১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


পুনরায় দেশ সেবার সুযোগ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচার শুরু

- ছবি : সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পুনরায় দেশ সেবার সুযোগ এবং উন্নয়নের ধারবাহিকতা রক্ষায় নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বানের মাধ্যমে আজ তার নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। এখানে শেখ লুৎফর রহমান ডিগ্রী কলেজ মাঠে আয়োজিত বিশাল জনসভায় শেখ হাসিনা আসন্ন নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধী, জাতির পিতার খুনী এবং অগ্নি সন্ত্রাসকারীদের নির্বাচনী জোটের বিরুদ্ধে নৌকাকে বিজয়ী করে তাদের উপযুক্ত জবাব দেওয়ার জন্যও দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান।

তিনি দেশবাসীর সাহায্য ও দোয়া কামনা করে বলেন, ‘আমি নৌকা মার্কায় যাকেই, যেখানে প্রার্থী করেছি তাদের সবাইকে ভোট দেবার জন্য আমি দেশবাসীর কাছে আহবান জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আজকে যারা ঐ মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, যাদের সাজা হয়েছে তাদের দোসরকে নির্বাচনে প্রার্থী করেছে। তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী-স্বাধীনতার শত্রু, গণহত্যা পরিচালনাকারী, অগ্নি সন্ত্রাসকারী-তাদেরকে নিয়ে আজকে নির্বাচনের মাঠে নেমেছে তাদেরকে উপযুক্ত জবাব আপনাদের দিতে হবে, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে।’

শেখ হাসিনা বলেন, তাই কোটালিপাড়াবাসীর মাধ্যমে সমগ্র দেশবাসীকে আমি আহবান জানাবো- ‘আমরা যেখানে ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করবো সেই সময় যেন ঐ যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী, খুনী, রাজাকার এবং যারা অগ্নিসন্ত্রাসকারী তারা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে। তাহলে তারা দেশকে ধ্বংস করে দেবে। মুক্তযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে দেবে।’

তিনি আশংকা ব্যক্ত করে বলেন, ‘বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় এলে আবার এদেশ ক্ষুধার্ত হবে, অশিক্ষিত হবে, মানুষের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটবে।’

‘মানুষের ভাগ্য নিয়ে যেন আর তারা ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেইজন্য নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জনগণের সেবাকরার সুযোগ দেয়ার জন্য আমি আহবান জানাচ্ছি,’ যোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু এটা আমার প্রথম নির্বাচনী সভা, তাই, এই সভা থেকেই আমি সমগ্র দেশবাসীর কাছে আবেদন জানাই- ‘নৌকা মার্কায় ভোট চাই। জনগণের সেবা করতে চাই। বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, জাতির পিতার স্বপ্ন আমি পূরণ করতে চাই।’

কোটালীপাড়ায় অনুষ্ঠিত শেখ হাসিনার প্রথম নির্বাচনী বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানাও তার সঙ্গে ছিলেন।

কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুভাষ জয়ধরের সভাপতিত্বে সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম উদ্দীন আহমেদ, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং বিএম মোজাম্মেল হক, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, এসএম কামাল হোসেন অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন।

এছাড়াও চলচ্চিত্রাভিনেতা রিয়াজ এবং ফেরদৌস এবং আওয়ামী লীগের স্থানীয় প্রার্থীগণ বক্তৃতা করেন।

এরআগে প্রধানমন্ত্রী আজ দুপুরে টুঙ্গীপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে তার এবং দলের নির্বাচনী প্রচারভিযান আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেন।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে আগামী নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে বলেন, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। জাতির পিতার খুনীদের বিচার করেছি। বাংলাদেশ আজকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাচ্ছে, মুক্তযুদ্ধের সেই চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই যে বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয় তা আজকে আবার প্রমাণ হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘নৌকায় ভোট দিয়ে আপনারা স্বাধীনতা পেয়েছেন, বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছেন, ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ আজকে বাস্তব, আজকে বাংলাদেশ কাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, আজকে বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, এই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা কেউ যেন বন্ধ করতে না পারে, এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে। বিশ্বসভায় বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে চলতে পারে সেই সুযোগ আমি দেশবাসীর কাছে চাই।

আর কোটালীপাড়ায় যারা আমার মা-বোনরা আছেন, তাদের কাছে ভোট চাই- তাদেরকে আমি বলবো আপনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যে কাজ আমি করে গিয়েছি- আজকে শিক্ষা-দীক্ষা, কর্মসংস্থান- সবদিক থেকে আপনারা সুযোগ পেয়েছেন কারণ নৌকায় ভোট দিয়ে কেউ কখনও বঞ্চিত হয় না, নৌকায় ভোট দিলে সকলেই সুন্দর জীবন পায়, উন্নত জীবন পায়। আমার এই কথাটা আপনারা সকলের কাছে পৌঁছে দেবেন, বলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

প্রধানমন্ত্রী দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য চিত্র তুলে ধরে বলেন, তার সরকারের প্রতিটি কাজই জনকল্যাণের জন্য নিবেদিত। আর একটি শিক্ষিত জাতি পারে একটি দেশকে দারিদ্রমুক্ত করতে, সেইজন্য শিক্ষাকে তার সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। সেইসঙ্গে সরকার দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার নিমিত্তে কারিগরি শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেছে।

তিনি বলেন, তার সরকার চায় বাংলাদেশে আর কেউ গরিব থাকবে না, বাংলাদেশ আর কখনও হাত পেতে চলবে না, যে কারণে তার সরকার নিজস্ব অর্থায়ণে প্রণীত বাজেট ৭ গুণ বৃদ্ধি করে দিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে আজ ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমরা সরকারে। আজকে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। যে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিয়েছিলাম, খালেদা জিয়া সেটা বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা আবার তা চালু করেছি। আজকে মানুষ বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে, ঔষধ পাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘দেশকে আমি নিরক্ষরতামুক্ত করতে চেয়েছিলাম। সেই প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছিল বিএনপি। আমরা সরকারে এসে আজ তা বাস্তবায়ন করেছি। বাংলাদেশে নিরক্ষরতা দূর করবার পথে আজ আমরা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি।’

বিদ্যুতের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে।

তার সরকারের লক্ষ্যসমূহ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি দেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবেন। প্রতিটি গ্রামের মানুষ শহরের সুযোগ-সুবিধা পাবে, অর্থাৎ আমার গ্রাম আমার শহর হিসেবে গড়ে উঠবে।’ সেজন্য তার সরকার প্রতিটি স্থানে স্কুল, কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, কারিগরি শিক্ষার সুবিধা, রাস্তা-ঘাট, পুল, ব্রীজ নির্মাণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধা এবং অবকাঠামো উন্নয়ন করে দিচ্ছে।

জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করেই তার রাজনীতি এবং ব্যক্তি জীবনে তার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন এবং তাদেরকে উন্নত জীবন দেওয়াই তার রাজনীতির লক্ষ্য।

এ সময় বিএনপি-জামাতের নির্বাচন বানচালের জন্য ২০১৪ এবং ১৫ সালের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, সন্ত্রাস এবং নৈরাজ্যের তীব্র সমালোচনা করে শেখ হাসিনা প্রশ্ন তোলেন এটা কি ধরনের রাজনীতি।

প্রধানমন্ত্রী আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে বলেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন, আমি জাতির পিতার মাজার জিয়ারত করে প্রথম নির্বাচনী সভা আজকে এই কোটালীপাড়ার মাটি থেকেই শুরু করলাম। কারণ আপনারাই আমাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট আমার মা-বাবাসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

এমনকি তাদের বিচার যাতে না হয় সেজন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশও জারি করা হয়। খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়া হয়। ‘১৯৮১ সালে দেশে ফিরে থানায় গিয়ে মামলা পর্যন্ত করতে পারিনি। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে, পরে ওই ইনডেমনিটি আদেশ বাতিল করে জাতির পিতার খুনিদের বিচার করা হয়। আমরা যুদ্ধাপরাধের বিচার করেছি এবং করছি। অনেকের বিচারের রায়ও কার্যকর হয়েছে’।

দেশবাপী ৩শ’ আসনের প্রতিই তার খেয়াল রাখতে হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হয় যে কারণে অন্য প্রার্থীদের মত নিজের নির্বাচনী এলাকায় তিনি সময় দিতে পারেন না। তাই টুঙ্গীপাড়া এবং কোটালীপাড়ার জনগণ তার এই নির্বাচনী এলাকার দায়িত্ব গ্রহণ করায় তিনি এ সময় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আজ আমি পিতা-মাতা, ভাইহারা, আপনারা দায়িত্ব নিয়েছেন এবং প্রতিবার নির্বাচনে সে দায়িত্ব আপনারাই পালন করেন। আপনারাই ভোট দেন এবং আপনাদের ভোটেই নির্বাচিত হয়ে দেশের সেবা করার সুযোগ পাই। এখনও আমি আপনাদের কাছে সেই দায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছি যে, আমার আপনজন বলতে ঐ একটা ছোট বোন (শেখ রেহানা) আছে আর আছেন আপনারা। আপনারাই আমার আপনজন হয়ে এই কোটালীপাড়া-টুঙ্গীপাড়ায় গ্রামে গ্রামে মানুষের কাছে গিয়ে আমাকে নৌকা মার্কায় ভোট প্রদানের জন্য বলবেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি নৌকা মার্কায় ভোট চাই, কাজেই সেই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে আর একটিবার দেশসেবার সুযোগ করে দেবেন।

তিনি বিদায় বেলায় কবির ভাষায় উচ্চারণ করেন ‘নিঃস্ব আমি, রিক্ত আমি, দেবার কিছু নাই, আছে কেবল ভালবাসা দিয়ে গেলাম তাই।’


আরো সংবাদ



premium cement
শিগগিরই মাগুরায় রেললাইন চালু হবে : রেলমন্ত্রী সংসদ ভবনের সামনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২ গ্রুপের সংঘর্ষে ছাত্রলীগকর্মী নিহত জুজুৎসুর সম্পাদকের যৌন নিপীড়নের তথ্য দিলো র্যা ব পানচাষীদের পরিশ্রমের ফসল জিআই স্বীকৃতি : প্রতিমন্ত্রী বগুড়ায় অবৈধ মজুদকৃত ১ লাখ ডিম উদ্ধার তথ্যের জন্য সাংবাদিকরা শতবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যেতে পারেন : ডেপুটি গভর্নর ইসরাইলি হামলায় ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত আফগানিস্তানে গুলিতে ৩ স্প্যানিশ ও ৩ আফগান নিহত বিভিন্ন অপরাধে সাতজনের ফাঁসি কার্যকর করল ইরান কিরগিস্তানে আতঙ্কে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা ‘প্রাচীন হিব্রুদের সাথে ইসরাইলি ইহুদিদের জেনেটিক সংযোগ নেই’

সকল