‘সম্রাট শাহজাহানের’ ঘুরন্ত বাড়ি
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৩ অক্টোবর ২০২১, ১৬:০৮, আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২১, ১৬:১৪
স্ত্রী মমতাজ মহলের জন্য তাজমহল গড়েছিলেন সম্রাট শাহজাহান। বসনিয়ার ৭২ বছর বয়সি স্ত্রী-প্রেমী এক স্বামী গড়েছেন এমন এক বাড়ি যার জানালায় বসে তার স্ত্রী পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ দেখতে পারেন ঘাড় একটুও না ঘুরিয়ে।
ছয় বছরে অদ্ভুত এক বাড়ি
এই বাড়ির মালিকের নাম ভোয়িন কুসিচ। বয়স ৭২। অভিনব এই বাড়ি তৈরি করতে ছয় বছর লেগেছে তার। মাঝে কিছুদিন হাসপাতালে ছিলেন। হার্ট অ্যাটাকের কারণে হাসপাতালে গেলেও মাথা থেকে বাড়ির কাজ শেষ করার চিন্তাটা সরছিল না। ডাক্তারকে তাই বলেছিলেন, ‘আমাকে অন্তত একটা বছর বাঁচিয়ে রাখুন। কারণ, মাথায় এমন একটা কাজের চিন্তা ঘুরছে, যা কিভাবে শেষ করতে হবে আমি ছাড়া কেউ জানে না।’
স্ত্রীর আব্দার রাখতে
বসনিয়ার স্রবাচ শহরের এই বাড়িটির যেকোনো দিকের যেকোনো জানালার সামনে দাঁড়ালে বা বসলে চারিদিক দেখা যায়। কুসিচের স্ত্রী একসময় বলতেন শোবার ঘরটা অন্যদিকে নিতে, যাতে বাড়ির পেছনের ফসলের ক্ষেতটা শুয়ে শুয়ে দেখে চোখ জুড়ানো যায়। আবার কখনো তার মন চাইতো বসার ঘরটা সামনের দিকে নিলে রাস্তার লোক চলাচল দেখতে কষ্ট করতে হতো না। তাই একদিন কুসিচ বলে ফেলেছিলেন, ‘তোমাকে আমি ঘুরন্ত বাড়ি বানিয়ে দেবো।’
যেভাবে সম্ভব হলো
কুসিচের বাড়িটার নিচে রয়েছে ইলেকট্রিক মোটর আর সেনাবাহিনীর গাড়ির চাকা যার সহায়তায় বাড়িটি বনবন করে ঘুরতে পারে। কুসিচ জানালেন, এমন একটি বাড়ি তৈরির প্রেরণা তিনি পেয়েছিলেন সার্বিয়ান-আমেরিকান উদ্ভাবক নিকোলা টেসলা আর মিহাইলো পাপিনের কাছ থেকে। তার মনে হয়েছিল টেসলা আর পাপিন যদি সাধারণ ঘরে জন্ম নিয়ে এত বড় বড় কাজ করতে পারেন, তাহলে তিনি একটা ঘুরন্ত বাড়ি বানাতে পারবেন না কেন?
২২ সেকেন্ডে একবার ঘোরে এই বাড়ি
বাড়িতে বসে এখন যে শুধু চারদিকের মনোরম দৃশ্য দেখা যায় তা-ই নয়, চাইলে অনেকটা নাগরদোলার মতো ঘোরাও সম্ভব। কারণ, সবচেয়ে দ্রুত গতিতে ঘুরলে মাত্র ২২ সেকেন্ডে এক পাক ঘুরতে পারে এই বাড়ি। আর সবচেয়ে মন্থর গতিতে ঘুরলে এক পাক ঘুরতে সময় লাগে ২৪ ঘণ্টা।
লাজুক স্ত্রীর নিরহঙ্কার স্বামী কুসিচ
এমন বাড়িতে বাস করার অনুভূতি সবার কাছে বলতে লজ্জা পান কুসিচের স্ত্রী। তাই গণমাধ্যমের সাথে এখনো কথা বলেননি তিনি। বাড়ি নিয়ে কুসিচও বেশি কিছু বলতে চান না। তার উদ্ভাবনী শক্তির প্রশংসা করলে অবশ্য সাথেসাথেই বলে ওঠেন, ‘এটা বিশেষ কোনো উদ্ভাবন নয়, এটা করতে দরকার শুধু ইচ্ছাশক্তি আর জ্ঞান। আমার যথেষ্ট সময় আর জ্ঞান ছিল।’
সূত্র : ডয়চে ভেলে