৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বিপুল ইভিএম এখন অকেজো

এর জন্য কাউকে জবাব দিতে হচ্ছে না

-

বাংলাদেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা ও জবাবদিহিতা ক্রমে ক্ষয়িষ্ণু। কিছু প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তা একেবারে শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। এসব প্রতিষ্ঠান জাতির উপকার করার পরিবর্তে ঘাড়ের ওপর বসে আছে বোঝা হয়ে। প্রতিনিয়ত তারা লোকসান বাড়াচ্ছে জনগণের। এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন। বিগত পনেরো বছরে এটি দেশের গণতন্ত্রের জন্য কোনো অবদান রাখতে পারেনি। এটি বরং গণতন্ত্র চর্চাকে চরমভাবে সঙ্কুুচিত করেছে। ভোটব্যবস্থাকে একেবারে বিতর্কিত করেছে। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এই প্রতিষ্ঠান নিজেই রাবার স্ট্যাম্প হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে সরকারকে। শুধু গণতন্ত্র ক্ষতি নয় এটি জনগণের অর্থের বিপুল অপচয় করেও চলেছে। বড় অর্থ খরচ করে প্রকল্প নিতে এই প্রতিষ্ঠানটি খুব উৎসাহী। সেটা জনগণের কোনো কাজে আসবে কিনা তা নিয়ে এই নির্বাচন কমিশনের কোনো ভাবনা চিন্তা দেখা যায় না।
২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে নেয়া হয় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম কেনার প্রকল্প। ইভিএম নিয়ে বিতর্ক চলছিল ২০১০ সাল থেকে। রাজনৈতিক দলগুলোর বেশির ভাগ এর ব্যবহারের বিরুদ্ধে ছিল। এমনকি ২০১৮ সালে ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে এর ব্যবহারের বিরোধিতা করে সরকারি দল এবং তাদের সমর্থক হাতেগোনা কয়েকটি দল ছাড়া। এ ছাড়া ইভিএমে ভোটারের ভীতি, আঙুলের ছাপ না মেলা ও কারিগরি নানা ত্রুটির বিষয়টি মোটেও মাথায় নেয়া হয়নি। গণদাবির বিপক্ষে গিয়ে বিপুল ইভিএম কেনার একতরফা সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। যদিও ওই সময়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ভোটের জন্য সমতল মাঠ। বিরোধীরা নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার জন্য কোনো ধরনের সুযোগ পাচ্ছিল না। প্রার্থী ও তাদের নেতাকর্মীরা সরকারি দলের সন্ত্রাসের মুখে একেবারে কোণঠাসা হয়ে যায়। তার ওপর ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পীড়ন এবং আদালতে বিচার না পাওয়ার নজিরবিহীন ঘটনা। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাদের কাছে আইনি সুরক্ষা পাওয়ার হাতিয়ার ছিল। চতুর্মুখী আক্রমণের মধ্যে থাকা বিরোধীদের বাঁচাতে তারা কোনো চেষ্টাই করেনি। কিন্তু এক লাখ ৫০ হাজার ইভিএম কিনতে উৎসাহের সাথে অগ্রসর হয়। প্রতিটির দাম পড়েছিল দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকা। ভারতের চেয়ে ১১ গুণ বেশি দামে কেনা হয়। তিন হাজার ৮২৫ কোটি টাকার ওই বৃহৎ প্রকল্পকে তখনই ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহার নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে উপযুক্ত পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি ছিল না। সরকারি ক্রয়ে প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটায় উচ্চ ব্যয়ের একটি সাধারণ প্রবণতা আমরা দেখতে পাই। দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট কারসাজির মাধ্যমে প্রকল্প প্রণয়ন করার ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে। দেখা গেল ২০১৮ সালের ওই ‘নিশি নির্বাচনে’ মাত্র ছয়টি আসনে এর ব্যবহার হয়। এমনকি স্থানীয় সরকারের নির্বাচনেও এর ব্যবহার সেভাবে দেখা যায়নি। তাহলে এই বিপুল অর্থ বরাদ্দ দিয়ে ইভিএম কেনাকাটা দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের কাজ কিনা তা নিয়ে কোনো তদন্ত হয়নি। তবে পাঁচ বছরের মাথায় খবর প্রকাশ হয়েছে এক লাখ ইভিএম ইতোমধ্যে অকেজো হয়ে গেছে। এগুলো ১০ বছরের ওয়ারেন্টি থাকলেও তা কোনো কাজে আসছে না। বরং এখন শুরু হয়েছে নতুন ফন্দিফিকির এগুলো মেরামত নিয়ে।
নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বহীনতার উদাহরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না। সেগুলো নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে এর সুযোগ দেখা যায় না। তবে ইভিএম কেনাকাটা নিয়ে অন্তত তদন্ত হওয়ার দরকার। কার স্বার্থে এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কমিশন। এই বিপুল অর্থের অপচয়ের পেছনে যারা রয়েছে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার প্রয়োজন রয়েছে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement