২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩০, ২০ মহররম ১৪৪৬
`

পুতিনের অধীনে যেভাবে শেষ হলো রুশ কূটনীতি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। - ছবি : সংগৃহীত

একটা সময় ছিল যখন রাশিয়ার কূটনীতিকরা প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পররাষ্ট্রনীতির কৌশল প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন। কিন্তু এখন তা একদম বদলে গেছে।

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পুরো-দমে যুদ্ধ শুরুর আগের বছরগুলোতে কূটনীতিকরা তাদের কর্তৃত্ব হারালেন। তাদের ভূমিকা খর্ব হলো, ক্রেমলিনের আক্রমণাত্মক কথাবার্তার প্রতিধ্বনি করাই তাদের কাজ হয়ে দাঁড়াল।

রুশ কূটনীতি কিভাবে ভেঙে পড়ল তা জানতে বিবিসি রাশিয়ান কথা বলেছে সাবেক পাশ্চাত্যের কূটনীতি এবং ক্রেমলিন ও হোয়াইট হাউজে কাজ করা সাবেক অনেক কর্মকর্তার সাথে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র-বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড ২০২১ সালের অক্টোবরে মস্কোতে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে যোগ দিতে গেলেন। টেবিলে তার উল্টাদিকে বসা রাশিয়ার ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ। নুল্যান্ড তাকে চেনেন বহু দশক ধরে, তাদের দু’জনের সম্পর্কও বেশ ভালো।

রিয়াবকভকে তিনি একজন বাস্তববাদী এবং শান্ত মধ্যস্থতাকারী হিসেবেই বিবেচনা করতেন। দু’দেশের সম্পর্ক যতটাই খারাপ হোক, যার সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন কূটনীতিক হিসেবে তিনি কথা বলতে পারেন।

কিন্তু এবার মনে হলো পরিস্থিতি যেন ভিন্ন।

রিয়াবকভ এক টুকরো কাগজ থেকে মস্কোর আনুষ্ঠানিক অবস্থান সম্পর্কে গড়গড় করে কিছু পড়ে গেলেন। নুল্যান্ড কথাবার্তা শুরুর চেষ্টা করতেই তা থামিয়ে দিলেন। নুল্যান্ড বেশ হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। এ বিষয় নিয়ে তার সাথে আলোচনা হয়েছে এমন দুজনের ভাষ্য এমনই।

ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড নাকি পরে রিয়াবকভ এবং তার সহকর্মীদের ‘কাগজ হাতে রোবট’ বলে বর্ণনা করেন। তবে স্টেট ডিপার্টমেন্ট এ ঘটনা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়।

তবে ওই বৈঠক যে রুমে হচ্ছিল, তার বাইরে রুশ কূটনীতিকরা অনেক বেশি অ-কূটনৈতিক ভাষা ব্যবহার করছিলেন।

‘পাশ্চাত্যের নিষেধাজ্ঞায় আমরা থুতু দেই’
‘আমাকে কথা বলতে দিন। নইলে রুশ গ্রাড মিসাইল কী করতে পারে সেটা আপনারা শুনতে পাবেন।’
‘মূর্খের দল’, আরেকজন গালি দিয়ে বলছিল।

এসব কথা এমন সব লোকের মুখ দিয়ে বের হচ্ছিল, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সব দায়িত্বে ছিলেন

কিভাবে রুশ কূটনীতি এমন একটা জায়গায় এসে পৌঁছাল?

এক নতুন স্নায়ু যুদ্ধ
এটা এখন কল্পনা করাও কঠিন, কিন্তু ২০০০ সালে পুতিন বলেছিলেন, ‘রাশিয়া ন্যাটো জোটের সাথে সহযোগিতা করতে... এমনকি এই জোটে যোগদান করতেও প্রস্তুত। আমার দেশ ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্ন এটা আমি কল্পনা করতে পারি না।’

ক্রেমলিনের এক সাবেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে শুরুর দিনগুলোতে পুতিন পাশ্চাত্যের দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে বেশ উদগ্রীব ছিলেন।

রুশ কূটনীতিকরা তখন পুতিনের টিমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চীন এবং নরওয়ের সাথে সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে তারা সাহায্য করছেন, এরপর ইউরোপিয় দেশগুলোর সাথে আরো গভীর সহযোগিতার কথা-বার্তা হচ্ছে। জর্জিয়ায় এক বিপ্লবের পর সেখানে শান্তিপূর্ণ উত্তরণ কিভাবে নিশ্চিত করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের পরিচালক আলেক্সান্ডার গাবুয়েভ বলেছিলেন, পুতিন আরো ক্ষমতাশালী এবং অভিজ্ঞ হয়ে উঠার পর তিনি ক্রমশ বিশ্বাস করতে শুরু করলেন যে সবকিছুর উত্তর তার কাছেই আছে এবং কূটনীতিকদের আর দরকার নেই।

আলেক্সান্ডার গাবুয়েভ এখন বার্লিনে নির্বাসিত জীবনযাপন করেন।

একটা নতুন গৃহযুদ্ধ যে শুরু হতে যাচ্ছে তার প্রথম সঙ্কেত পাওয়া যায় ২০০৭ সালে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে পুতিনের দেয়া এক ভাষণে।

৩০ মিনিটের সেই তীব্র আক্রমণাত্মক ভাষণে তিনি পাশ্চাত্যের দেশগুলো একটি একক মেরুর বিশ্ব গড়ে তুলতে চাইছে বলে অভিযোগ করলেন। এরপর রুশ কূটনীতিকরা তার পথ অনুসরণ করে একই ভাষায় কথা বলা শুরু করলেন। এক বছর পর রাশিয়া যখন জর্জিয়ায় অভিযান চালায়, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ নাকি তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড মিলিব্যান্ডকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘আমাকে লেকচার দেয়ার তুমি কে?’

পাশ্চাত্যের কূটনীতিকরা তখনো ভাবছিলেন, রাশিয়ার সাথে কাজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া দরকার। ২০০৯ সালে লাভরভ এবং তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন দু’দেশের সম্পর্কে নতুন করে শুরু করার জন্য এক সাথে একটি লাল ‘রিসেট বাটন’ চাপলেন। এরপর মনে হচ্ছিল দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা শুরু হচ্ছে, বিশেষ করে নিরাপত্তা ইস্যুতে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ডেপুটি নিরাপত্তা উপদেষ্টা বেন রোডস বলেছিলেন, মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছে শিগগিরই এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে রুশ কর্মকর্তারা আসলে প্রেসিডেন্ট পুতিনের পাশ্চাত্য-বিরোধী কথাবার্তাই তোতাপাখির মতো পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছেন, বলছিলেন

ওবামা এবং পুতিনের মধ্যে ২০০৯ সালের এক ব্রেকফাস্টের কথা স্মরণ করছিলেন রোডস। তিনি বলেন, সহযোগিতা নিয়ে আলাপের পরিবর্তে পুতিন বেশি আগ্রহী ছিলেন বিশ্ব নিয়ে তার নিজের ভাবনা তুলে ধরতে। তিনি ওবামার পূর্বসূরি জর্জ ডাব্লিউ বুশের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সাথে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ আনেন।

রোডস বলেছেন, ২০১১ সালে শুরু হলো আরব বসন্ত, যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়লো লিবিয়ার সঙ্ঘাতে এবং রাশিয়ার রাজপথে ২০১১ এবং ২০১২ সালে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হলো। তখন পুতিন সিদ্ধান্ত নিলেন যে কূটনীতি দিয়ে তিনি খুব বেশি দূর যেতে পারবেন না।

রোডস বলেন, ‘কিছু কিছু বিষয়ে- বিশেষ করে ইউক্রেনের ক্ষেত্রে রুশ কূটনীতিকদের কোন ধরনের প্রভাব ছিল বলে আমার মনে হয়নি।’

এক সাবেক সিনিয়র ক্রেমলিন কর্মকর্তা বলছিলেন, লাভরভকে যখন প্রায় ২০ বছর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়, তখন আন্তর্জাতিক বিষয়ে তার নিজের একটা ভালো দৃষ্টিকোণ ছিল।

গাবুয়েভ বলছেন, ক্রেমলিন জানত যেকোনো একটা বিষয়ে লাভরভের হয়ত এমন একটা মত থাকবে, যা পুতিনের চেয়ে আলাদা, কিন্তু তারপরও তারা লাভরভের সাথে কথা বলত।

ফিনান্সিয়াল টাইমসের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালে যখন ইউক্রেনের রুশ সেনাবাহিনী পাঠানো হলো, লাভরভ তা জানতে পেরেছিলেন যুদ্ধ শুরুর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে।

আন্দ্রে কেলিন ছিলেন যুক্তরাজ্যে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত। রুশ কূটনীতিকরা তাদের প্রভাব হারিয়েছেন বলে যে কথা বলা হচ্ছে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করলেন। তার পুরো কূটনৈতিক জীবনে তিনি পাশ্চাত্যের দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেছেন।

এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা মানতে অস্বীকৃতি জানালেন যে পাশ্চাত্যের দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক ভেঙে পড়ার ক্ষেত্রে মস্কো বা কোনো রুশ কূটনীতিকের দায় আছে।

তিনি বলেন, ‘এই সম্পর্ক আমরা ধ্বংস করছি না। কিয়েভের সরকারের সাথে আমাদের অনেক সমস্যা আছে। এটা নিয়ে আমাদের কিছুই করার নেই।

তার মতে, ইউক্রেনে যেটা চলছে সেটা আসলে ভিন্ন পথ ধরে অব্যাহত রাখা কূটনীতি।

নতুন ধারার কূটনীতি
পররাষ্ট্র-বিষয়ক কূটনীতিকরা যখন ক্রমশ গুরুত্বহীন হয়ে পড়তে লাগলেন, তখন তারা তাদের মনোযোগ ফেরালেন রাশিয়ার ভেতরে। রুশ কূটনীতির এই নতুন অধ্যায়ের প্রতীক হয়ে উঠলেন মারিয়া জাখারোভা। ২০১৫ সালে তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নিয়োগ করা হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা বরিস বোনডারেভ বলেন, ‘তার আগে কূটনীতিকরা কূটনীতিকদের মতো আচরণ করতেন, তারা কথা বলতেন পরিশীলিত ভাষায়।’

যুদ্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে বরিস বোনডারেভ পদত্যাগ করেছিলেন।

কিন্তু জাখারোভা আসার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিং একটা দেখার মতো দৃশ্যে পরিণত হলো। জাখারোভা প্রায়ই কঠিন প্রশ্ন করা রিপোর্টারদের উদ্দেশে চিৎকার করতেন এবং অন্যদেশের সমালোচনার জবাব দিতেন অপমানসূচক মন্তব্য করে।

তার কূটনৈতিক সহকর্মীরাও একই পথ নিলেন। বোনডারভ কাজ করতেন জেনেভার জাতিসঙ্ঘ দফতরে মস্কোর কূটনৈতিক মিশনে। তিনি একটি ঘটনার কথা বলছিলেন, যেখানে সব ধরনের প্রস্তাবিত উদ্যোগ রাশিয়া আটকে দিচ্ছিল, তখন সুইজারল্যান্ডের কূটনীতিকরা এ নিয়ে আপত্তি জানাল।

তিনি বলেন, ‘তখন আমরা তাদের বললাম, তোমাদের সমস্যা কী? আমরা বিরাট ক্ষমতাধর রাষ্ট্র, আর তোমরা তো কেবল সুইজারল্যান্ড! এটাই রাশিয়ার কূটনীতি।’

গাবুয়েভ বলছেন, রাশিয়া এই কৌশল নিয়েছিল দেশের ভেতরের মানুষদের মন জয় করতে।

বোনডারেভের মতে কূটনীতিকরা আসলে তাদের ঊর্ধ্বতনদেরও খুশি করতে চাইছিলেন। তিনি বলেন, বিদেশে এসব বৈঠকের পর যেসব টেলিগ্রাম মস্কোতে পাঠানো হতো, তাতে থাকত কূটনীতিকরা কত শক্তভাবে দেশের স্বার্থ রক্ষা করেছে তার বর্ণনা।

তার মতে, এ ধরনের বার্তাগুলোর ভাষা হতো সাধারণত এমন- ‘আমরা তাদের বেশ কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছি! আমরা বীরত্বের সাথে রাশিয়ার স্বার্থ রক্ষা করেছি, আর পশ্চিমারা কিছুই করতে পারেনি, তারা পিছু হটেছে“’

তিনি বলেন, “সব কূটনীতিক যদি লেখে, ‘আমরা পশ্চিমাদের বুঝিয়ে দিয়েছি তাদের জায়গা কোথায়’ আর আপনি যদি লেখেন ‘আমরা সমঝোতায় পৌঁছাতে পেরেছি’- তখন আপনাকে দেখা হবে অবজ্ঞার চোখে।”

২০২২ সালের জানুয়ারিতে জেনেভায় এক ডিনারের কথা স্মরণ করলেন বোনডারেভ, যেখানে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রিয়াকভ মার্কিন কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট ওয়েন্ডি শেরম্যান তখনো আশা করছিলেন, শেষ মুহূর্তের আলোচনাতেও হয়ত ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ অভিযান থামানো যাবে।

তিনি বলেন, “কিন্তু আসলে ব্যাপারটা ছিল ভয়াবহ। মার্কিনীরা বলছিল, চল, আলোচনা করি। কিন্তু পরিবর্তে রিয়াকভ চিৎকার করতে শুরু করলেন, ‘আমাদের ইউক্রেন দরকার। আমরা ইউক্রেন ছাড়া কোনো কিছুতে রাজি নই। তোমাদের সবকিছু গোটাও এবং ১৯৯৭ সালের সীমানায় (ন্যাটো) ফিরে যাও। শেরম্যানকে এক লৌহমানবী বলে মনে করা হয়, কিন্তু তার মুখ পর্যন্ত হা হয়ে গিয়েছিল।”

তিনি আরো বলেন, ‘রিয়াকভ ছিলেন সবসময় বেশ ভদ্র, তার সাথে চমৎকার কথা বলা যেত। কিন্তু এখন দেখা গেল তিনি টেবিলে ঘুষি দিয়ে আবোল-তাবোল কথা বলছেন।’

তবে এটা বলে রাখা দরকার, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অন্য দেশের কূটনৈতিক স্বরও বদলে গেছে, তবে হয়ত অনেক কম মাত্রায়।

কয়েক বছর আগে জাতিসঙ্ঘে জাপানের মানবাধিকার-বিষয়ক প্রতিনিধি হিদেয়াকি ইউয়েদা তার বিদেশী সহকর্মীদের ‘চুপ করুন’ বলে ধমকে দিয়েছিলেন। গ্যাভিন উইলিয়ামসন যখন ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী, তখন তিনিও রাশিয়ার সাথে এক বৈঠকে একই রকম কথা বলেছিলেন। আর জার্মানিতে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত আন্দ্রি মেলনিক গত বছর জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলৎজকে ‘আহত লিভার সসেজ’ বলে বর্ণনা করেছিলেন।

‘যুক্তরাষ্ট্র আঙ্গুল তুলে কথা বলে এই যুদ্ধ থামাতে পারবে না’
দেড় বছর ধরে চলা এই যুদ্ধ কূটনীতি দিয়ে থামানো যাবে এমন আশা কি আছে?

বিবিসি যাদের সাথে কথা বলেছে, তাদের বেশিরভাগই বলছে যে এটার সম্ভাবনা একেবারেই কম।

বোনডারেভ বলেছেন, সাধারণত কূটনীতিকদের ৯৫ শতাংশ কাজই হচ্ছে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক আর কফি পান করা। কিন্তু এ ধরনের সম্পর্ক অনেকটাই কমে গেছে, এখন আর কথা বলার মতো কিছু নেই।

রাষ্ট্রদূত কেলিনকে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, একটা পর্যায়ে লন্ডনের রুশ দূতাবাসে গ্যাস এবং বিদ্যুতের সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো দূতাবাসের গাড়িগুলো ইন্স্যুরেন্স করাতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছিল।

র‍্যান্ডের বিশ্লেষক স্যামুয়েল চারাপ বলেন, আগে হোক, পরে হোক, আলোচনা আবার শুরু হতে হবে। আলোচনার একমাত্র বিকল্প হচ্ছে চূড়ান্ত বিজয় এবং কিয়েভ বা মস্কো, কোনো পক্ষই যুদ্ধক্ষেত্রে এই বিজয় পাবে, সেটার সম্ভাবনা কম।

তবে এমন আলোচনা শিগগিরই শুরু হবে এমন সম্ভাবনা তিনি দেখেন না।

তিনি বলেন, ‘পুতিন তার মেয়াদকালে নাটকীয়ভাবে বদলে গেছেন এবং সত্যি কথা বলতে আমি জানি না তিনি এমন আলোচনায় যেতে রাজি হবেন কি-না।’

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা অভিযোগ করছেন, রাশিয়া আবারো আপসের পরিবর্তে হুমকি দিচ্ছে, যেমন তারা বলছে, দখলীকৃত জায়গা যে রাশিয়া নিজের সীমানা-ভুক্ত করেছে, সেটা ইউক্রেনকে মেনে নিতে হবে। এমন শর্তে আলোচনায় কোনো আগ্রহ কিয়েভের নেই এবং পাশ্চাত্যের মিত্ররাও এই সিদ্ধান্তকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিচ্ছে।

রাশিয়া মনে হচ্ছে কূটনীতির চাইতে তার যুদ্ধ মেশিন, ইন্টেলিজেন্স অ্যাজেন্সি এবং ভূরাজনৈতিক প্রভাবের ওপরই নির্ভর করতে চায়।

এসব হতাশাজনক পরিস্থিতিতে রুশ কূটনীতিকরা তাহলে কেন তাদের পররাষ্ট্র দফতর থেকে পদত্যাগ করে বেরিয়ে যাচ্ছে না?

সাবেক এক ক্রেমলিন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলছিলেন, যারাই তাদের পদে ১০ বা ২০ বছর ধরে আটকে আছে, তাদের জন্য এটা একটা সমস্যা।

তিনি বলেন, ‘ওখানে আসলে আপনার অন্য কোনো জীবন নেই। এটা খুবই ভীতিকর।’

সাবেক কূটনীতিক বোনডারেভ তাদের অবস্থা বুঝতে পারেন।

তিনি বলেন, ‘যদি যুদ্ধ না হতো, তাহলে আমিও হয়ত অবস্থা মেনে নিয়ে চাকরিতে থেকে যেতাম। চাকরিটা অত খারাপ নয়। আপনি অফিসে গিয়ে বসেন, আপনাকে একটু যন্ত্রণা সইতে হয়, তারপর সন্ধ্যায় আপনি বাইরে কোথাও যান সময় কাটাতে।’
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement