোকা দেন তা বিপক্ষ ডিফেন্স লাইন টপকে গোললাইন অতিক্রম করে ফিরে আসে মাঠে। নেপালি সহকারী রেফারি গোলের সঙ্কেত দিলে পুনরায় উল্লাস ফিলিস্তিনিদের। ২১ মিনিটে বুরুন্ডি ব্যবধান কমানোর সুযোগ পেলেও তা কাজে আসেনি মাসুদি নারসিসের শট ফিলিস্তিনের গোলরক্ষক রুখে দেয়ায়।
২৬ মিনিটে ম্যাচের সব উত্তেজনা শেষ করে দেয় ফিলিস্তিন। খালেদ সালেমের শট পোস্টে লেগে ফিরে এলে তাতে শট নিয়ে দলের স্কোর ৩-০ করেন লাইত খারোব। দুই হ্যাটট্রিক করা জসপিন ৩৮ মিনিটে গোলের সুযোগ পেলেও তাতে বাধা ফিলিস্তিনের দশাসই কিপার। ৬০ মিনিটে কর্নার থেকে আনা বলে আলতো টোকায় বুরুন্ডির আসমান ডিকিমুনার গোল ব্যবধান কমানো ছাড়া আর কোনো ভূমিকা রাখেনি। এটিই ফিলিস্তিনের জালে এবার প্রথম বল যাওয়া।
টুর্নামেন্ট সেরা ও সর্বোচ্চ গোলদাতা : জসপিন শিমিরিমান (বুরুন্ডি)
ফাইনাল সেরা : সামেহ মারাবাহ (ফিলিস্তিন)
সেরা গোলরক্ষক : তৌফিক আবু হামাদ ( ফিলিস্তিন)
ফেয়ার প্লে : ফিলিস্তিন
অন্যদিকে প্রথমবার বাংলাদেশে খেলতে এসে রানার্সআপ ট্রফি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো তাদের। তবে তারা যে ফুটবল বিনোদন দিয়েছে, তা হয়তো মনে রাখবে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমী দর্শকেরা।


আরো সংবাদ



premium cement