১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


ফল আর্মিওয়ার্মের আক্রমণে উদ্বিগ্ন ভুট্টাচাষিরা

-

আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলের ভুট্টাক্ষেত ধ্বংস করে ২০১৮ সালে বাংলাদেশে আসা মারাত্মক পোকা ফল আর্মিওয়ার্ম জেলার কৃষকদের উদ্বেগের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর দ্রুত এই পোকা ছড়িয়ে পড়ছে। চুয়াডাঙ্গা কৃষকরা জানিয়েছেন, নামীদামি কোম্পানির বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করেও প্রতিকার মিলছে না।
জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক সুফি রফিকুজ্জামান জানান, গত বছর চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার গোবিন্দহুদা গ্রামের কৃষক গোলাম মল্লিকের ভুট্টাক্ষেতে প্রথম এ ভয়াবহ পোকার অস্তিত্ব ধরা পড়ে। ‘পরে পরীক্ষার জন্য পোকার নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়। ২২ ডিসেম্বর নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এটি ফল আর্মিওয়ার্ম পোকা’, যোগ করেন তিনি। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, শীতকালীন আবহাওয়ার কারণে পোকাটি গত বছর খুব বেশি ক্ষতি করতে পারেনি। তবে ফল আর্মিওয়ার্ম এই মৌসুমে সময়ের আগেই ভুট্টাক্ষেতে আক্রমণ করেছে।
খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএডব্লিউ) জানায়, এটি আমেরিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও উষ্ণমঞ্চলীয় অঞ্চলের একটি পোকা, যা ভুট্টা পছন্দ করে। তবে ধান, আখ, শাকসবজি ও তুলাসহ ৮০টিরও বেশি প্রজাতির ফসল খেতে পারে।
এফএডব্লিউ প্রথমে ২০১৬ সালের গোড়ার দিকে মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকাতে এটি শনাক্ত করে। দ্রুত প্রায় সব সাব-সাহারা আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে এটি ভারত ও ইয়েমেনে ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডে দেখা দেয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর, দামুড়হুদা ও আলমডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, ভুট্টা নিয়ে চরম এক অনিশ্চয়তার প্রহর গুনছেন কৃষকরা। প্রতিটি মাঠে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ পোকা ফল আর্মিওয়ার্ম। পোকার এমন বিধ্বংসী আগ্রাসনে মলিন চুয়াডাঙ্গার হাজার হাজার ভুট্টাচাষির স্বপ্ন। তবে সদর উপজেলা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে।
সদর উপজেলার কুলচারা গ্রামের কৃষক আফসের আলী বলেন, ‘বিধ্বংসী পোকাটি প্রথমে গাছের মূল কেটে দিচ্ছে। এরপর গাছের কাণ্ডে অবস্থান করে ফল ধারণের কাণ্ডটি খেয়ে ফেলছে। এতে নষ্ট হচ্ছে ভুট্টাগাছ।’
তার দাবিÑ গত বছরের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি শক্তি নিয়ে আঘাত হানছে বিধ্বংসী পোকাটি। প্রতিদিনই বাতাসের বেগে ছড়াচ্ছে মাঠের পর মাঠ। আক্রান্ত ক্ষেতগুলোতে নামীদামি কোম্পানির কীটনাশক ব্যবহারেও মিলছে না প্রতিকার, যোগ করেন তিনি।
আলমডাঙ্গা উপজেলার বাড়াদী গ্রামের কৃষক শাহবুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি মৌসুমে তিন বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছিলাম। এতে বিঘাপ্রতি ১৩-১৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু পোকার ভয়াবহ আগ্রাসনে তিন বিঘা ক্ষেতই নষ্ট হয়েছে।’ এখন মহাজন ও এনজিওর ঋণ কিভাবে শোধ করবেন তা ভেবেই রাতে ঘুমাতে পারছেন না তিনি।
দামুড়হুদা উপজেলার রামনগর গ্রামের কৃষক সফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ফসলের জন্য যমদূত ফল আর্মিওয়ার্মের ভয়াবহ আগ্রাসনের পরও মাঠে নেই কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। ‘এমন বিপর্যয়ে কৃষি বিভাগকে পাশে না পেয়ে আমার মতো শত শত কৃষক ফসলের আশাও ছেড়ে দিয়েছেন,’ বলেন তিনি।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আলী হাসান জানান, চলতি মওসুমে লক্ষ্যমাত্রার ৪৮ হাজার হেক্টরের মধ্যে ইতোমধ্যে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। ‘কিন্তু শুরুতেই ক্ষেতগুলোতে বিধ্বংসী পোকার আক্রমণে আবাদ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে পোকাটি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে,’ দাবি করেন তিনি। এই কর্মকর্তা বলেন, পোকা দমনে তারা দিন-রাত মাঠে কাজ করছেন। খেতে কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শও দিচ্ছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। তবে কী পরিমাণ জমিতে পোকার আক্রমণ হয়েছে তা তিনি জানাতে পারেননি।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ভারতের কোভ্যাক্সিনেও রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইসরাইল সরকারে ভয়াবহ দ্বন্দ্ব : নেতানিয়াহুকে গাঞ্জের পদত্যাগের আলটিমেটাম রাফায় ইসরাইলি হামলা, সরে যেতে বাধ্য হয়েছে ৮ লাখ ফিলিস্তিনি চেন্নাইকে বিদায় করে বেঙ্গালুরুর ‘অবিশ্বাস্য’ প্লে অফ মনের মিনার ভেঙে পড়েনি মার্কিন প্রশাসনের ‘বাকস্বাধীনতা’র মুখোশ শিগগিরই মাগুরায় রেললাইন চালু হবে : রেলমন্ত্রী সংসদ ভবনের সামনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২ গ্রুপের সংঘর্ষে ছাত্রলীগকর্মী নিহত জুজুৎসুর সম্পাদকের যৌন নিপীড়নের তথ্য দিলো র্যা ব পানচাষীদের পরিশ্রমের ফসল জিআই স্বীকৃতি : প্রতিমন্ত্রী বগুড়ায় অবৈধ মজুদকৃত ১ লাখ ডিম উদ্ধার

সকল