ব্যাংকিং খাতের ঋণ অবলোপনের (রাইট অফ) বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাদের সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানতে চেয়েছে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে চিঠি পাঠিয়েছে সংস্থাটি। এতে বলা হয়েছে, ঋণ অবলোপনের বিষয়ে দুদকের পক্ষ থেকে অনেকগুলো সুপারিশ দেয়া হয়েছিল। এ সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিনা সে বিষয়ে কোনো তথ্য দুদককে জানানো হয়নি। এর আগেও এ বিষয়ে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু অদ্যাবধি এ বিষয়ে দুদককে অবহিত করা হয়নি। এখন ঋণ অবলোপনের সুপারিশের বিষয়ে কী উদ্যোগ বা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে তা যেন দুদককে অবহিত করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় ও দুদক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
উল্লেখ্য, খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেখানোর জন্য বিভিন্ন ব্যাংক তাদের মন্দ ঋণ অবলোপন বা ব্যাংকিং হিসাব থেকে বাদ দিয়ে দেয়। ঋণের মূল হিসেবে এ ঋণ দেখানো হয় না। পৃথক হিসেবে তা সন্নিবেশ করা হয়। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মূল খেলাপি ঋণের হিসেবে এ ঋণ যোগ হয় না। এতে করে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা কৃত্রিমভাবে ভালো দেখানো হয়। ব্যাংক খাত বিশ্লেষকেরা এ প্রক্রিয়াকে অনৈতিক বলে আখ্যায়িত করেছেন। এক হিসাবে দেখা যায়, ২০০৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক এভাবে ৪৮ হাজার ১৯২ টাকার ঋণ অবলোপন করেছে। কেবল গত বছরই দুই হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা ঋণ অবলোপন করা হয়। এ বিশাল অঙ্কের ঋণ কী প্রক্রিয়ায় অবলোপন করা হয়েছে সে বিষয়ে দুদকের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে দুদকে কিছু সুপারিশও করা হয়েছিল।
সূত্র জানায়, দুদকের সচিব ড. মো: শামসুল আরেফিন চলতি মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, বিভিন্ন ব্যাংক কর্তৃক ঋণ অবলোপন বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অনুরোধ করা হয়। দুদক কর্তৃক ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের অবলোপন প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করে এ সংক্রান্ত সুপারিশগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে অনুরোধ করা হয়। সে আলোকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্তৃক কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে অবহিত করার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু অদ্যাবধি এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এমতাবস্থায় কোনো উদ্যোগ বা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে কিনা তা দুর্নীতি দমন কমিশনকে অবহিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হলো।
এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ সুপারিশগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। তারপর দুদককে অবহিত করা হবে।
এ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, শুধু গত বছরেই মোট ২৬৭৪ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়। সবেচেয়ে বেশি ঋণ অবলোপন করা হয় বছরের শেষ দিকে এসে। গত বছর অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকিং খাতে ঋণ অবলোপনের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা, এর আগের তিন মাসে (আগস্ট-সেপ্টেম্বর) মাসে যা ছিল ৩২২ কোটি টাকা। একইভাবে এপ্রিল-জুনে ঋণ অবলোপনের পরিমাণ ছিল ৪৫২ কোটি টাকা এবং জানুয়ারি-মার্চে যা ছিল মাত্র ২৫ কোটি টাকা।
জানা গেছে, মোট ২৫টি ব্যাংক ঋণ অবলোপনের সুযোগ কাজে লাগিয়েছিল। এদের মধ্যে শীর্ষে ছিল এবি ব্যাংক। সমস্যাসঙ্কুল এ ব্যাংকটি মোট ৩২৮ কোটি টাকা ঋণ অবলোপন করেছিল। এরপরই ছিল প্রাইম ব্যাংক, তাদের ঋণ অবলোপনের পরিমাণ ছিল ২০৬ কোটি টাকা। তৃতীয় স্থানে ছিল আইএফআইসি, তারা ঋণ অবলোপন করেছিল ১৫২ কোটি টাকা।
২০০৩ সাল থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে ঋণ অবলোপন করার পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ব্যাংকের পরিমাণ ছিল ২৩ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা