২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দুর্দিনে স্পেনের স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশে পাকিস্তানিরা

স্পেনের বার্সেলোনায় পাকিস্তানি ট্যাক্সিচালক সিরাজ সাঈদ - সংগৃহীত

পাকিস্তানি যুবক সিরাজ সাঈদ। তিনি পেশায় একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার। তিনি স্পেনের বার্সেলোনা শহরে তার পরিবারের সাথে বসবাস করেন। একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার হওয়া সত্ত্বেও প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের এই মহামারিতে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। সংক্রমণের ভয় থাকলেও নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী তার মতো আরো ১৯৪ জন পাকিস্তানি ট্যাক্সি চালক স্পেনের স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে সমগ্র স্পেনে লকডাউন ঘোষণা হয়। তারপর থেকে প্রথমে শাহবাজ আহমেদ নামে এক পাকিস্তানি ট্যাক্সি ড্রাইভারের উদ্যোগে অন্যান্য পাকিস্তানি ট্যাক্সি চালকরা বিভিন্ন হাসপাতাল ও হেলথ কমপ্লেক্সে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের দিনে বা রাতের যেকোনো সময়ে ফ্রিতে অর্থ্যাৎ বিনা ভাড়ায় বাড়ি পৌছে দিয়ে আসেন। এভাবেই আরো অনেক পাকিস্তানি ড্রাইভার স্পেনবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছেন এই দুর্দিনে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে- এভাবেই লকডাউন চলাকালীন সময়ে মোট ১৯৫ জন পাকিস্তানি ট্যাক্সি ড্রাইভার স্বেচ্ছায় স্পেনের স্বাস্থ্যকর্মীদের সেবা করে যাচ্ছেন। তারা বিভিন্ন হাসপাতাল ও সংস্থার থেকে শহরের বিভিন্ন স্থানে যাত্রী পৌঁছে দেয়ার জন্য সময় ও তালিকা তৈরি করেছে। স্পেনের সান রুতি হাসপাতালের মতো আরো অনেক হাসপাতাল থেকে তারা স্বাস্থকর্মীদের নিয়ে বাড়িতে পৌছে দেন বা বাড়ি থেকে কর্মস্থলে নিয়ে আসেন।

স্পেনের একজন পাকিস্তানি ট্যাক্সি চালক আসিম গোন্ডাল বলেন, করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করায় স্পেনের স্বাস্থ্যকর্মীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করতে হয়। তারা বাড়ি ফেরার জন্য সাধারণত পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে থাকেন। তাই আমরা মানবতার জন্য তাদের পাশে দাড়িয়েছি। এতে করে পরিবহণের পেছনে তাদের সময় নষ্ট হবে না।

আসিম গোন্ডাল স্পেনে তার পরিবারের সাথে ২০ বছর ধরে বসবাস করছেন। তাই স্পেন এখন তার কাছে নিজ বাড়ির মতো। গোন্ডাল বলেন, আমরা যতদিন পারবো, এই সেবা দিয়ে যাবো।

স্পেনের আরো একজন পাকিস্তানি ট্যাক্সি চালক সিরাজ সাঈদ বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ মহামারী আকার ধারণ করার পর আমরা স্বাস্থ্যকর্মীদের ফ্রি ট্রাক্সি সেবা দেয়া শুরু করি। তবে আমাদের সব সময়ই ভাইরাসে আক্রান্তের ভয় থাকে। কখনো তারা (স্বাস্থ্যকর্মীরা) আমাদের বাড়িতেও খাওয়া-দাওয়া করেছেন।

সাঈদ বলেন, আমরা এই কাজের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরণের অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নিই না। সারাদিন স্বাস্থ্যকর্মীদের সেবা দিয়ে ট্যাক্সি নিয়ে যখন বাড়ি ফিরে যান, তখন তিনি তার স্ত্রী বা তিন সন্তানের কাউকে জড়িয়ে ধরতে পারেন না। কারণ করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করেছে, এবং তিনি বাইরে থেকে আসছেন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বার্সেলোনার মেট্রোপলিটনে ট্রাফিক আইন অনুযায়ী ২০ শতাংশ ড্রাইভার প্রতিদিন গাড়ি চালাতে পারবে। প্রত্যেক ড্রাইভারের মাসে একটি সপ্তাহ কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

স্পেনের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, স্পেনের বার্সেলোনায় প্রায় ৪৩ হাজার পাকিস্তানি বাস করছে। আর সারা স্পেনে রয়েছে ৮৯ হাজার পাকিস্তানি।

উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত স্পেনে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আর দেশটিতে মোট আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এক লাখ ৫২ হাজার। সূত্র : আল জাজিরা


আরো সংবাদ



premium cement

সকল