১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫
`


হারলে কি বলির পাঠা বানানো হবে অভিবাসী ফুটবলারদের?

বিশ্বকাপ
এরদোগানের সাথে মেসুত ওজিল (বামে), রাহিম স্টারলিং (ডানে) - সংগৃহীত

এবারের বিশ্বকাপে যে চারটি দল সেমি ফাইনালে উঠেছে তারা সবাই ইউরোপের। এর মধ্যে তিনটি দেশের শুধু ভৌগলিক নয় অন্য আরো একটা বিষয়ে মিল রয়েছে।

ফ্রান্স, বেলজিয়াম আর ইংল্যান্ড দলের খেলোয়াড়দের একটা বড় অংশ অভিবাসী পরিবার থেকে এসেছে। যেমন- ফ্রান্সের ১৩ সদস্যের স্কোয়াডের ১৬ জনের অভিবাসী বাবা অথবা মা রয়েছেন। দু'জন আছেন যারা ফ্রান্স শাসিত ক্যারিবিও দ্বীপে জন্ম নিয়েছেন।

বেলজিয়ামের ১১ জন এবং ইংল্যান্ডের ছয়জন খেলোয়াড়ের ঠিক একই রকম অভিবাসী বাবা অথবা মা রয়েছেন।

ইংল্যান্ডের চারজন খেলোয়াড় আফ্রো-ক্যারিবিও বংশপরিচয় রয়েছে। এর মধ্যে রাহিম স্টারলিংয়ের জন্ম জ্যামাইকায়।

ফ্রান্স স্কোয়াডে জাতিগত বৈচিত্র্য থাকাটা খুব একটা অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার নয়।

১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের যে দলটি বিশ্বকাপ জিতেছিল, সেটিকে 'দ্যা রেইনবো টিম' আখ্যা দেয়া হয়েছিল।

রেইনবোর যেমন হরেক রঙ তেমটি সেদলেও নানা জাতির উপস্থিতির কারণে এমন নামকরণ।

বেলজিয়ামের ১১ জন খেলোয়াড় অভিবাসী পরিবার থেকে এসেছেন

 

তবে ২০০২ সালে উগ্র ডানপন্থী প্রার্থী জঁ মারি ল্য পেন দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম ধাপ উৎরে যাওয়ার পর ফ্রান্সের ওই একই স্কোয়াডের মিশ্র জাতির খেলোয়াড়েরা দল বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

তবে তিনি অবশ্য চূড়ান্ত পর্বে পরাজিত হয়েছিলেন।

ফ্রান্সের গত বছরের নির্বাচনে তার মেয়ে মারিন ল্য পেন তার বাবার চেয়েও ভালো সাফল্য পেয়েছিলেন।

মারিন ল্য পেন ফরাসি জাতিয় দল সম্পর্কে বলেছিলেন তিনি তার দেশ ফ্রান্স অথবা নিজেকে আর চিনতে পারেন না।

এবার অবশ্য ফরাসি দলের মিশ্র জাতির খেলোয়াড়েরা দল বর্জনের ঘোষণা দেননি।

এবারের বিশ্বকাপে তারা এখন কাপ জয়ের ক্ষেত্রে অনেকের কাছেই ফেভারিট বলে বিবেচিত হচ্ছেন।

অন্যদিকে বেলজিয়ামের ১১ জন খেলোয়াড়ের বাবা অথবা মায়ের জন্ম সেদেশের বাইরে অন্য কোথাও।

অর্থাৎ তাদের বাবা অথবা মা অভিবাসী। রোমেলু লুকাকু ও ভিনসেন্ট কম্পানির বাবা কঙ্গো থেকে এসেছেন।

মজার ব্যাপার হল লুকাকুর বাবা ১৯৯০-এর দশকে যায়ারের জাতিয় দলের হয়ে খেলেছেন। যে দেশটি এখন কঙ্গো নামে পরিচিত।

২০০২ সালের বেলজিয়াম দলের সাথে বর্তমান দলের জাতিগত দিক দিয়ে বিশাল পার্থক্য।

তখন মোটে দু'জন খেলোয়াড় অভিবাসী পরিবার থেকে এসেছিলেন।

কিন্তু রাষ্ট্র হিসেবে বেলজিয়াম এখন খুব বড় ধরনের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভক্তির মুখে রয়েছে। সেখানে দুটি ভাষা প্রধান এলাকা রয়েছে।

ইংল্যান্ড দলেও রয়েছে জাতিগত বৈচিত্র্য

 

ফরাসি ভাষা প্রধান ওয়ালোনিয়া আর ফ্লেমিশ প্রধান ফ্ল্যান্ডার্স।

সেখানে এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতাও রয়েছে।

২০১০ সালে দেশটির নির্বাচনে ফ্লেমিশ প্রধান দল জয়ী হওয়ার পর একধরনের রাজনৈতিক স্থবিরতা তৈরি হয়।

যার ফলে ৫৪১ দিন দেশটিতে কোনো সরকার ছিল না।

এসব কিছুর বিবেচনায় এবারের বেলজিয়াম দলকে একটি অনন্য দল বলা যেতে পারে।

যে দলে রয়েছে ওই দুই অঞ্চল আর অভিবাসী খেলোয়াড়। যাদের কোচ আবার স্প্যানিশ।

বেলজিয়ানরা তাদের ফুটবল দলকে ঘিরে যেন সাময়িকভাবে হলেও রাজনীতির ঊর্ধ্বে চলে গেছে।

বিশ্বকাপ দেখতে আসা বেলজিয়ামের এক বাসিন্দা ইয়ান আর্টসেন বলছেন, "আমি রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে বিশ্বকাপে আসিনি। এবারের বিশ্বকাপ জাতি হিসেবে আমাদের জন্য একটি উৎসবের সুযোগ করে দিয়েছে। এমন একটি দলকে সমর্থনের সুযোগ করে দিয়েছে যারা বেলজিয়ামের সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করে"

জাতিগত বৈচিত্র্যে ভরা এবারের ফরাসি দল

 

তিনি আরো বলছিলেন, "যারা বিচ্ছিন্নতাবাদের সমর্থক তারা জানে না এর ফলে আমাদের ফুটবল দলটি কতটা দুর্বল হয়ে পড়বে।"

অভিবাসীদের সন্তানের ইংল্যান্ড দলেও রাজত্ব করছেন।

ম্যানেজার গ্যারেথ সাউথগেট ও তার দলের এতটা সাফল্য কেউই চিন্তা করেননি।

এই দলের ছয়জনের অভিবাসী বংশপরিচয় রয়েছে। এর মধ্যে জ্যামাইকায় জন্ম নেয়া রাহিম স্টারলিং যে কারোর থেকে বেশি সমর্থকদের মন জয় করে নিয়েছেন।

ম্যানেজার সাউথগেট বলছিলেন, "আমরা এমন একটি দল যার জাতিগত বৈচিত্র্য আর তারুণ্য আধুনিক ইংল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করে।"

তিনি আরো বলছিলেন, "নিজেদের আধুনিক পরিচয় নিয়ে আমরা কিছুদিন পথ হারিয়েছিলাম। আমাকে হয়ত ফুটবলের মাঠের ফল নিয়েই বেশি বিচার করা হবে। কিন্তু আমাদের অন্য আরো অনেক বিষয়ে প্রভাব ফেলার ক্ষমতা রয়েছে। যা খেলার থেকেও অনেক বড়।"

জাতিগত বৈচিত্র্য নিয়ে এই দলগুলো বেশ গর্ব নিয়ে কথা বললেও বিশেষজ্ঞরা এর দীর্ঘ মেয়াদি ভূমিকা নিয়ে সাবধান করে দিচ্ছেন।

ইউরোপীয় ফুটবলে বর্ণবৈষম্য নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠন 'ফেয়ার নেটওয়ার্ক'।

এর প্রতিষ্ঠাতা পিয়েরা পাওয়ার বলছেন, জাতিগত বৈচিত্র্য আছে এমন দল সবসময় মানুষের মনে দীর্ঘমেয়াদি ছাপ ফেলে বিষয়টি তেমন নয়।

তিনি বলছেন, "জাতিগত বৈচিত্র্যের যে একটা ইতিবাচক দিক তা শুধু মাস-কয়েক থাকে। এই ধরুন ফুটবল সমালোচকরা প্রতিটি খেলায় রাহিম স্টারলিং এর মতো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের খেলোয়াড় সম্পর্কে খুঁটি নাটি সব কিছু যাচাই করে।"

তিনি আরো বলছেন, "ধরুন ইংল্যান্ড যদি সেমিতে হারে তাহলে স্টারলিংকে বলির পাঠা বানানো হবে কিনা সেই নিশ্চয়তা নেই। যেমনটা জার্মানদের প্রথম রাউন্ডে বিদায়ের পর তাদের তুর্কি বংশোদ্ভূত খেলোয়াড় মেসুত ওজিলের বেলায় হয়েছে।"

কিন্তু তবুও সবমিলিয়ে অভিবাসীদের ইউরোপীয় ফুটবলে যে ভূমিকা তা কেউই অস্বীকার করতে পারবে না।

 

আরো পড়ুন : এরদোগান প্রসঙ্গ : সোজা বের হয়ে গেলেন ওজিল

গত মাসে ইংল্যান্ড সফরে গিয়েছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। তখন আর্সেনালে খেলা জার্মান ফুটবলার মেসুত ওজিলসহ আরেক ফুটবলার তাদের জার্সি উপহার দেন এরদোগানকে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করে তুর্কি তথা এরদোগান-বিদ্বেষীরা। কিছু জার্মানতো এ নিয়ে ভীষন ক্ষুদ্ধ তুর্কি বংশোদ্ভুত ওজিলদের উপর।

বিশ্বকাপে মেক্সিকোর কাছে জার্মানির হারের পর ফের এই প্রসঙ্গ টেনে আনেন এক তরুণ জার্মান সাংবাদিক। মিক্সড জোনে এই নিয়ে প্রশ্ন করেন টনি ক্রুসকে। অবশ্য এই মিডফিল্ডার এই নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করলেন।

এরপরেই এলেন ওজিল। কিন্তু তাকে কোনো প্রশ্নের উত্তরের জন্য পাওয়া গেল না। তিনি সোজা বের হয়ে চলে গেলেন মিক্সড জোন দিয়ে। কিছুক্ষণ পর এলেন সামি খেদিরা। তিনিও মিডিয়াকে এড়িয়ে গেলেন।


আরো সংবাদ



premium cement
ঠাকুরগাঁওয়ে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মোটরসাইকেল-আরোহী নিহত এনএসআই পরিচয়ে ভুয়া নিয়োগ, গ্রেফতার ৬ লঙ্কান প্রিমিয়ার লিগে আইকন মোস্তাফিজ কনডেমড সেলের সাথে অন্যান্য সেলের পার্থক্য কী আবার সংগঠিত হচ্ছে হামাস, কঠোর জবাব দিচ্ছে ইসরাইলিদের মুক্তির এক মাস পর স্বজনদের দেখা পেতে যাচ্ছেন এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকরা মোরেলগঞ্জে গলায় ফাঁস লাগানো লাশ উদ্ধার, মা,ভাই-বোন আটক প্রকাশ্যে ভোট দেয়ায় এমপিকে তলব ইসির ভারতে চতুর্থ দফা লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ ও কাশ্মিরে কেমন ভোট হলো পিএমএল-এন সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন শাহবাজ শরিফ আমরা নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন চাই : জামায়াত আমির

সকল